প্রতীকী ছবি।
সন্ধ্যায় ভাগ্নির বিয়েতে সম্প্রদান করতে যাবেন, ঠিক করেছিলেন কলকাতার এক নেতা। সম্মেলন তো এক বেলায় শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু নাটক গড়াল এমন দিকে যে, বিয়ে মাথায় উঠল! দলের সিদ্ধান্ত শিরোধার্য করে থেকে যেতে হল সম্মেলনে। সম্মেলন মানে একেবারে মহাসম্মেলন! যেখানে জেলা কমিটি এবং সম্পাদক বাছতে ভোট ও গণনা চলল ভোর সাড়ে চারটে পর্যন্ত!
সাম্প্রতিক কালের মধ্যে নজিরবিহীন ঘটনা ঘটিয়ে সিপিএমের কলকাতা জেলা সম্মেলনে ভোটাভুটি দলের বিরাট অংশের মধ্যেই বিস্ময় তৈরি করেছে। আলিমুদ্দিনের নাকের ডগায় বসে প্রাক্তন মন্ত্রী মানব মুখোপাধ্যায়কে ৩২-২৬ ভোটে হারিয়ে কলকাতার নতুন জেলা সম্পাদক হয়ে কল্লোল মজুমদার জোট-বিরোধিতার লাইনকে জয়ী করেছেন। কিন্তু তার চেয়েও বড় বিস্ময়, পুরভোটেও রুখে দাঁড়ানোর শক্তিহীন একটা জেলায় নেতা বাছতে যে জীবনীশক্তি এবং উৎসাহ খরচ হল, তার ১০%-ও সিপিএম সাধারণ নির্বাচনের দিন ব্যয় করতে পারলে তাদের এত দুরবস্থা তো হয় না!
ভোটাভুটি নিয়ে নাটক এবং উত্তেজনার আড়ালেই একটা উল্লেখযোগ্য ঘটনা অবশ্য ঘটে গিয়েছে কলকাতা সিপিএমে। এই শহরের বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘ কালের দাপুটে নেতা বলে যাঁরা পরিচিত ছিলেন, সেই দিলীপ সেন, রাজদেও গোয়ালা, আনোয়ারা মির্জা, পল্টু রায়চৌধুরী, অসিতাঙ্গ গঙ্গোপাধ্যায়, খোকন মজুমদারদের বয়সের কারণ দেখিয়ে এ বার জেলা কমিটি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এক ধাক্কায় বাদ গিয়েছেন আগের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর ৮ জন। এমনকী, বিদায়ী জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ও কমিটিতে নেই। নতুন মুখ হিসাবে ধ্রুবজ্যোতি চক্রবর্তী, ইন্দ্রজিৎ ঘোষ, সৌম্যজিৎ রজক, কলতান দাশগুপ্ত, প্রতীপ দাশগুপ্ত, রাজেন্দ্র প্রসাদ, সাহানা ভাদুড়ি, রীতা সেন চৌধুরীদের এনে কমিটির গড় বয়স কমিয়ে ফেলা হয়েছে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘‘কল্লোল একটা তরুণ টিম পেয়েছেন। যাদের নিয়ে দলকে আন্দোলনে রাখা যাবে।’’
আরও পড়ুন:
‘অবাধ’ ভোটে বিরোধী খাতায় ০, ২, ৪, ৫, ৬
মমতার সফরে গোলমাল হোক, চাইছেন না গুরুঙ্গও
নেতারা যা-ই বলুন, কলকাতার ঘটনাপ্রবাহে দলের অনেকেই ক্ষুব্ধ। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর তিন সদস্য মহম্মদ সেলিম, সুজন চক্রবর্তী ও রবীন দেবের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে তিন নেতাই দফায় দফায় হাজির ছিলেন।
সিপিএম সূত্রের খবর, রবিবার রাতে প্রথমে সম্মেলনের প্রতিনিধিদের ৫৬% সমর্থন পেয়ে নির্বাচিত হয় ‘অফিসিয়াল প্যানেল’ই। তার পরে ৬০ জনের ওই জেলা কমিটিতে নতুন সম্পাদক হিসাবে মানববাবুর নাম প্রস্তাব করেন সিটুর রাজ্য সম্পাদক অনাদি সাহু। আর কল্লোলের নামে প্রস্তাব আনেন আর এক প্রাক্তন মন্ত্রী দেবেশ দাস। জেলা কমিটির এক জন ভোটে অনুপস্থিত, এক জন ভোটদানে বিরত ছিলেন। বাকিদের মধ্যে কল্লোলের পক্ষে রায় হয় ৩২-২৬। দলের ভিতরে-বাইরে কেউ কেউ কলকাতার ঘটনার পরে বলতে শুরু করেছেন, বঙ্গ সিপিএমের মধ্যেও জোট-বিরোধিতার স্বর এখন স্পষ্ট হয়ে গেল!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy