E-Paper

‘ইন্ডিয়া’ নিয়ে উল্টো প্রচারে ক্ষতি, শুনতে হচ্ছে ইয়েচুরিকে

লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং সংগঠনকে চাঙ্গা করার লক্ষ্যেই সিপিএমের রাজ্য কমিটির বিশেষ বর্ধিত অধিবেশন হচ্ছে হাওড়া জেলা দলের কার্যালয় অনিল বিশ্বাস ভবনে।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০২৩ ০৬:২৮
Sitaram Yechury

সীতারাম ইয়েচুরি। —ফাইল চিত্র।

পরিস্থিতি আন্দাজ করে একেবারে গোড়াতেই ব্যাখ্যা দিয়ে রেখেছিলেন সীতারাম ইয়েচুরি। বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, দেশ রক্ষা করার স্বার্থে জাতীয় স্তরে অ-বিজেপি জোটে একত্রে থাকা মানেই বাংলায় তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা করা নয়। তবু সিপিএমের অন্দরে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’কে কেন্দ্র করে গুঞ্জন থামছে না! দলের নেতৃত্ব যে ব্যাখ্যাই দিন, ‘ইন্ডিয়া’ জোটের জেরে তৃণমূল স্তরে এক দিকে বিজেপি এবং অন্য দিকে তৃণমূল উদ্ভূত পরিস্থিতির ফায়দা তুলতে চাইছে— সাধারণ সম্পাদকের সামনে এমন তথ্যই তুলে ধরছেন সিপিএমের জেলার প্রতিনিধিরা। তাঁদের একাংশের আশঙ্কা, এ সবের জেরে লোকসভা নির্বাচনে জনমত আবার না সেই তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে আড়াআড়ি ভাগ হয়ে যায়!

লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং সংগঠনকে চাঙ্গা করার লক্ষ্যেই সিপিএমের রাজ্য কমিটির বিশেষ বর্ধিত অধিবেশন হচ্ছে হাওড়া জেলা দলের কার্যালয় অনিল বিশ্বাস ভবনে। অধিবেশনের সুচনাতেই শুক্রবার ইয়েচুরি স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, তৃণমূলের অতীতের কারণে বিজেপি-বিরোধিতায় তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা নেই, ভবিষ্যতের জন্যও তাদের উপরে ভরসা করা যায় না। তৃণমূলকে তাঁরা কখনওই বিজেপির বিকল্প মনে করছেন না। কিন্তু ক্ষমতা থেকে বিজেপিকে দূরে রাখতে যারা সহযোগিতায় এগিয়ে আসবে, তাদের ফিরিয়ে দেওয়া যায় না। এই জন্যই সর্বভারতীয় স্তরে ‘ইন্ডিয়া’ জোট। বাংলায় বিজেপির পাশাপাশি তৃণমূলের বিরুদ্ধেও সিপিএমের লড়াই চলবে। দলীয় সূত্রের খবর, শুক্রবার ও শনিবারের আলোচনায় ইয়েচুরির ওই ব্যাখ্যা নিয়ে প্রশ্ন না তুলেও একাধিক জেলার প্রতিনিধি জানিয়েছেন, সাধারণ মানুষ এবং নিচু তলায় দলের কর্মী-সমর্থকদের একাংশের মধ্যে ‘বিভ্রান্তি’ থেকেই যাচ্ছে।

সূত্রের খবর, উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের কিছু জেলার প্রতিনিধিরা বর্ধিত অধিবেশনে বলেছেন, ‘ইন্ডিয়া’ জোটের প্রেক্ষিত তাঁরা বুঝতে পারছেন। কিন্তু বিজেপি প্রচার চালাচ্ছে, জাতীয় স্তরে তৃণমূল-সিপিএম একসঙ্গে আছে। তার মানে তলায় তলায় তাদের ‘বোঝাপড়া’ আছে। শাসক তৃণমূলকে হারাতে হলে তাই বিজেপিকেই সমর্থন করতে হবে। আবার তৃণমূল বলছে, বাংলায় ‘ইন্ডিয়া’ মানে তারাই। বিজেপির মোকাবিলায় তারাই প্রধান শক্তি। এই দু’দিকের টানাটানিতে বামেদের ক্ষতি হচ্ছে বলে ওই নেতাদের মত। প্রতিটি জেলা থেকে প্রতিনিধিদের দু’দফায় বলার সুযোগ দেওয়া হয়েছে বর্ধিত অধিবেশনে। সেই পর্ব মিটে গিয়েছে দ্বিতীয় দিনেই। সমাপ্তি-পর্বে আজ, রবিবার জবাবি বক্তৃতা করার কথা দলের সাধারণ সম্পাদক ইয়েচুরি ও রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের।

অধিবেশনে বক্তব্য সম্পূর্ণ হওয়ার পরে দলীয় সংগঠন, গণ ফ্রন্টের সংগঠন, আন্দোলন এবং রাজনৈতিক কৌশল— এই চারটি বিষয় বেছে নিয়ে এ দিন রাতে প্রতিনি‌ধিদের আলাদা দলে ভাগ করে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে দেওয়া হয়েছিল। প্রতিটি দলের সঙ্গে ছিলেন সেলিম, সূর্যকান্ত মিশ্র, রামচন্দ্র ডোম, শ্রীদীপ ভট্টাচার্য-সহ দলের শীর্ষ নেতারা। ওই আলোচনাগুলির নির্যাস তুলে এনেও অধিবেশনের শেষ পর্বে বার্তা দেওয়ার কথা দলীয় নেতৃত্বের। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘‘এখন ‘ইন্ডিয়া’ নিয়ে দলের মধ্যে তেমন দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নেই। তবে বিজেপি ও তৃণমূলের একটা প্রচার কাজ করছে। সংগঠন শক্তিশালী করতে না পারলে কোনও প্রচারেরই মোকাবিলা করা কঠিন।’’ বর্ধিত অধিবেশনেই রাজ্য কমিটিতে তিন জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে বলে সিপিএম সূত্রের ইঙ্গিত।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Sitaram Yechury CPM

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy