করোনা-সংক্রমণের জন্য যখন স্কুল বন্ধের কথা প্রথম ঘোষণা হল, অস্বীকার করব না, আনন্দই হয়েছিল। ভেবেছিলাম, কয়েকটা দিন ছুটি পাওয়া গেল। কিন্তু স্কুল যে এত দিনের জন্য বন্ধ থাকতে চলেছে, সে জন্য কী-কী সমস্যায় পড়তে হবে— তখন মাথায় আসেনি।
স্কুল থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে খড়ের চাল দেওয়া মাটির বাড়িতে বাবা, মা ও ভাইয়ের সঙ্গে থাকি। বাবা প্রশান্ত দিগের, মা মাধবী দিগের খেতমজুর। তাতেই সংসার ও আমাদের ভাইবোনের পড়াশোনা চলে। লকডাউন শুরুর পরে, গোড়ায় শোনা গেল, আমাদের পড়াশোনা যাতে বন্ধ না হয়ে যায়, সে জন্য টিভিতে ক্লাস নেওয়া হবে। কিন্তু বাড়িতে টিভি নেই। আমাদের বেলুট বাগদিপাড়ায় জনা দু’য়েকের বাড়িতে তা রয়েছে। তাই চিন্তায় পড়েছিলাম।
মাস পেরোলেও স্কুল খুলছিল না। দেশ জুড়ে করোনা-সংক্রমণ বাড়ছে বলে শুনছিলাম। পড়াশোনা কী ভাবে করব, চিন্তা বাড়ছিল। এর মধ্যে জানলাম, মোবাইলে অনলাইন ক্লাস হবে। কিন্তু আমাদের তো বটেই, গোটা পাড়ায় কারও স্মার্ট ফোন নেই। বাবা-মায়ের ক্ষমতা নেই স্মার্ট ফোন কেনার। ফলে, অনলাইন ক্লাসে যোগ দেওয়া হল না আমার, অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ভাইয়ের। অন্য পাড়ার বন্ধুদের কাছে শুনতাম, স্কুলের স্যরেরা অনলাইনে পড়াচ্ছেন। মন খারাপ হত।