Advertisement
E-Paper

মমতার সভায় একশোয় একশো পেতে মরিয়া নেতারা

একশো ঘণ্টা প্রচার। একশো লোকশিল্পীর নাচগান। একশো প্রকল্পের উদ্বোধন। একশো জনকে কৃষি ষন্ত্রপাতি। মুখ্যমন্ত্রী হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে জেলায়-জেলায় গিয়ে প্রশাসনিক সভা শুরু করেছিলেন, আগামী ১৫ জুলাই তার সেঞ্চুরি হতে চলেছে যে!

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৫ ০৩:২৮

একশো ঘণ্টা প্রচার।
একশো লোকশিল্পীর নাচগান।
একশো প্রকল্পের উদ্বোধন।
একশো জনকে কৃষি ষন্ত্রপাতি।

মুখ্যমন্ত্রী হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে জেলায়-জেলায় গিয়ে প্রশাসনিক সভা শুরু করেছিলেন, আগামী ১৫ জুলাই তার সেঞ্চুরি হতে চলেছে যে!
যদিও বিরোধীদের টিপ্পনী, একুশে জুলাই তৃণমূলের শহিদ দিবসের ঠিক আগে একুশে আইনের সেঞ্চুরি হচ্ছে। তলে-তলে পাকানো হচ্ছে আগামী বছর বিধানসভা ভোটের সুতো। আর তার জন্য প্রশাসনকে কার্যত দলদাসে পরিণত করা হচ্ছে।
সে নিন্দুকেরা যা-ই বলুক, সভা সফল করতে কোমর বেঁধে নেমেছে শাসক দল। আজ, বৃহস্পতিবার থেকে টানা সাড়ে চার দিন (ওঁরা সেটাকেই বলছেন ‘একশো ঘণ্টা’) পদযাত্রা করে প্রচার চালাবেন তৃণমূল নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা। জেলা প্রশাসনের অফিসারেরা আদিবাসী গ্রামে রাত জেগে বৈঠক করবেন।

নির্দিষ্ট দিনে বর্ধমান পুলিশ লাইনের মাঠে বিশাল প্রকাশ্য সভার আয়োজন হয়েছে। তার জন্য প্রত্যেক বিডিও-কে এক হাজার জন করে লোক পাঠাতে বলা হয়েছে। ওই সভার আগে বর্ধমান শহরের সংস্কৃতি লোকমঞ্চে রাজ্যের সমস্ত মন্ত্রী, সচিব, বিধায়ক, প্রতিটি জেলার প্রশাসনিক অফিসার, জেলা পরিষদ-পঞ্চায়েত সমিতির প্রতিনিধি মিলিয়ে ১২০০ জনকে নিয়ে বৈঠক হবে। ইতিমধ্যে যাকে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যাও দিয়ে ফেলেছেন তৃণমূলের নেতারা।

শততম সভায় মুখ্যমন্ত্রী যাতে ১০০টি প্রকল্পের উদ্বোধন করতে পারেন, তার জন্যও জোরদার চেষ্টা চলছে। কিন্তু মঙ্গলবার প্রস্তুতি বৈঠকে (বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রের সাংসদ, অতিরিক্ত জেলাশাসক, কয়েক জন মহকুমাশাসক ও বেশ কিছু সরকারি আধিকারিকেরা তাতে হাজির ছিলেন) বিভিন্ন আধিকারিকেরা যে তালিকা দেন, তাতে দেখা যায় মোটে ২৩টি প্রকল্প হাতে মজুত। প্রশাসন সূত্রের দাবি, তখনই মহকুমাশাসকদের বলে দেওয়া হয়, উদ্বোধন হয়নি এমন আরও প্রকল্পের তালিকা করতে হবে। একশো চাই-ই চাই! বুধবার জেলা সভাধিপতি দেবু টুডু বলেই দিয়েছেন, ‘‘ওই দিন মুখ্যমন্ত্রী একশো প্রকল্পেরই উদ্বোধন করবেন। বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

গোটা পরিকল্পনাটা ঠিক কী রকম?

জেলা পরিষদ সুত্রে জানা গিয়েছে, আজ থেকে চার দিনের যে প্রচার শুরু হচ্ছে তাতে জেলা সভাধিপতি ছাড়াও থাকবেন ৫০ জন জনপ্রতিনিধি। একশো লোকশিল্পীকে নিয়ে গড়া হয়েছে বিশেষ দল। জেলার ৩১টি ব্লকে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কন্যাশ্রী বা একশো দিনের প্রকল্পের মতো সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ নিয়ে প্রচার চালানো হবে। যে পথে পদযাত্রা যাবে সেই এলাকার লোকজনও অনেকে হাঁটবেন। পরে কোনও আদিবাসী অধ্যুষিত প্রত্যন্ত গ্রামে প্রশাসনের ‘রাত-বৈঠক’ হবে। জেলা সভাধিপতি ছাড়াও অতিরিক্ত জেলাশাসক, বিডিও এবং বেশ কিছু দফতরের আধিকারিকেরা থাকবেন। চার দিনে কালনা ২, আউশগ্রাম ২, জামুড়িয়া এবং সালানপুরের গ্রামে বৈঠক হবে। ১৩ জুলাই দুপুরে প্রচার শেষ। মঞ্চ থেকে যে একশো জনকে মুখ্যমন্ত্রী কৃষি যন্ত্রপাতি দেবেন, তার তালিকাও তৈরি হয়ে গিয়েছে।


মুখ্যমন্ত্রীর শততম সভার আগে পুলিশ লাইনের মাঠ পরিদর্শনে
ব্যস্ত জেলা সভাধিপতি দেবু টুডু। —নিজস্ব চিত্র।

যদিও অফিসারদের অনেকেই গোটা ব্যাপারটায় বিরক্ত। এর আগে বিভিন্ন প্রশাসনিক বৈঠকে যে ভাবে অধস্তনদের সামনেই পদস্থ কর্তাদের ধমকধামক দিয়েছেন মমতা, প্রকাশ্য মঞ্চে তুলে তথ্য ও কৈফিয়ত দাবি করেছেন, অনেকেই তা ভাল ভাবে নিতে পারেননি। এ বার একুশে জুলাইয়ের ঠিক আগে ‘ঐতিহাসিক’ সভা সফল করতে তাঁদের যে ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, তা-ও অনেকের মনঃপুত নয়। রাতারাতি আনকোরা একশো প্রকল্প কোথায় পাওয়া যাবে, তা অনেকেই বুঝে উঠতে পারছেন না। কী উপায়ে, কার খরচায় বাসে করে হাজার লোক পাঠানো যাবে, তা নিয়েও বিডিও-রা বিভ্রান্ত।

ইতিমধ্যে বর্ধমানের নানা এলাকায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মেটাতে থানাকে মধ্যস্থতা করার নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন। সেই মধ্যস্থতার পরেই বোমা উদ্ধার করতে গিয়ে তৃণমূলের লোকজনের হাতে মার খেয়েছেন রায়না থানার ওসি। কিন্তু পুলিশ-প্রশাসনের কেউ টুঁ শব্দ করতে নারাজ। শীর্ষ স্তরের এক অফিসার শুধু ব্যাজার মুখে বলেন, ‘‘পড়েছি যবনের হাতে, খানা খেতে হবে সাথে— কথাটা জানেন তো!’’

সিপিএমের বর্ষীয়ান নেতা অমল হালদারের কটাক্ষ, ‘‘তৃণমূলের কোন্দল মেটাচ্ছে পুলিশ। সভার লোক জোগাড় করছে প্রশাসন। কী আর করা যাবে? একুশে আইন চলছে!’’

tmc leaders desperate cent percent 21st july ekushe ain
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy