প্রতীকী ছবি।
বড় কারখানা থেকে অটো-টোটোর ইউনিয়ন। রাজ্যের যে কোনও ক্ষেত্রেই গত ৬ বছরে দাপট বেড়েছে তৃণমূলের। ক্ষয়িষ্ণু হয়েছে বামেদের ইউনিয়ন। তৃণমূলের এমন একচ্ছত্র আধিপত্যের মধ্যেও রেল, ব্যাঙ্ক, বিমা, কয়লা, ডাকের মতো কেন্দ্রীয় ক্ষেত্রে এখনও মাথা তুলে দাঁড়িয়ে সিটু বা এআইটিইউসি!
কেন্দ্রীয় ক্ষেত্রে বামেদের সাংগঠনিক প্রতাপ দেখেই এ বার সেখানে জমি পাওয়ার জন্য ঝাঁপিয়েছে তৃণমূলের ট্রেড ইউনিয়ন। কিন্তু তা করতে গিয়েও রাজ্যের শাসক দলের শীর্ষ নেতৃত্ব মেনে নিচ্ছেন, এই ক্ষেত্রে বামেরা এখনও সাইনবোর্ড নয়! বরং, তাদের সাংগঠনিক কাজকর্ম রীতিমতো শিক্ষণীয়। আর এই উদাহরণ সামনে রেখে অন্যত্রও সংগঠনকে চাঙ্গা করার মরিয়া চেষ্টায় নামছেন বামেদের শ্রমিক নেতৃত্ব। আগামী ১৩ থেকে ১৫ মে ব্যারাকপুরে হতে চলেছে সিটুর রাজ্য সম্মেলন। রাজ্য নেতৃত্বে রদবদলের পাশাপাশি সংগঠনে রক্তসঞ্চারই সিটু নেতৃত্বের মূল লক্ষ্য।
তথ্য বলছে, রাজ্যে পরিবর্তনের পর থেকে একের পর এক ইউনিয়ন হাতছাড়া হয়েছে সিটুর। এক শ্রেণির কর্মী, যাঁরা সব সময়েই শাসকের পক্ষে থাকতে চান, তাঁরা রাতারাতি লাল ঝান্ডা নামিয়ে ইউনিয়নের দফতরে তৃণমূলের (আইএনটিটিইউসি) পতাকা তুলে দিয়েছেন! আরও অজস্র ছোটখাটো ইউনিয়নের রং বদলে গিয়েছে স্রোতের পক্ষে থেকে বেঁচে থাকার তাগিদে। যেমন, বাস বা অটো চালকদের ইউনিয়ন শাসক দলের পক্ষে না থাকলে রাস্তায় গাড়ি বার করাই সমস্যা হয়ে যাবে বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। তাঁদের মতে, বাম জমানায় সিটু যে কৌশলে পেশি ফোলাতো, গুরুমারা বিদ্যায় সেই অস্ত্রই আরও নিপুণ ভাবে প্রয়োগ করেছে তৃণমূল!
কেন্দ্রীয় ক্ষেত্রে যে রং বদল ঘটেনি, তার নেপথ্যে এই জীবিকায় টানের আশঙ্কা না থাকাই মূল কারণ বলে মনে করছেন বাম নেতারাই। সিটুর রাজ্য সভাপতি শ্যামল চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘কেন্দ্রীয় ক্ষেত্রে ভয় দেখিয়ে কাজ বন্ধ করে দেওয়া বা চাকরির ক্ষতি করে দেওয়া সহজ নয়। মানুষ দেখছেন, সেখানে লড়াইটা আমরাই করছি। তাই কেন্দ্রীয় ক্ষেত্রে আমরা এখনও এগিয়ে।’’ প্রায় একই মত এআইটিইউসি-র সাধারণ সম্পাদক গুরুদাস দাশগুপ্তের। বর্ষীয়ান এই সিপিআই নেতার বক্তব্য, ‘‘কেন্দ্রীয় ক্ষেত্রে আমাদের সাংগঠনিক শক্তি এখনও যতটা আছে, তাতে জবরদস্তি করতে গেলেও তৃণমূল সুবিধা করতে পারবে না। কেন্দ্রে বিজেপি-র সরকার সঙ্ঘ পরিবারের ইউনিয়নকে বা রাজ্য সরকার তৃণমূলের ইউনিয়নকে কেন্দ্রীয় ক্ষেত্রে ঢোকানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু লড়াইয়ের সামনের সারিতে আমরাই আছি।’’
বামেদের নেতৃত্বেই আগামী জুনে কয়লা ক্ষেত্রে তিন দিনের ধর্মঘট ডাকা হয়েছে মঙ্গলবার। আবার বেঙ্গল কেমিক্যালে এখন কর্মী ইউনিয়ন তৃণমূলের দখলে চলে গেলেও ওই সংস্থা বাঁচানোর জন্য বামেদের লড়াইয়ে সেই সংগঠন নীরবেই নৈতিক সমর্থন দিতে ‘বাধ্য’ হয়েছে।
তৃণমূলের তরফে কেন্দ্রীয় ক্ষেত্রে ইউনিয়নের প্রসারের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা মুকুল রায় বলছেন, ‘‘সিটু এবং বিশেষত সিপিআইয়ের এমন অনেক নেতা-কর্মী আছেন ওখানে, যাঁরা সারা বছর শুধু ইউনিয়নটাই মন দিয়ে করেন। সেখানে আমরা জাতীয় দলের স্বীকৃতি পেয়েছি মাত্র এক বছর।’’ কেন্দ্রীয় ক্ষেত্রে সংগঠন তৈরির প্রাথমিক চেষ্টায় তাঁরা সাড়া পাচ্ছেন বলেই দাবি তৃণমূলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতির।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy