ভেঙে পড়া সেতুতে চলছে উদ্ধারকাজ। নিজস্ব চিত্র
গঙ্গার উপরে নির্মীয়মাণ সেতুর একটি অংশ ভেঙে পড়ে মালদহে রবিবার সন্ধেয় দু’জনের মৃত্যু হল। তাঁদের নাম শ্রীনিবাস রাও (৩৫) এবং শচীন প্রতাপ (৩০)। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, শ্রীনিবাসের বাড়ি অন্ধ্রপ্রদেশে, তিনি ইঞ্জিনিয়ার। শচীনের বাড়ি উত্তরপ্রদেশে। প্রশাসনিক সূত্রে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, তাঁদের এক জন ইঞ্জিনিয়ার অন্য জন তাঁর সহযোগী। গুরুতর জখম হয়েছেন রঞ্জন মেহতা এবং মুকেশ পাণ্ডে সহ চার জন। তাঁদের মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। মালদহের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘‘উদ্ধার কাজ শুরু হয়েছে। আহতদের পরিচয়ের খোঁজ করা হচ্ছে।’’ তবে স্থানীয় সূত্রে দাবি করা হয়েছে, বেশ কয়েক জন শ্রমিক গুরুতর জখম হয়েছেন। তাই এলাকার বাসিন্দাদের আশঙ্কা, হতাহতের সংখ্যা পরে বাড়তেও পারে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, বিহারের বাসিন্দা রঞ্জন ও মুকেশকে রাতে কলকাতার এসএসকেএমে পাঠানো হয়েছে।
গঙ্গার উপরে মালদহ-ফরাক্কা সংযোগকারী একটি দ্বিতীয় সেতু তৈরির উদ্যোগী হন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। দেড় বছর আগে সেই মতো এই সেতু তৈরির কাজ শুরু হয়। মালদহের বৈষ্ণবনগর এলাকায় সেতুর দু’টি স্তম্ভ তৈরি হয়েছে। সেই স্তম্ভের উপরে যে অংশটি সেতুটিকে ধরে রাখবে, এ দিন বিকেল থেকে সেই অংশের কাজ চলছিল। সেতুর নীচে কাজ করছিলেন অন্তত ২০ জন শ্রমিক। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আচমকা প্রথম ও দ্বিতীয় স্তম্ভের উপরের অংশটি ভেঙে পড়ে। তার উপরে থাকা ক্রেনটিও ভেঙে পড়ে। তখনই ইট, বালির স্তূপের নীচে চাপা পড়ে যান বেশ কয়েক জন শ্রমিক ও ইঞ্জিনিয়ার। গ্যাসকাটার যন্ত্রের সাহায্য তাঁদের উদ্ধারের চেষ্টা হচ্ছে। পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছে পুলিশ। পুলিশ, ফরাক্কা ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ, জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়েছেন। আহত শ্রমিকদের উদ্ধার করেন।
কলকাতায় মাঝেরহাটে সেতু ভেঙে পড়ে বছর দু’য়েক আগে। চার বছর আগে ভেঙেছে পোস্তার সেতুও। দুই ক্ষেত্রেই নির্মাণকাজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। সম্প্রতি বাঁকুড়ায় গিয়ে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঠিকাদারির কাজে ‘ঘুঘুর বাসা’ ভাঙার ডাক দেন। নির্মাণকাজে কোনও অনিয়ম ধরা পড়লে কড়া ব্যবস্থা নেবেন বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন তিনি। মালদহের সেতু ভেঙে পড়ার ক্ষেত্রেও নির্মাণকাজে কোনও অনিয়ম হয়েছে কি না, সে প্রশ্নও এ দিন উঠেছে। মালদহ জেলার তৃণমূল নেতা দুলাল সরকার বলেন, ‘‘এখানে জাতীয় সড়কে একটা ঘুঘুর বাসা তৈরি হয়ে আছে। এর আগেও মালদহে জাতীয় সড়কের নির্মীয়মাণ সেতুর চাঙড় খসে পড়েছিল। এ বার বৈষ্ণবনগরে দুর্ঘটনা ঘটে একাধিক জন জখম হলেন, দু’জনের প্রাণহানি হল। ভাল করে এই গাফিলতির তদন্ত হওয়া উচিত।’’ মালদহের ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের প্রকল্প আধিকারিক দীনেশ হানসারিয়ার প্রতিক্রিয়া, ‘‘কী হয়েছে, সবই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
নির্মীয়মাণ ফরাক্কা সেতুর ভেঙে পড়া অংশ। নিজস্ব চিত্র
স্থানীয় সূত্রেও সেতুটির কাজে নিয়ম মানা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, স্তম্ভের উপরের দিকের কাজ করার সময় নীচে জাল লাগানোর কথা। বৈষ্ণবনগরের সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক বিশ্বনাথ ঘোষ বলেন, ‘‘ঠিকাদারদের মধ্যে একটা চক্র কাজ করছে। নিয়ম না মেনেই সমস্ত কাজ হচ্ছে। এখানে অনেকেই জড়িত।’’
পুলিশ সুপার অলোকবাবুর বক্তব্য, ‘‘এখন দরকার উদ্ধারের কাজ। তবে নিয়ম মাফিক সব তদন্তই হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy