তৃণমূল নেতা শেখ শাজাহানের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ। —নিজস্ব চিত্র।
তৃণমূল নেতা শেখ শাজাহানের গ্রেফতারির দাবিতে ফুঁসছে গোটা সন্দেশখালি।ভোটের আগে থেকেই শাজাহান বাহিনীর ‘অত্যাচারে’ ছাইচাপা আগুন জ্বলছিল এলাকায়। রাজনৈতিক সংঘর্ষে বিজেপি কর্মী খুনের পর, তা আগ্নেয়গিরিতে পরিণত হয়েছে। যে কোনও সময়ে মানুষের এই ক্ষোভ ফেটে পড়তে পারে। এমন পরিস্থিতিই এখন উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালিতে।
গত শনিবার রাতে রাজনৈতিক সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে সন্দেশখালির ভাঙ্গিপাড়া। ওই সংঘর্ষে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানায় পুলিশ। বিজেপি-র প্রদীপ মণ্ডল, সুকান্ত মণ্ডল এবং তৃণমূলের কায়ুম মোল্লা নিহত হন। হাটগাছির প্রদীপও সুকান্ত মণ্ডলের খুনের ঘটনায় অভিযোগের আঙুল উঠেছে শাজাহান বাহিনীর দিকেই। এখনও নিখোঁজ বিজেপি কর্মী দেবদাস মণ্ডল। নিহতদের পরিবারগুলির অভিযোগ, ঘর থেকে তাঁদের টেনে নিয়ে গিয়ে খুন করেছে শাজাহানের লোকজন!
তবে, বিজেপি-তৃণমূল রাজনৈতিক টানাপড়েন নিয়েই শুধু উত্তপ্ত নয় সন্দেশখালি। ওই এলাকায় বেশিরভাগ মানুষই ভেড়ির ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। অভিযোগ, সেই ব্যবসার টাকার ভাগ না মিললেশাজাহানের লোকজন এলাকার মানুষের উপর অত্যাচার করে। হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি বাড়িঘর ভাঙচুর করাও এই এলাকায় নিত্যদিনের ব্যাপার।
আরও পড়ুন: দিল্লির নজরে বাংলা, কেশরীর রিপোর্ট নিলেন মোদী, শাহ-ডোভাল বৈঠকেও হিংসা নিয়ে কথা
সিপিএম আমলে উত্থান এই শাজাহানের। পালাবদলের পরেও তাঁর একই রকম ভাবে দাপট রয়েছে তৃণমূল আমলেও। কার্যত ওই এলাকার বেতাজ বাদশা শাজাহান। ভেড়ি ছাড়াও, সম্প্রতি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশনিয়ে গ্রামবাসীদের মধ্যে একটা ক্ষোভ রয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, এলাকার দখল রাখতে শাজাহান রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিচ্ছে। ওর দলে রোহিঙ্গারাও রয়েছে। নিহত বিজেপি কর্মী প্রদীপ মণ্ডলের ভাই সন্দীপ যেমন বললেন, “শাজাহানের সঙ্গে অত্যাধুনিক অস্ত্র এবং রোহিঙ্গারা থাকে। কাদের মোল্লা, জিয়াউদ্দিনদেরা বাড়ি থেকে তাড়িয়ে নিয়ে গিয়ে খুন করে আমার দাদাকে। পুলিশ নীরব দর্শক হিসবে দাঁড়িয়ে ছিল। পায়ে ধরে ছিলাম, ওরা বলল, উপর থেকে অর্ডার নেই।আমরা কিছু করতে পারব না।”
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ, ভেড়ি দখল-সহ শাজাহানের নানা অত্যাচার থেকে ‘মুক্তি’পেতে তাই এখন অনেকেই বিজেপি-র ছাতার তলায় আসতে চাইছেন। এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করছে বিজেপি-ও। চলছে মেরুকরণের চেষ্টা। গ্রামবাসীদের দাবি, সরবেড়িয়াতে রোহিঙ্গারা রয়েছে। একই ভাবে বারুইপুরে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া নিয়েও রাজনৈতিক মহলে নানা প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছিল। অদৌ ওই এলাকায় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের মতো কোনও ঘটনা ঘটেছে কিনা, তা অবশ্য স্পষ্ট নয়। পুলিশ-প্রশাসনের কাছেও তেমন কোনও খবর নেই। কিন্তু গ্রামবাসীদের মুখে মুখে ঘুরছে এ কথা।
হাটগাছিয়ায় নিহত প্রদীপ মণ্ডলের বাড়ির সামনে থেকে উদ্ধার হয় এই গুলির খোল। —নিজস্ব চিত্র।
হাটগাছির বাসিন্দাদের এখন একটাই দাবি, অবিলম্বে শেখ শাজাহান-সহ তাঁরশাগরেদদের গ্রেফতার করতে হবে। শনিবার খুনের ঘটনায় ৩টি এফআইআর দায়ের হয়েছে। প্রদীপ এবং সুকান্তের পরিবারের অভিযোগপত্রে নাম রয়েছে শাজাহানের। আর একটি অভিযোগ করা হয়েছে নিখোঁজ দেবদাস মণ্ডলের পরিবারের তরফে। অন্য এফআইআরটি করেছেন রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনায় মৃত তৃণমূল কর্মী কায়ুম মোল্লার পরিবার। সেই এফআইআরে বিজেপি নেতাদের নাম রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
আরও পড়ুন: দলীয় কর্মীদের খুনের প্রতিবাদে বসিরহাট বন্ধে দফায় দফায় রেল, রাস্তা অবরোধ বিজেপির
সোমবার ঘটনাস্থলে পৌঁছয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারাও (আইবি)। তাঁরা এলাকা থেকে সবিস্তার খোঁজখবর করেন। ইতিমধ্যেই সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে কড়া অবস্থান নিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। এ নিয়ে রাজ্যকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে বলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করে ঘটনা সম্পর্কে জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। তিনি দেখা করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গেও।
রবিবার মালঞ্চর সামনে পুলিশি বাধার মুখে পড়েন বিজেপি নেতৃত্বরা। —নিজস্ব চিত্র।
রাজ্যের তরফে দাবি করা হয়েছে, সন্দেশখালির ঘটনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যাঁর বিরুদ্ধে এত অভিযোগ, তৃণমূলের সেই নেতা শেখ শাজাহান কি গ্রেফতার হবে, সন্দেশখালিজুড়ে এখন তাই নিয়েই জোর জল্পনা।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy