নতুন দু’টি মহকুমা গড়ার কাজ একধাপ এগোল। ঝালদা এবং মানবাজার দু’টি মহকুমা গঠন নিয়ে সম্প্রতি পুরুলিয়া জেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা বৈঠকে বসেন। জেলাশাসকের অফিসে এই বৈঠক হয়।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মানবাজার মহকুমার মধ্যে মানবাজার ১ ও মানবাজার ২, বান্দোয়ান, পুঞ্চা ও বরাবাজার ব্লক অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব রয়েছে। তবে ওই বৈঠকে বরাবাজারকে পুরুলিয়া সদর মহকুমার মধ্যে রাখার প্রস্তাব দেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণীন্দ্র গোপ। মণীন্দ্রবাবুর দাবি, বামফ্রন্ট সরকারের আমলে দুই মহকুমার মধ্যে কোন কোন এলাকা থাকবে এ নিয়ে আমরা একটা খসড়া প্রস্তাব রাজ্য সরকারের কাছে পাঠিয়েছিলাম। সেই প্রস্তাবে বরাবাজারকে পুরুলিয়া সদর মহকুমার মধ্যে রাখার দাবি ছিল। বৈঠকে তৃণমূলের পক্ষ থেকে নব্যেন্দু মাহালি পাল্টা প্রস্তাব দেন, ‘‘বরাবাজার থেকে পুরুলিয়া এবং মানবাজারের দূরত্ব প্রায় সমান। তাই বরাবাজার ব্লককে মানবাজার মহকুমার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হোক।’’ যদিও মণীন্দ্রবাবুর যুক্তি, ‘‘বরাবাজারের বেশিরভাগ পঞ্চায়েত এলাকা পুরুলিয়া সদর মহকুমা এলাকার কাছে। এ ছাড়া এই সব এলাকা থেকে পুরুলিয়ার যোগাযোগও ভাল।’’ একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, তবে কোন এলাকা কোন মহকুমার মধ্যে থাকলে প্রশাসনিক কাজ চালাতে সুবিধা হবে, প্রশাসনের কর্তা হিসাবে জেলাশাসক তা ভাল জানবেন।
জানা গিয়েছে, ঝালদা মহকুমার মধ্যে ঝালদা ১ ও ঝালদা ২, ঝালদা পুরসভা, জয়পুর এবং বাঘমুণ্ডি ব্লক থাকার প্রস্তাব রয়েছে। প্রাক্তন সাংসদ ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা নরহরি মাহাতো দাবি করেন, ‘‘আড়শা ব্লকের সঙ্গে পুরুলিয়া অপেক্ষা ঝালদার যোগাযোগ ভাল। আড়শাকে তাই ঝালদা মহকুমার অধীনে রাখার প্রস্তাব দিয়েছি।’’
বতর্মানে রঘুনাথপুর, পুরুলিয়া সদর ও পুরুলিয়া পশ্চিম এই তিনটি মহকুমা রয়েছে। সদর ও পশ্চিম মহকুমার অফিসে অবশ্য পুরুলিয়াতেই রয়েছে। ওই দুই মহকুমার মধ্যে জেলার জঙ্গলমহলের বিস্তীর্ণ এলাকা তো বটেই শহরাঞ্চলও রয়েছে। এ বার ঝালদা ও মানবাজার মহকুমা তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় পুরুলিয়া সদরের অধীন ব্লকগুলিরও কিছুটা অদলবদল হতে পারে। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘ঝালদা এবং মানবাজার মহকুমার মধ্যে কোন কোন ব্লক থাকবে তা নির্দিষ্ট হয়ে গেলে পুরুলিয়া সদর মহকুমার এলাকাগুলিও নতুন ভাবে চিহ্নিত করতে হবে। আপাতত পুরুলিয়া সদর মহকুমার মধ্যে পুরুলিয়া ১ ও পুরুলিয়া ২, হুড়া, বলরামপুর ও আড়শা ব্লক থাকার প্রস্তাব রয়েছে। তবে রঘুনাথপুর মহকুমা এলাকায় কোনও বদল হচ্ছে না। পুরুলিয়ার জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘দু’টি মহকুমার মধ্যে কোন কোন এলাকা থাকবে এবং কোন স্থানে মহকুমা অফিস হবে এ সবই রাজ্য সরকার ও হাইকোর্ট চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। সব রাজনৈতিক দলের মতামত নিয়ে আমরা খসড়া প্রস্তাব পাঠিয়েছি।’’
‘‘সমস্ত রাজনৈতিক দল মহকুমা গঠন নিয়ে তাদের প্রস্তাব রেখেছেন। আমরা ওই খসড়া প্রস্তাব রাজ্য সরকারের কাছে পাঠিয়েছি।’’
প্রশাসন সূত্রে খবর, মহকুমা অফিসের প্রশাসনিক ভবন নিয়ে পাল্টা প্রস্তাব উঠে না আসায় আপাতত ঠিক হয়েছে মানবাজার মহকুমার প্রশাসনিক ভবন কিসান মান্ডির পাশে কৃষি দফতরের সিড ফার্মের জায়গায় তৈরি করা হবে। মানবাজার ১ বিডিও সত্যজিৎ বিশ্বাস বলেন, ‘‘সিড ফার্মের অধীনে প্রায় ৩৯ একর জমি রয়েছে। মহকুমা প্রশাসনিক ভবন, আদালত, সংশোধনাগার-সহ বিভিন্ন অফিস ও প্রশাসনিক কর্তাদের বাংলো ইত্যাদি তৈরি করার মতো জায়গা রয়েছে।’’ ঝালদায় মহকুমা প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের জন্য ঝালদা কলেজের কাছে কিসান মান্ডি চত্বর এলাকায় প্রয়োজনীয় জমি রয়েছে বলে প্রশাসনিক কর্তারা জানিয়েছেন। তবে প্রশাসনিক ভবন নির্মাণে বেশ কিছুটা সময় লাগবে। তবে মহকুমা চালু করার নির্দেশ এলে যাতে দেরি না করে অফিস চালু করা যায়, সেই মতো ভবন দেখে রাখা হচ্ছে বলে এক প্রশাসনিক কর্তা জানিয়েছেন।
বাম আমলে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য পুরুলিয়ায় এসে ২০০৯ সালে নতুন মহকুমা তৈরির কথা ঘোষণা করে গিয়েছিলেন। তারপরে অবশ্য কাজ আদৌ এগোয়নি বলে তৃণমূলের দাবি। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলায় এসে কয়েকবার মহকুমা তৈরির বিষয়ে আশ্বাস জুগিয়ে যান। কিন্তু মহকুমা চালু কবে হবে, দু’টি মহকুমার অধীনে কোন কোন এলাকা থাকবে সরকারি ভাবে এ নিয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা না মেলায় জেলাবাসী অন্ধকারে থেকে গিয়েছেন। জেলাশাসকের অফিসে রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে বৈঠক হওয়ার পরে তাই নতুন করে আশা জেগেছে বাসিন্দাদের মধ্যে। যদিও জেলা প্রশাসনের এক কর্তা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘নতুন মহকুমা তৈরি ছোটখাটো ব্যাপার নয়। ধাপে ধাপে অনেক কাজ থাকে। সে সময়টুকু ধৈর্য নিয়ে অপেক্ষা করতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy