রায়নার ওসি-কে মারধরের ঘটনায় তৃণমূল নেতা বামদাস মণ্ডল-সহ ২১ জনকে গ্রেফতার করল বর্ধমান জেলা পুলিশ।
ঘটনাচক্রে, এলাকায় শান্তিরক্ষার জন্য ওসি সঞ্জয় রায় কয়েক দিন আগে যে তৃণমূল নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেছিলেন, বামদাস তাঁদের অন্যতম। রায়নায় তাঁরই একাধিপত্য ছিল। সম্প্রতি রায়না থানা এলাকায় তাঁকে দলের আহ্বায়কও করা হয়েছিল বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। যদিও দল সূত্রে এখন তা অস্বীকার করা হচ্ছে।
শুক্রবার বর্ধমান আদালতে তোলা হলে বামদাস-সহ পাঁচ জনকে সাত দিন পুলিশ হেফাজত এবং বাকিদের ১৪ দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বোমা উদ্ধার করতে গিয়ে ওসি আক্রান্ত হওয়ার পরে রাতে পুলিশ যে মামলা রুজু করে, তাতে বামদাসকেই মূল ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাঁরই ব্যবস্থাপনায় এলাকায় বোমা, আগ্নেয়াস্ত্র ও কার্তুজ সরবরাহ হতে বলেও অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছে পুলিশ। গোটা ঘটনায় অস্বস্তিতে তৃণমূল। জেলার দায়িত্বে থাকা রাজ্য নেতা তথা মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বলেন, ‘‘বামদাসকে কোনও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল বলে যদি শুনে থাকেন, ঠিক শোনেননি। পুলিশ নিজের কাজ করছে।’’
আর এক মন্ত্রী তথা জেলা তৃণমূল সভাপতি (গ্রামীণ) স্বপন দেবনাথের বিরোধী গোষ্ঠীর লোক বলে পরিচিত ছিলেন একদা সিপিএম থেকে বহিষ্কৃত বামদাস। এ দিন তাঁর কিছু আত্মীয় দাবি করেন, জেলার এক মন্ত্রীর ষড়যন্ত্রেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। স্বপনবাবু বলেন, “অস্বস্তিকর প্রশ্নের জবাব দেব না। শুধু বলব, দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। পরে দলগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
কী ঘটেছিল বৃহস্পতিবার রাতে?
পুলিশ সূত্রের খবর, রাত ৮টা নাগাদ রায়না থানার ওসি সঞ্জয় রায় খবর পান, স্থানীয় বেলসর গ্রামের মানিক শেখ মোটরবাইকে করে সোমেশপুর থেকে বোমা ও বোমা তৈরির মশলা নিয়ে আসার সময়ে কিছু গ্রামবাসী তাঁকে পাকড়াও করেন। জ্যোৎসাদি গ্রামে কয়রাপুর ক্যানাল পুলের কাছে তাকে আটকে রাখা হয়েছে। ওসি টহলেই ছিলেন। খবর পেয়েই মিনিট পনেরোর মধ্যে তিনি ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান। বাইক ও বোমা-সহ অভিযুক্তকে থানায় নিয়ে যাওয়ার সময়ে কালভার্টের কাছে শ’খানেক লোক পুলিশের পথ আটকায়। ওসি যখন তাদের সঙ্গে কথা বলছেন, তারই মধ্যে লাঠি, টাঙ্গি ও ইট নিয়ে বেশ কিছু দুষ্কৃতী ধেয়ে আসে। ইট-লাঠি দিয়ে ওসি-র মাথার পিছনে আঘাত করা হয়। রক্তাক্ত অবস্থায় তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়ার পরেও কয়েক জন তাঁকে মারতে থাকে। বাকি পুলিশকর্মীরা তেড়ে গেলে দুষ্কৃতীরা পালায়। ছক কষে ওসিকে ডেকে নিয়ে গিয়ে খুন করাই উদ্দেশ্য ছিল বলে পুলিশের অনুমান।
রাজ্যে একের পর এক পুলিশ আক্রান্ত হওয়ায় ঘটনায় আগে থেকেই নিচুতলায় ক্ষোভ ধোঁয়াচ্ছে। প্রশ্ন হল, রায়নায় তৃণমূল নেতা গ্রেফতার হওয়ায় কি তাঁদের মনোবল বাড়ল? জেলার বিভিন্ন থানার পুলিশকর্মীর সঙ্গে কথা বলে পরিষ্কার, এই তৎপরতায় তাঁরা খুশি হলেও আশ্বস্ত নন। তাঁদের বক্তব্য, রাজনৈতিক চাপে পুলিশের যদি ফোঁস করার ক্ষমতা না থাকে, দুষ্কৃতীরা তো আক্রমণ করবেই। রায়না থানার এক এসআই বলেন, “পরিস্থিতি না পাল্টালে কিন্তু পুলিশ শব্দটাই অর্থহীন হয়ে যাবে।”