কারাদণ্ডের সিদ্ধান্তে আদালত স্থগিতাদেশ দেওয়ার পরে তৃণমূল বিধায়ক সোহরাব আলিকে নিয়ে উচ্ছ্বাস অনুগামীদের। সোমবার আসানসোলে। — নিজস্ব চিত্র।
রেলের যন্ত্রাংশ চুরির মামলায় তৃণমূল বিধায়ক সোহরাব আলির কারাদণ্ডের নির্দেশ আপাতত স্থগিত হয়ে গেল। আসানসোল জেলা জজ আদালত সোমবার ওই নির্দেশের উপরে স্থগিতাদেশ দেয়।
ফলে, নবগঠিত আসানসোল কর্পোরেশনের ভোটে দাঁড়ানোর পক্ষে সোহরাবের তেমন বাধা রইল না বলে আইনজ্ঞেরা অনেকেই মনে করছেন। যদিও তৃণমূল তাঁকে দাঁড় করাবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।
সন্ধ্যায় রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সুশান্তরঞ্জন উপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওই বিধায়ক যেহেতু উচ্চতর আদালতে স্থগিতাদেশ নিয়েছেন, ওঁর কারাদণ্ড কার্যকর হচ্ছে না। ফলে, ওঁর নির্বাচনে দাঁড়াতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় বলেই প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে। তবু আইনজীবীদের সঙ্গে আরও পরামর্শ করা হবে।’’ তবে রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী তথা আসানসোলের নেতা মলয় ঘটক রাতে বলে দেন, ‘‘সোহরাব আমাদের বিধায়ক। তাঁকে পুরভোটে দাঁড় করানোর কথা আমরা ভাবছি না।’’
তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, আসানসোল পুরভোটে সোহরাবকে ৮২ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু প্রার্থী তালিকা ঘোষণার ঠিক আগে, গত ৮ সেপ্টেম্বর দোষী সাব্যস্ত হন সোহরাব-সহ চার জন। সাবেক আসানসোল, রানিগঞ্জ, জামুড়িয়া ও কুলটি নিয়ে গঠিত আসানসোল কর্পোরেশনের ১০৬টি আসনের মধ্যে এক মাত্র ৮২ নম্বরের প্রার্থীই সোমবার রাত পর্যন্ত ঘোষণা করা হয়নি। আজ, মঙ্গলবার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে আসানসোলের তৃণমূল নেতারা বৈঠকে বসছেন।
কেন এই জটিলতা?
সোহরাবের সাজা হয়েছে ১৯৯৫ সালে রেলের যন্ত্রাংশ চুরির মামলায়। সে সময়ে সোহরাব সরাসরি কোনও দলের ছত্রচ্ছায়ায় ছিলেন না। পরে ফরওয়ার্ড ব্লক এবং আরএসপি ঘুরে ২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে তৃণমূলে যোগ দিয়ে টিকিট পান। জিতেও যান। গত ৮ সেপ্টেম্বর আসানসোলের সপ্তম বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট অনিন্দ্য সেন তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে দু’বছর কারাদণ্ড দেন। তা চ্যালেঞ্জ করে আদালতের তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা জজ তপন দাসের এজলাসে এ দিন সাজা মকুবের আর্জি জানান সোহরাবের কৌঁসুলি জগদীন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায়। বিচারক জানান, ফের শুনানির আগে সোহরাবকে সাজা ভোগ করতে হবে না।
কিন্তু এই অবস্থায় সোহরাবকে ভোটে দাঁড় করানো উচিত কি না, তা নিয়ে তৃণমূল নেতারা সংশয়ে। দলের একাংশের মতে, কারাদণ্ড স্থগিত হয়ে যাওয়ার পরেও সোহরাবকে দাঁড় না করালে মনে হবে যেন দলই তাঁকে অপরাধী মনে করছে। তা ছাড়া, পরের বছর বিধানসভা ভোট। তার আগে সোহরাবকে কাউন্সিলর করে জিতিয়ে আনতে পারলে বিধানসভায় টিকিট দেওয়ার চাপ কম থাকবে। উচ্চ আদালতে সোহরাব দোষী সাব্যস্ত হলেও দলের উপরে চাপ কম পড়বে।
কিন্তু তৃণমূলেরই অন্য একটি প্রভাবশালী অংশ মনে করছে, এখনই সোহরাবকে প্রার্থী করা হলে দলের মুখ পুড়বে। বিরোধীরা সহজ অস্ত্র হাতে পেয়ে যাবে।
তা ছাড়া, যে সোহরাব ঘটনার সময়ে দলের কেউ ছিলেন না (তৃণমূলেরই জন্ম হয়নি তখন) এবং বারবার দলবদল করে মোটে চার বছর আগে দলে এসেছেন, তাঁর জন্য এত বড় ঝুঁকি নিতেও রাজ্য নেতৃত্বের একটা বড় অংশ রাজি নন। শিল্পাঞ্চলের এক তাবড় নেতা জানান, দু’কূল বজায় রাখতে ফাঁকা আসনে সোহরাব-ঘনিষ্ঠ কাউকে প্রার্থী করার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy