Advertisement
E-Paper

অনুব্রতর পথেই জামিন পেলেন প্রসূন

সিউড়ি আদালতে ১৭ দিন আগে মঞ্চস্থ হওয়া নাটকই বৃহস্পতিবার ফের অভিনীত হল বিধাননগর আদালতে। কতর্ব্যরত ট্রাফিক পুলিশকে চড় মারার ঘটনায় অভিযুক্ত তৃণমূল সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের জামিন হয়ে গেল পাঁচ মিনিটে। সরকারি আইনজীবী জামিনের আবেদনের বিরোধিতাই করলেন না।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৫ ০৩:২০
বিধাননগর কমিশনারেটে প্রসুন বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: শৌভিক দে।

বিধাননগর কমিশনারেটে প্রসুন বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: শৌভিক দে।

সিউড়ি আদালতে ১৭ দিন আগে মঞ্চস্থ হওয়া নাটকই বৃহস্পতিবার ফের অভিনীত হল বিধাননগর আদালতে। কতর্ব্যরত ট্রাফিক পুলিশকে চড় মারার ঘটনায় অভিযুক্ত তৃণমূল সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের জামিন হয়ে গেল পাঁচ মিনিটে। সরকারি আইনজীবী জামিনের আবেদনের বিরোধিতাই করলেন না।

পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা মারার হুমকি দেওয়ার মামলায় সিউড়ি আদালতে পাঁচ মিনিটের মধ্যে জামিন পেয়ে গিয়েছিলেন বীরভূমের তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। সরকারি আইনজীবী জামিনের বিরোধিতা করেননি। সেটা ২৯ জুনের ঘটনা। আর বৃহস্পতিবার বিধাননগর আদালতেও সরকারি আইনজীবী একই পথ নিলেন।

পুলিশকে চড় মারার ওই ঘটনায় প্রসূনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল বিধাননগর আদালত। গত সপ্তাহে বারাসত আদালত সেই নির্দেশের উপরে স্থগিতাদেশ জারি করে। তার ভিত্তিতেই এ দিন বিধাননগর আদালতে আত্মসমর্পন করে জামিনের আবেদন করেছিলেন তৃণমূলের সাংসদ। তাঁর বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা দেওয়া, শারীরিক আক্রমণের মতো জামিন অযোগ্য ধারার অভিযোগ ছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও আদালতে সরকারি আইনজীবী জামিনের বিরোধিতা করেননি।

প্রসূন অবশ্য এ ব্যাপারে করা প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে বলেছেন, ‘‘আমাকে মেসি-মারাদোনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করুন, জবাব দেব। আইনের বিষয়ে যা বলার আমার আইনজীবী বলবেন।’’ আদালতে ঢোকা এবং বার হওয়ার সময়ে সারা ক্ষণ হাতজোড় করেই ছিলেন তৃণমূলের সাংসদ। তাঁর দুই আইনজীবী সৌম্যজিৎ রাহা ও রাজদীপ মজুমদার আদালতের বাইরে দাবি করেন, তাঁদের মক্কেল খেলার ময়দানে কখনও হলুদ কার্ডও দেখেননি। পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতা করা সত্ত্বেও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল। বিধাননগর আদালতে অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিষ্ট্রেট অপূর্বকুমার ঘোষের সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে তাঁরা বারাসত আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। গ্রেফতারি পরোয়ানার উপরে স্থগিতাদেশও পেয়েছেন। তাঁদের মক্কেল আদালতে হাজির হয়েছেন। ফলে সরকারি আইনজীবীর এ ক্ষেত্রে কিছু বলার থাকতেই পারে না।

সরকারি আইনজীবী কেন অভিযুক্তের আইনজীবীর দাবিকে সমর্থন করলেন? সরকারি আইনজীবী সাবির আলি এ দিন আদালতে তাঁর সওয়ালে বলেন, ‘‘বিধাননগর এসিজেএম আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির নির্দেশের

উপর বারাসত আদালত স্থগিতাদেশ দিয়েছে। এ দিন সাংসদ সশরীরে হাজির হয়েছেন। ফলে সরকারের

কিছু বলার নেই।’’ অভিযুক্ত বিরোধী দলের কেউ হলে কি তিনি এ ভাবে জামিনের পক্ষে সওয়াল করতেন? সাবির আলি এ প্রশ্নের কোনও জবাব দিতে চাননি। তবে তাঁর সহকর্মীরা বলছেন, ‘‘উচ্চ আদালত যখন গ্রেফতারি পরোয়ানার উপরে স্থগিতাদেশ দিয়েছে, সে ক্ষেত্রে অভিযুক্ত যে-ই হোন, আদালতে আমাদের একই বক্তব্য থাকত।’’

এদিন সরকারি আইনজীবী পুলিশকে নিগ্রহ এবং সরকারি কাজের বাধা দেওয়ার অভিযুক্তের জামিনের বিরোধিতা না করায় বিচার ব্যবস্থার নিরপেক্ষতা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গেল— এই মন্তব্য করেছেন আইনজীবীদের অনেকেই। কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘শাসকদলের রং দেখলেই অপরাধের গুরুত্ব কমে যায়। আর বিরোধী দল হলে সমস্ত অপরাধের গুরুত্ব বেড়ে যায়। পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাসে কলঙ্গজনক অধ্যায়ের সূচনা হল।’’

সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য শ্যামল চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘ওরা নিজেদের বলছে আইনের রক্ষক। আসলে এরা আইনের ভক্ষক। এদের শেষের দিন ঘনিয়ে আসছে।’’ বিজেপির শমীক ভট্টাচার্যের বক্রোক্তি, ‘‘তৃণমূল তো সরকার পরিচালনা করছে না, শাসন করছে। তারা দেখাল, ভৃত্য-পুলিশকে শাসন করার অধিকার আমির-ওমরাহদের রয়েছে।’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘সরকারের স্তাবকতা করাই সরকারি কৌঁসুলিদের আইনি ধর্ম হয়ে উঠেছে।’’

বিরোধীদের এ হেন সমালোচনার মুখে তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য কী?

দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘আমাদের প্রশাসন ব্যতিক্রমী। জনপ্রতিনিধিকেও ছেড়ে কথা বলা হয় না। এ ক্ষেত্রে আদালত যদি তাঁকে মুক্তি দিতে পারেন, আমাদের বলার কী আছে।’’

Trinamool Congress Prasun Banerjee Bail TMC personal bond
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy