Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

সরকারের সঙ্গে এ বার সম্মুখ-সমরে পরিবহণ ইউনিয়ন

রাজ্য সরকারের উপরে চাপ বাড়িয়ে আরও সংঘাতের পথে গেল পরিবহণ ইউনিয়নগুলি। ‘পুলিশি জুলুম’ এবং ভাড়া বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকারি ভূমিকা-সহ সার্বিক ভাবে রাজ্য পরিবহণ ক্ষেত্রে নৈরাজ্যের প্রতিবাদে আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর এ রাজ্যে পরিবহণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে সিটু, এআইটিইউসি, আইএনটিইউসি-সহ বিরোধী বাম ও অ-বাম সব ক’টি পরিবহণ ইউনিয়ন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:১০
Share: Save:

রাজ্য সরকারের উপরে চাপ বাড়িয়ে আরও সংঘাতের পথে গেল পরিবহণ ইউনিয়নগুলি। ‘পুলিশি জুলুম’ এবং ভাড়া বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকারি ভূমিকা-সহ সার্বিক ভাবে রাজ্য পরিবহণ ক্ষেত্রে নৈরাজ্যের প্রতিবাদে আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর এ রাজ্যে পরিবহণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে সিটু, এআইটিইউসি, আইএনটিইউসি-সহ বিরোধী বাম ও অ-বাম সব ক’টি পরিবহণ ইউনিয়ন। তার এক দিন আগে, ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে লাগাতার ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন ট্যাক্সিচালকেরা। উৎসবের মরসুমে ধর্মঘট ডেকে ইউনিয়ন নেতারা জানিয়ে দিয়েছেন, এর পরে সরকারকেই সমাধানসূত্র বার করতে হবে।

সরকার যে সমাধানসূত্র বার করার বদলে সংঘাতের পথেই যেতে চায়, তার ইঙ্গিত দিয়েছেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। ধর্মঘট ব্যর্থ করতে শাসক দল রাস্তায় নামবে বলে পাল্টা হুমকিও দিয়েছেন তিনি। বুধবার মদনবাবুর বক্তব্য, “আজকের কর্মসূচিতেই পরিবহণ শ্রমিকেরা সাড়া দেননি। ১৯ তারিখও যাতে তাঁরা সাড়া না-দেন, সে জন্য আমরা দলগত ভাবে পথে নামব।” একই সঙ্গে মদনবাবুর পাল্টা হুঁশিয়ারি, “চৌরঙ্গি এবং বসিরহাটের উপনির্বাচনেও মানুষ বিরোধীদের এই নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টার জবাব দেবেন।”

তবে সরকার অনড় না-থেকে আলোচনায় বসলে শ্রমিক সংগঠনগুলিও যে সুর নরম করবে, তার ইঙ্গিত অবশ্য বুধবার দিয়েছেন সিটু নেতারা। সিটু নেতা অনাদি সাহু বলেন, “আমাদের কর্মসূচি পরে আবার বিস্তারিত জানিয়ে দেওয়া হবে। তার মধ্যে সরকার যদি কোনও আলোচনা করে সমাধান বার করতে যায়, তা হলে পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” অনাদিবাবুর বক্তব্যেই পরিষ্কার, বিশ্বকর্মা পুজোর পরে উৎসবের ভরা মরসুমে ধর্মঘট ডেকে চাপ বাড়িয়ে সরকারকে তাঁরা আলোচনায় বসাতে চান। কিন্তু সরকার কড়া হলে যে শ্রমিক সংগঠনগুলি আন্দোলন আরও তীব্র করবে, তারও ইঙ্গিত দিয়ে সিটু নেতা শ্যামল চক্রবর্তী বলেন, “ধর্মঘটের দিন যদি কোনও শ্রমিকের গায়ে হাত পড়ে, তা হলে কিন্তু রাজ্যে আগুন জ্বলবে।”

৭ অগস্ট থেকে পুলিশি জুলুমের প্রতিবাদে আন্দোলনে নামেন ট্যাক্সিচালকেরা। ওই আন্দোলনে ধৃত ট্যাক্সিচালকদের উপর থেকে মামলা তুলে নেওয়ার দাবিতে এর পরে দফায় দফায় আন্দোলন করছেন ট্যাক্সিচালকেরা। তারই অঙ্গ হিসেবে বুধবার কলেজ স্কোয়ার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিল করেন বেসরকারি বাস, ট্যাক্সি ও অটোচালকেরা। সিপিএমের সিটু, সিপিআইয়ের এআইটিইউসি, কংগ্রেসের আইএনটিইউসি, নকশালপন্থী এআইটিটিইউসি বা সঙ্ঘ পরিবার প্রভাবিত বিএমএস সব ক’টি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নের পরিবহণ শাখাই এ দিনের মিছিলে সামিল হয়। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে মিছিল আটকে দেয় পুলিশ। সেখানে পরিবহণ ইউনিয়নের নেতারা ঘোষণা করেন, তাঁরা ধর্মঘটে যাচ্ছেন। এআইটিইউসি-র ট্যাক্সিচালক সংগঠনের নেতা নওলকিশোর শ্রীবাস্তব বলেন, “সারদায় সিবিআই নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জেরবার। পরিবহণমন্ত্রী হাসপাতালে ঢুকে যাচ্ছেন। ট্যাক্সিচালকেরা রাস্তায় গাড়ি বার করে সমস্যায় পড়ছেন। এই পরিস্থিতিতে ১৮ তারিখ থেকে আমরা লাগাতার ধর্মঘটে যাচ্ছি।” বিপুল হাততালিতে তাঁর ঘোষণাকে স্বাগত জানান জমায়েতে উপস্থিত বিভিন্ন ক্ষেত্রের পরিবহণকর্মীরা।

আজ, বৃহস্পতিবার শাসক দলের শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বিরোধীদের আন্দোলনের পাল্টা মিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছে। ফলে, বুধবারের মতো আজ, বৃহস্পতিবারও ফের বিকেলের একটি বড় সময়ে যাত্রীদের ভোগান্তির আশঙ্কা রয়েছে।

এ দিন অন্য দিনের মতো ট্যাক্সি না-চললেও শহরের কয়েকটি এলাকা ছাড়া অন্যত্র বাস-মিনিবাস-অটো পর্যাপ্ত পরিমাণেই ছিল। ফলে সকাল থেকে হাওড়া, শিয়ালদহ স্টেশন এবং বিমানবন্দরে নামা যাত্রীরা সমস্যায় পড়লেও সার্বিক ভাবে নিত্যযাত্রীদের তেমন দুর্ভোগ পোহাতে হয়নি। বিকেলে অবশ্য ট্যাক্সি ও অন্যান্য পরিবহণকর্মীদের মিছিল, রানি রাসমণি রোডে রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটির বিক্ষোভ সমাবেশের জেরে সন্ধ্যা পর্যন্ত যানজটে আটকে যায় জওহরলাল নেহরু রোড, মেয়ো রোড, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, লেনিন সরণি, এস এন ব্যানার্জি রোড-সহ বিস্তীর্ণ এলাকা। সাড়ে ছ’টার পর থেকে ওই সব রাস্তায় ফের যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে সমাবেশের পরে বিরোধী পরিবহণ ইউনিয়নগুলির নেতারা রাজ্যের সার্বিক পরিবহণের বেহাল দশা নিয়ে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর কাছে স্মারকলিপি দেন। ইউনিয়ন-নেতাদের বক্তব্য, “রাজ্যপাল আমাদের বক্তব্য শুনেছেন। দু’এক দিনের মধ্যে সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলবেন বলে আশ্বাসও দিয়েছেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE