গ্রাফিক শৌভিক দেবনাখ।
দেড় মাস আগে পদ থেকে অপসারিত হয়েছেন জয়া দত্ত। সেই থেকে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি পদ খালি। আগামী ২৮ অগস্ট সংগঠনের প্রতিষ্ঠা দিবস পালিত হবে মেয়ো রোডে। রেকর্ড জমায়েতের ডাক দিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু প্রতিষ্ঠা দিবসের আগে যে সভাপতি পদে কাউকে আনা হচ্ছে না, সে কথাও এখন স্পষ্ট শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাদের কাছে। জমায়েতের আগে সংগঠনের অন্দরে তিক্ততা এড়াতে চাওয়া যে সভাপতি পদ আপাতত খালি রাখার অন্যতম কারণ, তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু হিতে খানিকটা বিপরীতই হয়েছে। নেতৃত্বের শূন্যতায় প্রস্তুতি পর্বেই কোন্দল স্পষ্ট হতে শুরু করেছে।
সভাপতি পদে কেউ না থাকলেও, আঠাশের সমাবেশের প্রস্তুতি অন্যান্য বছর যে ভাবে হয়, এ বারও সে ভাবেই চলছে। জয়া দত্ত সভানেত্রী পদে নেই ঠিকই। কিন্তু প্রস্তুতি পর্বের সমন্বয়ে তিনিই রয়েছেন। কোন জেলায় কবে প্রস্তুতি সভা হবে, রাজ্য নেতৃত্বের প্রতিনিধি হিসেবে সে বৈঠকে কারা যাবেন, কোথায় মিছিল হবে— সবই মোটের উপর জয়াই স্থির করছেন।
জয়ার কথামতো প্রস্তুতি পর্বের সমন্বয় চলছে বটে। কিন্তু জয়ার কর্তৃত্ব অস্বীকার করার চেষ্টাও শুরু হয়ে গিয়েছে পুরোদমে। বিভিন্ন জেলার প্রস্তুতি বৈঠকে, মিটিঙে-মিছিলে তার ছাপ পড়তে শুরু করেছে বলে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ সূত্রেরই খবর।
তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভানেত্রী পদ থেকে জয়া দত্তর অপাসরণের পরে যে সব নাম ভাসতে শুরু করেছিল সংগঠনের সম্ভাব্য নতুন প্রধান হিসেবে, তাঁদেরই কেউ কেউ সংগঠনে প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা শুরু করেছেন বলে খবর। জয়া দত্তও পাল্টা চালে দুর্গ রক্ষা করতে চাইছেন বলে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। পরিস্থিতি এতটাই সংবেদনশীল যে, কেউই বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাইছেন না। তবে রাজ্য কমিটির বেশ কয়েক জন সদস্য এই অভ্যন্তরীণ টানাপড়েন নিয়ে ঘনিষ্ঠ বৃত্তে উদ্বেগ প্রকাশ করতে শুরু করেছেন।
কৃষ্ণনগরে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের মিছিলে এ ভাবেই একসঙ্গে দেখা গিয়েছে গৌতম-লগ্নজিতা-প্রসেনজিৎদের। জয়া দত্তর সঙ্গে তাঁদের দূরত্ব বহাল ছিল মিছিলেও। ছবি: সংগৃহীত
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদিকা লগ্নজিতা চক্রবর্তীর নাম শোনা গিয়েছিল শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের সম্ভাব্য নতুন সভানেত্রী হিসেবে। মণিশংকর মণ্ডল, সার্থক বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রসেনজিৎ মণ্ডল, কৌস্তভ দে, রুমানা আখতার— এমন আরও কয়েকটি নাম সংগঠনের অন্দরে ভাসছিল জয়ার অপসারণের পর থেকে। তবে সভাপতি মনোনয়ন অনির্দিষ্ট কালের জন্য ঝুলে যাওয়ায় সে সব জল্পনায় ইতি পড়ে।
আরও পড়ুন: গোপন ডেরা থেকে সরকারি নথি সামনে এনে এ বার সিআইডি-কে চ্যালেঞ্জ ভারতীর!
জল্পনায় ইতি পড়লেও ঘুঁটি সাজানোয় ইতি পড়েনি। যাঁদের নাম জয়ার পরিবর্ত হিসেবে শোনা গিয়েছিল, তাঁদেরই কাউকে কাউকে ঘিরে সমীকরণ তৈরি হতে শুরু করেছে। লগ্নজিতা এঁদের অন্যতম। দাবি তৃণমূল ছাত্র পরিষদেরই একাংশের। সংগঠনের অন্দরের সমীকরণে জয়ার সঙ্গে সম্পর্ক মধুর নয় যাঁদের, তাঁদের অনেকে লগ্নজিতার পাশে দাঁড়াতে শুরু করেছেন। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের অন্যতম সহ-সভাপতি গৌতম ভট্টাচার্যের নাম সে তালিকায় রয়েছে।
আরও পড়ুন: রাজধর্ম পালন করছে কি রাজ্য? সিএজি-পরীক্ষায় সায় নেই নবান্নের
জয়াও চুপচাপ বসে নেই। সভানেত্রী থাকাকালীন যে সব ‘ভুল’ তিনি করেছিলেন, সে সব তিনি ‘শুধরে’ নেবেন— এ কথা বলে সর্বোচ্চ নেতৃত্বের কাছে দরবার করেছেন জয়া। আর এক বার সুযোগ চেয়েছেন। সর্বোচ্চ নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত জানাননি। কিন্তু সিদ্ধান্ত আসার আগেই যাতে সংগঠনের রাশ হাত থেকে চলে না যায়, তা নিশ্চিত করতে জয়াও নিজের মতো করে ঘুঁটি সাজিয়ে রাখছেন বলে খবর। এর ছাপই পড়তে শুরু করেছে সংগঠনের নানা স্তরে।
সপ্তাহ দুয়েক আগে প্রস্তুতি সভা হয়েছে নদিয়ায়। জয়া দত্ত নিজেই গিয়েছিলেন সে জেলায় সভা করতে। নদিয়া আবার লগ্নজিতা চক্রবর্তীর নিজের জেলা। তাই লগ্নজিতাও সে কর্মসূচিতে ছিলেন। ছিলেন গৌতম ভট্টাচার্যও। নদিয়ার সেই কর্মসূচিতে জয়া দত্ত এবং তাঁর বিরোধীদের দ্বন্দ্ব বেশ প্রকট হয়ে ওঠে।
নদিয়ায় সে দিন জয়ার পৌরোহিত্যে যে প্রস্তুতি বৈঠক হয়েছিল, তাতে জেলার গুরুত্বপূর্ণ ছাত্রনেতাদের কয়েক জনকে দেখা যায়নি বলে খবর। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজ্য স্তরের ছাত্র রাজনীতিতে উঠে আসা এক নেতাও বৈঠকে যোগ দেননি। জয়া দত্তর উপস্থিতি পছন্দ নয় বলেই তিনি বৈঠকে ছিলেন না বলে নদিয়া জেলা টিএমসিপি সূত্রে জানা গিয়েছে।
তবে শুধু রুদ্ধদ্বার বৈঠকে নয়, রাজ্যের শাসক দলের ছাত্র সংগঠন যে আলাদা আলাদা শিবিরে ভাগাভাগি হতে শুরু করেছে, তা সে দিন কৃষ্ণনগরে আয়োজিত মিছিলেও দেখা গিয়েছে। জয়া দত্ত সামনে থেকে মিছিলের নেতৃত্ব দিয়েছেন ঠিকই। কিন্তু লগ্নজিতা চক্রবর্তী, গৌতম ভট্টাচার্য, প্রসেনজিৎ মণ্ডলরা জয়ার পাশাপাশি হাঁটেননি। নিজেদের অনুগামীদের নিয়ে ওই মিছিলেই তাঁরা কিছুটা পিছনের দিকে থেকেছেন। একটাই মিছিল, কিন্তু যেন দু’ভাগে ভেঙে এগিয়েছে।
ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বিভাজন ছিলই। কিন্তু সে সব নেহাতই স্থানীয় সমীকরণ। সে সব বিভাজন রাজ্যস্তরে প্রভাব ফেলেনি কখনও। যখন যিনি সভাপতি পদে থেকেছেন, ছোটখাটো ব্যতিক্রম ছাড়া, মোটের উপরে তাঁদের নিয়ন্ত্রণেই থেকেছে সংগঠন। কিন্তু নেতৃত্বে আপাতত কেউ না থাকায়, ভাগাভাগি দ্রুত বেড়েছে। পরবর্তী সভাপতি হওয়ার উচ্চাকাঙ্খায় দলাদলিও বেড়েছে বলে তৃণমূলের অন্দরের খবর। ২৮ অগস্ট মেয়ো রোডে প্রতিষ্ঠা দিবসের সমাবেশ না মেটা পর্যন্ত সংগঠনের অন্দরে তিক্ততা যেন না বাড়ে, চেয়েছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়রা। সভা যখন শিয়রে, তখন নতুন কেউ সভাপতি পদে এসে পরিস্থিতি সামলে নিতে পারবেন, নাকি জটিলতা বাড়বে, তা নিয়ে তৃণমূল নেতৃত্বের সংশয় ছিল। সে সব কারণেই পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে নতুন সভাপতির নাম ঘোষণা। কিন্তু দলদলি-তিক্ততা আটকানো গেল না তাতেও।
বাংলার রাজনীতি, বাংলার শিক্ষা, বাংলার অর্থনীতি, বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার স্বাস্থ্য, বাংলার আবহাওয়া - পশ্চিমবঙ্গের সব টাটকা খবর আমাদের রাজ্য বিভাগে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy