আদালতে সমস্ত নথি পাঠিয়েছিল পুলিশ। ভিডিও ফুটেজও জোগাড় করে পাঠানো হয়েছিল। যে মোবাইল ফোন থেকে বোমা মেরে থানা উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছিল, সেটিও বাজেয়াপ্ত করে পাঠানো হয়।
কিন্তু জামিনের বিরোধিতা করা দূরে থাক, মামলার সরকারি কৌঁসুলি শুক্রবার আদৌ এজলাসে হাজির না হওয়ায় তিন দিনের মাথায় জামিনে ছাড়া পেয়ে গেলেন রানিগঞ্জের সদ্য বহিষ্কৃত টিএমসিপি নেতা সৌমিত্র বন্দ্যোপাধ্যায়। আসানসোল আদালতের বিচারক অর্ধেন্দু সেন সরকারি আইনজীবীর খোঁজ করেও দেখা না পেয়ে জামিন মঞ্জুর করেন।
বিরোধীদের অভিযোগ, দলের মুখ বাঁচাতে সৌমিত্রকে ‘বহিষ্কার’ করা হলেও আসলে তাঁর পাশেই রয়েছে তৃণমূল। শাসক দলের চাপেই সরকারি আইনজীবী এজলাসের পথ মাড়াননি। আসানসোল আদালতের বিশিষ্ট আইনজীবী অমিতাভ মুখোপাধ্যায়ও বলেন, ‘‘শাসক দলের ঘনিষ্ঠ যাতে ছাড়া পেয়ে যায়, তার জন্যই সম্ভবত সরকারি আইনজীবীকে চাপ দিয়ে উপস্থিত হতে দেওয়া হয়নি।’’
সরকারি কৌঁসুলি সুস্মিতা সেন চক্রবর্তী অবশ্য দাবি করেন, ‘‘আমি অন্য একটা সরকারি কাজে মহকুমাশাসকের দফতরে ছিলাম। তাই যেতে পারিনি।’’ সেই কাজ কি এতই গুরুত্বপূর্ণ যে এ রকম একটা মামলায় জামিনের বিরোধিতা করতে আসতে পারলেন না? সুস্মিতাদেবীর জবাব, ‘‘এ দিন জামিনের বিরোধিতা করার মতো আর কিছু ছিল না।’’
অথচ পুলিশের এক পদস্থ কর্তা দাবি করেছেন, অভিযুক্ত যেন জামিন না পায় তার জন্য তাঁরা সমস্ত নথি, ভিডিও ফুটেজ, মোবাইল আদালতে পাঠিয়েছিলেন। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘সরকারি আইনজীবীই যে হাজির হবেন না, তা জানা ছিল না।’’ গত মঙ্গলবার টিডিবি কলেজে অধ্যক্ষের কাছে ছাত্রভর্তির সময়সীমা বাড়ানোর দাবি জানিয়ে বেরিয়ে পুলিশের গাড়ি দেখেই অগ্নিশর্মা হয়ে উঠেছিলেন টিএমসিপি-র রানিগঞ্জ ব্লক সভাপতি সৌমিত্র। রানিগঞ্জ থানার ওসিকে ফোন করে পুলিশের জিপ পোড়ানোর ও থানায় বোমা মারার হুমকিও দেন বলে অভিযোগ। পাঁচটি ধারায় (একটি জামিন-অযোগ্য) মামলা দিয়ে রাতে তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
সরকারি কৌঁসুলির বিরুদ্ধে পুলিশ কি কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ জানাবে? আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তা জানান, এ ক্ষেত্রে বর্ধমানের জেলাশাসক বা আসানসোল মহকুমাশাসকের কাছে নথি পাঠিয়ে জানানো যেতে পারে যে সরকারি কৌঁসুলি আইনের মধ্যে থেকে নিজের কর্তব্য করেননি। তবে ডিসিপি (সদর) অরিন্দম দত্তচৌধুরী এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
মামলা থাকা সত্ত্বেও কি কোনও সরকারি কৌঁসুলি এজলাসে গরহাজির থাকতে থাকতে পারেন? আসানসোল আদালতের প্রধান সরকারি আইনজীবী স্বরাজ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এজলাসের নির্দিষ্ট সরকারি আইনজীবী উপস্থিত থাকতে না পারলে তাঁর বদলে অন্য কারও হাজির থাকাই নিয়ম।’’ তিনি জানান, এ ক্ষেত্রে কী করণীয় মহকুমাশাসকই তা বলতে পারবেন। আসানসোলের মহকুমাশাসক অমিতাভ দাস অবশ্য দাবি করেন, ‘‘আমি এই বিষয়ে কিছুই জানি না। খোঁজ নিতে হবে।’’
বিরোধীদের অভিযোগ, তৃণমূলের চাপেই পুলিশকর্তা থেকে প্রশাসনের মাথা কেউ মুখ খুলতে পারছেন না। বংশগোপাল চৌধুরীর দাবি, ‘‘এটা তৈরি ছক। অভিযুক্ত ছাড়া পেয়েই অধ্যক্ষকে পেটাবে, পুলিশ পেটাবে।’’ বিজেপির আসানসোল জেলা সম্পাদক প্রশান্ত চক্রবর্তীর মতে, ‘‘সব লোক দেখানো। দলের আশ্রিত এক সমাজবিরোধীকে ছাড়াতেই এই কৌশল।’’ তৃণমূলের আসানসোল জেলা সভাপতি ভি শিবদাসন দাবি করেন, ‘‘এ সবই অপপ্রচার। আইন তার নিজের পথেই চলছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy