—প্রতীকী ছবি।
প্রায় ২৩ বছর আগে মারা গিয়েছেন সুধীর চন্দ্র মণ্ডল। নিবাস, দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রের সাতগাছিয়া বিধানসভার অধীনে চন্ডি গ্রাম। মাত্র বছর কয়েক আগে ঝাড়খণ্ডের রাঁচীর একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে তাঁর নামাঙ্কিত অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে! খবর শুনে মধ্যবিত্ত সুধীরের পরিবার হতবাক।
ওই একই গ্রামের হরিমোহন মণ্ডল অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক। নুন আনতে পান্তা ফুরনো জীবন। এখনও বেঁচে অশীতিপর বৃদ্ধ। রাঁচীর ওই ব্যাঙ্কে সুধীরের মতো তাঁর অ্যাকাউন্টেও কোটি কোটি টাকা! হরি ও সুধীর দু’জনেই নাকি একটি অর্থলগ্নি সংস্থার ডিরেক্টর!
সম্প্রতি রাঁচী থেকে সিবিআইয়ের তরফে হরি ও সুধীরের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য চেয়ে পাঠানো হয়েছিল জেলা প্রশাসনের কাছে। পাঠানো হয়েছিল দু’জনের ভোটার কার্ডের ছবি। সেখান থেকেই জেলা প্রশাসন তাঁদের ঠিকানা পেয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখে এই অবস্থা। দু’জনে ঘূণাক্ষরেও জানতে পারেননি, তাঁদের নামে পাশের রাজ্যের একটি ব্যাঙ্কে ভুয়ো অ্যাকাউন্ট বানিয়ে সেখানে কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে।
সিবিআই সূত্রের দাবি, সম্প্রতি ‘সাথী মাইনিং প্রাইভেট লিমিটেড’ নামে একটি বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করলে সংস্থার চার জনের নাম উঠে আসে। সংস্থার দুই মালিক অমিত কুমার কেজরীওয়াল ও অশোক কেজরীওয়ালকে গ্রেফতার করে সিবিআই। কিন্তু, ওই সংস্থার দুই ডিরেক্টর সুধীর ও হরিকে কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছিলেন না তদন্তকারীরা।
তদন্তে জানা যায়, রাঁচীর এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে ডিরেক্টরদের অ্যাকাউন্টও রয়েছে। সেই ব্যাঙ্ক থেকে পাওয়া যায় সুধীর ও হরির ভোটার কার্ডের প্রতিলিপি। সেখানেই জ্বলজ্বল করছিল পশ্চিমবঙ্গের ঠিকানা। তখনও তদন্তকারীদের ধারণা ছিল, সিবিআই হানার খবর পেয়ে বুঝি হরি ও সুধীর গা-ঢাকা দিয়েছেন। তাই, যোগাযোগ করা হয় দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা প্রশাসনের সঙ্গে। আর তারপরেই বেরিয়ে পড়ে আসল তথ্য।
জেলা প্রশাসনের তরফে প্রাথমিক তথ্য পাওয়ার পরে সিবিআইয়ের দাবি, কোনও ভাবে হরি ও সুধীরের ভোটার কার্ড জোগাড় করেছিলেন অমিত ও অশোক। মৃত সুধীর ও বৃদ্ধ হরিকে সংস্থার দুই ডিরেক্টর দেখিয়ে তাঁদের নামে তৈরি করা হয় ভুয়ো অ্যাকাউন্ট। তদন্তকারীদের দাবি, কয়েক বছর আগে ওই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। তারপর নানা ভুয়ো অ্যাকাউন্ট থেকে ওই অ্যাকাউন্টগুলিতে কয়েক কোটি টাকার আর্থিক লেনদেন হয়েছে। সিবিআইয়ের দাবি, শুধুমাত্র আমানতকারীদের টাকা নয়, কয়লা পাচারের মামলায় জড়িত বেশ কয়েকটি ভুয়ো সংস্থা থেকেও টাকা ওই দু’জনের অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে তাদের হাতে তথ্য এসেছে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সিবিআইয়ের অনুসন্ধানের ভিত্তিতে দুই ব্যক্তির ভোটার কার্ডের বিষয়ে তৈরি রিপোর্ট খুব তাড়াতাড়ি সিবিআইয়ের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy