Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
higher secondary examination

কোন মূল্যায়নে কলেজে ভর্তি, সদুত্তর অমিল

শিক্ষকদের বড় অংশের মতে, উচ্চ মাধ্যমিকের পরে যাঁরা ডাক্তারি বা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে যান, তাঁদের তো প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাশ করতে হয়।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০২১ ০৬:১৪
Share: Save:

পশ্চিমবঙ্গে দশম ও দ্বাদশে এ বার চূড়ান্ত পরীক্ষা হবে কি না, সিদ্ধান্ত হয়নি এখনও। তবে পরীক্ষা না-হলে মাধ্যমিকের তুলনায় উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে মূল্যায়ন করাটাই বেশি সমস্যার বলে শিক্ষা শিবিরের অভিমত।

কেন? শিক্ষা মহলের বক্তব্য, মাধ্যমিক পরীক্ষার পরে বেশির ভাগ ছাত্রছাত্রী নিজেদের স্কুলেই উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হয়। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা দীর্ঘদিন ধরে তাদের চেনেন। ফলে তাদের একটি মূল্যায়ন শিক্ষকেরা এমনিতেই করতে পারেন। সেখানে পরীক্ষা না-হলেও মুল্যায়নের ক্ষেত্রে ততটা সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

সমস্যা উচ্চ মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে। শিক্ষকদের বড় অংশের মতে, উচ্চ মাধ্যমিকের পরে যাঁরা ডাক্তারি বা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে যান, তাঁদের তো প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাশ করতে হয়। সেখানে একটি মূল্যায়ন হয়েই যায়। কিন্তু স্নাতক স্তরে প্রথম বর্ষে সাধারণ কোনও বিষয় নিয়ে পড়তে যাবেন অনেকেই। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ যে-ভাবে তাঁদের মূল্যায়ন করবে, তা কতটা গ্রহণযোগ্য হবে, সেই প্রশ্নটাই এখন বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে।

এক শিক্ষক জানান, যে-পড়ুয়া পদার্থবিদ্যা পড়তে চান, তাঁকে নতুন কলেজে ভর্তি হতে হবে। সেই কলেজের শিক্ষকেরা তাঁকে আগে থেকে চেনেন না। ফলে পরীক্ষা ছাড়াই সংসদ তাঁর যে-ফল জানিয়েছে, তাতে তাঁর পক্ষে পদার্থবিদ্যায় অনার্স পড়া সম্ভব কি না, সেই প্রশ্ন উঠবেই। রাজ্য সরকারের নির্দেশে সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত কলেজে প্রবেশিকা উঠে গিয়েছে। করোনা আবহে তা চালু করা সম্ভব নয় বলে শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন। এই অবস্থায় উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা না-হলে ছাত্রছাত্রীদের মূল্যায়ন কী ভাবে হবে এবং কলেজে সেই মূল্যায়ন কতটা গৃহীত হবে— এ-সব প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে শিক্ষক শিবিরের অন্দরে। তাঁদের প্রশ্ন, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা যদি না-হয়, সে-ক্ষেত্রে যে-পদ্ধতিতেই মূল্যায়ন করা হোক, তার ভিত্তিতে স্নাতক স্তরে ভর্তি কি যথাযথ হবে?

গত বছর দ্বাদশ শ্রেণির অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন হয়নি। সংসদের কাছে সব পরীক্ষার্থীর ল্যাবরেটরি-ভিত্তিক বিষয়ের প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষার ৩০ নম্বর এবং ‘নন-ল্যাব’ বিষয়ের প্রজেক্টের ২০ নম্বর রয়েছে। সেই নম্বরের ভিত্তিতে আদৌ দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষার্থীর সামগ্রিক ফলাফল তৈরি করা সম্ভব কি না, মূল প্রশ্ন সেটাই।

এখন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা হয় শুধু দ্বাদশের পাঠ্যক্রমের ভিত্তিতে। একাদশের চূড়ান্ত পরীক্ষা গত বছর শুরু হলেও করোনার জন্য শেষ তিন দিন পরীক্ষা হতে পারেনি। ওই শেষ তিন দিনে পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, অর্থনীতি, রাশিবিজ্ঞানের মতো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের পরীক্ষা ছিল।

প্রশ্ন উঠছে পদার্থবিদ্যা, অর্থনীতি, রসায়ন, রাশিবিজ্ঞানের মতো বিষয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে কলেজগুলি কোন পন্থা অবলম্বন করবে? লেডি ব্রেবোর্ন কলেজের অধ্যক্ষা শিউলি সরকার জানান, আগে তাঁর কলেজে মাইক্রোবায়োলজি, বাংলা ও ইংরেজির প্রবেশিকা পরীক্ষা হত। ২০১৯ সালে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে উপাচার্যদের বৈঠকে প্রবেশিকার বিষয়টি ওঠে। মত যায় সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত কলেজে প্রবেশিকার বিরুদ্ধেই। শিউলিদেবী জানান, তার পরে সেই বছরেই তাঁরা প্রবেশিকা বন্ধ করে দেন। গত বছর করোনার জন্য কোনও কলেজেই প্রবেশিকা পরীক্ষা হয়নি।

ওই অধ্যক্ষার কথায়, এ বছর উচ্চ মাধ্যমিকের ফল যে-ভাবেই প্রকাশ করা হোক, পড়ুয়ারা তার ভিত্তিতেই কলেজে অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। সিবিএসই দ্বাদশ এবং আইএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে।

বেলুড় রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দিরের অধ্যক্ষ স্বামী একচিত্তানন্দ জানান, আগে তাঁদের প্রতিষ্ঠানে প্রবেশিকা হত। গত বার করোনার জন্য তা হয়নি। তবে পড়ুয়ার জাতীয় স্তরে পুরস্কার, অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ ইত্যাদি বিষয়কে ভর্তির ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। এ বার পরীক্ষা ছাড়াই সব বোর্ডের দ্বাদশ শ্রেণির ফল প্রকাশ করা হলে ভর্তির পদ্ধতি কী হবে, সেটা ঠিক করা হবে তাঁদের অ্যাক্যাডেমিক কমিটিতে আলোচনার ভিত্তিতে। নিউ আলিপুর কলেজের অধ্যক্ষ জয়দীপ ষড়ঙ্গী জানান, এই পরিস্থিতিতে স্নাতকে ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে তাঁরা চিন্তায় পড়েছেন। চিত্তরঞ্জন কলেজের অধ্যক্ষ শ্যামলেন্দু চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কেউ পদার্থবিদ্যা বা রসায়নে অনার্স নিয়ে ভর্তি হতে চাইলে সে পদার্থবিদ্যা বা রসায়ন কতটা জানে, তার মার্কশিট দেখে এ বার সেটা বোঝা যাবে না। কারণ, একাদশ-দ্বাদশের আগে সে ওই সব বিষয় পড়েনি। একাদশ-দ্বাদশে ওই সব বিষয়ে তার কোনও পরীক্ষাও হয়নি।’’

মৌলানা আজাদ কলেজের অধ্যক্ষ শুভাশিস দত্ত জানান, রাজ্য সরকার কী পদক্ষেপ করে, সে-দিকেই তাকিয়ে আছেন তাঁরা। আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু কলেজের অধ্যক্ষ পূর্ণচন্দ্র মাইতি বলেন, ‘‘সরকার একটা পন্থা নিশ্চয়ই বার করবে। সেই পথেই ভর্তি হবে।’’ ক্যানিং বঙ্কিম সর্দার কলেজের অধ্যক্ষ তিলক চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তিনি ছাত্রছাত্রীদের অনলাইনে প্রবেশিকা পরীক্ষা নেওয়ার পক্ষে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

higher secondary examination Madhyamik examination
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE