Advertisement
E-Paper

দু’বার বিয়ে রুখে হোমে দুই বোন

শুক্রবার বাঁকুড়া চাইল্ড লাইনে বারিকুল থেকে ফোনটা এসেছিল। সম্পর্কে খু়ড়তুতো-জেঠতুতো দুই বোন বলেছিল, ‘‘বিয়ের হাত থেকে আমাদের বাঁচাতে চাইলে তাড়াতাড়ি চলে আসুন।’’

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৭ ০৩:৩৩

প্রথম বার ফোন করে নিজেদের বিয়ে রুখেছিল দুই বোন। বছরখানেক পরে একই ভাবে ফের বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা রুখল তারা। এ বার অবশ্য সে জন্য বা়ড়িছাড়া হতে হয়েছে তাদের।

শুক্রবার বাঁকুড়া চাইল্ড লাইনে বারিকুল থেকে ফোনটা এসেছিল। সম্পর্কে খু়ড়তুতো-জেঠতুতো দুই বোন বলেছিল, ‘‘বিয়ের হাত থেকে আমাদের বাঁচাতে চাইলে তাড়াতাড়ি চলে আসুন।’’ ঘটনাচক্রে সেই সময়ে বারিকুলেই সচেতনতা শিবির করতে গিয়েছিলেন বাঁকুড়া চাইল্ড লাইনের কো-অর্ডিনেটর সজল শীল। খবর পেয়েই তিনি পুলিশ নিয়ে ওই বাড়িতে হাজির হন।

বারিকুলের বাড়িটি ওই দুই নাবালিকার মামার। তাদের আসল বাড়ি পুরুলিয়ার বোরোয়। দু’জনেই সদ্য নবম শ্রেণিতে উঠেছে। এক জন কন্যাশ্রী প্রকল্পের প্রাপক। বছরখানেক আগে পুরুলিয়া চাইল্ড লাইনে ফোন করে নিজেদের বিয়ে ভেস্তে দিয়েছিল দুই কিশোরী। এ বার তাদের মামাবাড়িতে রেখে বিয়ের তোড়জোড় চলছিল। পাত্রেরাও দুই ভাই। বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের ঝাড়গ্রামে। সেখানেই হতো বিয়ে। সজলবাবুরা যখন পৌঁছন, তখন দুই বোনকে ঝাড়গ্রামে নিয়ে যাওয়ার জন্য গাড়ি দরজায় হাজির।

এ বারও বিয়ে আটকেছে বটে, কিন্তু দুই নাবালিকার পরিবার জানিয়ে দেয়, তারা আর মেয়েদের দায়িত্ব নেবে না। দু’জনকে বাঁকুড়ায় নিয়ে আসে চাইল্ড লাইন। শনিবার জেলা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি তাদের হোমে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। এ দিন চাইল্ড লাইনের অফিসে বসে দুই বোন বলে, ‘‘আমরা পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই। কিন্তু মা-বাবারা পড়াতে চান না।’’ বাড়ি ছাড়তে হল বলে কোনও আক্ষেপ? তারা বলে, ‘‘খারাপ লাগছে। তবে আমাদেরও তো চাকরি করার স্বপ্ন আছে। সেটা পুরণ করতে যদি হোমেও থাকতে হয়, আপত্তি নেই।”

দুই নাবালিকার এক জনের বাবার মুদির দোকান। অন্য জনের আনাজের ব্যবসা। তাঁদের দাবি, অভাবের কারণেই মেয়েদের বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। ‘কন্যাশ্রী’র টাকা তো মেয়েদের ভবিষ্যত গড়ার জন্য দেয় সরকার? দুই বাবার বক্তব্য, ‘‘বিয়ে না হলে আমাদের পরে মেয়েকে দেখবে কে? ভাল পাত্র সব সময় মেলে না।’’

রাজ্যের নারী, শিশু ও সমাজ কল্যাণ দফতরের এক কর্তা জানান, নাবালিকার বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে পারে। বাঁকুড়ার জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে ওই দুই নাবালিকার অভিভাবকদের কাউন্সেলিং করানো হবে। পরে আইনি কোনও পদক্ষেপ করা হবে কি না, সেটা দেখা হচ্ছে।’’

Minor Child Marriage নাবালিকা বাল্য বিবাহ
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy