কাঁটার লড়াই। জবরদস্ত টক্কর। ভোট গণনা পুরোপুরি শেষ না হওয়া পর্যন্ত টানটান থাকতে চলেছে স্নায়ু।
এবিপি আনন্দ-নিয়েলসনের যৌথ ভোট পরবর্তী সমীক্ষা অনেকটা সেই ইঙ্গিতই দিল। ভোট পরবর্তী সমীক্ষা বলছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অল্প হলেও এগিয়ে থাকছেন সূর্যকান্ত-অধীরদের জোটের চেয়ে। ২৯৪টি আসনের বিধানসভায় ম্যাজিক ফিগার ১৪৮। তৃণমূল পেতে পারে ১৬৩টি আসন। জোর লড়াই দিয়ে ১২৬টি আসনে পৌঁছে যেতে পারে বাম-কংগ্রেসের জোট। যথেষ্ট হতাশাব্যঞ্জক ফলের আভাস বিজেপির জন্য। সাকুল্যে ১টি আসন জুটতে পারে ভারতের শাসক দলের কপালে। অন্যান্য দল পেতে পারে ৪টি।
সাতটি দফায় ভোটগ্রহণ হয়েছে বাংলায়। কোন দফার ভোট থেকে কোন দল কত আসন পেতে পারে, ভেঙে ভেঙে সেই হিসেব তুলে ধরেছে এবিপি আনন্দ নিয়েলসন। প্রথম দফায় যে ১৮টি আসনে ভোট হয়েছিল, তার মধ্যে তৃণমূল ১৪টি এবং জোট ৪টি আসন পেতে পারে বলে ভোট পরবর্তী সমীক্ষার আভাস।
দ্বিতীয় দফায় ভোট হয়েছে ৩১টি আসনে। তার মধ্যে শাসক দল ২১ এবং বিরোধী জোট ১০টি আসন পেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
তৃতীয় দফায় যে ৫৬ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হয়েছে, সেখানে তৃণমূলের চেয়ে অনেকটা এগিয়ে যাচ্ছে জোট। সমীক্ষা বলছে ১৮টি আসন যেতে পারে তৃণমূলের দখলে। ৩৪টি আসন পেতে পারে বাম-কংগ্রেস জোট। তৃতীয় দফায় এসে খাতা খাতা খুলতে পারে বিজেপি। ১টি আসন যেতে পারে তাদের ঝুলিতে। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা জয়ী হতে পারে ৩টি আসনে।
এবিপি আনন্দ-নিয়েলসন-এর সমীক্ষা
দফাওয়াড়ি ফল প্রাপ্ত ভোট ৪৪% প্রাপ্ত ভোট ৪২% প্রাপ্ত ভোট ৭% প্রাপ্ত ভোট ৭%
প্রথম দফা ১৪ ৪ ০ ০
দ্বিতীয় দফা ২১ ১০ ০ ০
তৃতীয় দফা ১৮ ৩৪ ১ ৩
চতুর্থ দফা ২৮ ৩৪ ০ ০
পঞ্চম দফা ৩২ ১৭ ০ ০
ষষ্ঠ দফা ৩০ ২২ ০ ১
সপ্তম দফা ২০ ৫ ০ ০
মোট আসন ২৯৪ ১৬৩ ১২৬ ১ ৪
চতুর্থ দফায় ৬২টি আসনে ভোট নেওয়া হয়েছিল। সমীক্ষা বলছে এই দফাতেও অ্যাডভান্টেজ জোট। তৃণমূল এই দফা থেকে পেতে পারে ২৮টি আসন। জোট পেতে পারে ৩৪টি।
পঞ্চম দফায় তৃণমূল আবার কিছুটা এগোচ্ছে বলে আভাস। এই দফায় যে ৪৯টি আসনে ভোট হয়েছিল, তার মধ্যে ৩২টি আসনে তৃণমূল এবং ১৭টি জোটের ঝুলিতে যাবে বলে আভাস মিলেছে।
ষষ্ঠ দফায় ভোট হয়েছিল ৫৩টি আসনে। তার মধ্যে ৩০টি তৃণমূলের এবং ২২টি জোটের ঝুলিতে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ১টি আসন যেতে পারে অন্য কোনও দলের ঝুলিতে।
সপ্তম তথা শেষ দফায় ২৫টি আসনে ভোট হয়। তার মধ্যে ছিল তৃণমূলের সবচেয়ে শক্ত ঘাঁটি পূর্ব মেদিনীপুর। প্রত্যাশিত ভাবেই এই দফাতেও তৃণমূলের এগিয়ে থাকার আভাস দিয়েছে সমীক্ষা। মনে করা হচ্ছে, সপ্তম দফা থেকে তৃণমূল আরও ২০টি আসন ঝুলিতে ভরতে চলেছে। জোটের ঝুলিতে যেতে পারে ৫টি।
কিন্তু, এই সমীক্ষায় যে আভাস মিলেছে, তাকে চূড়ান্ত বলে মনে করতে নারাজ এবিপি আনন্দ-নিয়েলসন। সমীক্ষকদের বক্তব্য, এই সমীক্ষার ফল কতটা মিলবে, তা নির্ভর করছে বেশ কয়েকটি নির্ণায়ক ফ্যাক্টরের উপর। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর হল অন্তত ২৫টি হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আসন। এই ২৫টি আসনে ভোটারদের প্রবণতা থেকে কোনও স্পষ্ট ফলের ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। তৃণমূল রাজ্যের শাসক দল হওয়ায়, তাদেরকেই অ্যাডভান্টেজ হিসেবে ধরা হয়েছে ওই কেন্দ্রগুলিতে। কিন্তু ওই আসনগুলির পরিস্থিতি এমনই যে সেগুলি জোটের দিকেই ঢলে পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। যদি ওই ২৫ দোদুল্যমান আসনে তৃণমূল হেরে যায়, তা হলে বাম-কংগ্রেস জোট ১৫১তে পৌঁছে যাবে। তৃণমূল নেমে আসবে ১৩৮টি আসনে।
তেমন ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা যথেষ্টই রয়েছে বলে ওয়াকিবহাল মহলের মত। ভোট পরবর্তী সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে তৃণমূল মোট ভোটের ৪৪ শতাংশ পেতে চলেছে। জোট পেতে চলেছে ৪২ শতাংশ। বিজেপির ভোট ১৭ শতাংশ থেকে কমে ৭ শতাংশে ঠেকতে চলেছে। শতাংশের বিচারে এই ভোটপ্রাপ্তির হার নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্লেষকদের একাংশ। তৃণমূল গত লোকসবা নির্বাচনে পেয়েছিল ৩৯ শতাংশের কিছু বেশি ভোট। এ বার যে পরিস্থিতিতে ভোট হয়েছে, তাতে তৃণমূলের ভোট প্রায় পাঁচ শতাংশ বেড়ে ৪৪ শতাংশে কিছুতেই পৌঁছবে বলে মনে করছেন না কোনও কোনও সেফোলজিস্ট। বিজেপির ভোট যদি সত্যিই অনেকটা কমে, তা হলে সেই ভোটের সিংহভাগ শাসকের পরিবর্তে বিরোধীদের দিকে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি বলে তাঁরা মনে করছেন। সে ক্ষেত্রে এবিপি-আনন্দ-নিয়েলসনের করা ভোট পরবর্তী সমীক্ষার ফল নাও মিলতে পারে। তৃণমূলকে পিছনে ফেলতে পারে জোট।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy