Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Amartya Sen

আইনি প্রক্রিয়ার হুঁশিয়ারি অমর্ত্যকে

উপাচার্যের গত কাল দাবি ছিল, নোবেল পুরস্কারের দলিল অনুযায়ী ওই শিরোপা অমর্ত্য পাননি। কারণ, যে পাঁচটি বিষয়ে তা দেওয়া হয়, তার মধ্যে অর্থনীতি নেই।

শান্তিনিকেতনের বাড়িতে অমর্ত্য সেন। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

শান্তিনিকেতনের বাড়িতে অমর্ত্য সেন। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

নিজস্ব সংবাদদাতা
শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০২৩ ০৭:৫২
Share: Save:

বেআইনি ভাবে ১৩ ডেসিমেল জমি দখল করে রয়েছেন অমর্ত্য সেন— এই অভিযোগ তুলে তা ফেরত চেয়ে মঙ্গলবার বিশ্বখ্যাত অর্থনীতিবিদকে চিঠি দিয়েছিলেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। তার তিন দিনের মাথায় আরও একটি চিঠি গেল তাঁর বাড়ি ‘প্রতীচী’তে। সেখানে বিশ্বভারতীর তরফে আইনি পদক্ষেপের ইঙ্গিতও দেওয়া হল।

চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আপনি (অমর্ত্য সেন) ওই জমি যত দ্রুত সম্ভব বিশ্বভারতীকে ফিরিয়ে দিন। না হলে দেশের আইন আপনাকে এবং বিশ্বভারতী, যাকে আপনি খুব ভালবাসেন, দু’পক্ষকেই বিড়ম্বনায় ফেলবে। আপনি জানেন, অবৈধ ভাবে দখল করে রাখা জমি পুনরুদ্ধারে দেশে নির্দিষ্ট আইনি প্রক্রিয়া রয়েছে।’

এই জমি-বিতর্ক প্রসঙ্গে অমর্ত্য আগেই জানিয়েছেন, ‘‘আদালতে যাওয়ার কোনও রকম লোভ আমার নেই। তবে আমার উকিলের চিঠি এক বার গিয়েছে। আবার এক বার নিশ্চয়ই যাবে।’’ শুক্রবার সকালেও তিনি বলেন, ‘‘আমি আদালতে যাচ্ছি না। সেটা ভয়ে যাচ্ছি না, এটা যদি উপাচার্য মনে করে থাকেন, তা হলে তাঁর চিন্তাশক্তি নিয়ে আমাদের ভাবার কারণ আছে।’’ জমি বিতর্ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘উপাচার্য যদি মাথা খাটিয়ে নতুন তথ্য বার করে থাকেন, তা হলে সেটি কোথা থেকে এল, তার জবাব তাঁকেই দিতে হবে।’’ তবে এ দিন বিশ্বভারতী নতুন করে চিঠি দেওয়ার পরে সে বিষয়ে ফের মন্তব্যের জন্য অমর্ত্যের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে, তা আর করা যায়নি।

জমি নিয়ে বিশ্বভারতীর উপাচার্যের বার বার আক্রমণের মুখে এ দিন ফের হাসির ছলে অমর্ত্য বলেন, ‘‘আমিও তো বলতে পারি, উপাচার্যের বাড়িতে গিয়ে, এটা উপাচার্যের বাড়ি নয়, এখানে আমার ছোট মামা থাকতেন।’’

জমি-বিতর্ক নিয়ে এর মধ্যে উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী বলেছেন, ‘‘জমি দখল পুরনো বিষয়।...আমাদের অভিযোগ শুধু এই যে, যে দলিলে ওঁকে জমি দেওয়া হয়েছিল, সেখানে স্পষ্ট ১.২৫ একর জমি দেওয়ার কথা লেখা আছে। কিন্তু উনি ১.৩৮ একর নথিভুক্ত করেছেন। ১৩ ডেসিমেল জমি বেশি আছে।’’ এ বিষয়ে এ দিন নতুন করে চিঠি পাওয়ার আগে নোবেলজয়ীর বক্তব্য, ‘‘যখন জমি কেনা হয়েছিল, আমরা তখন কিছু পরিমাণে জমি নিয়ে সেটার ব্যবহার করেছি। তা ছাড়া, লিজ়ের বাইরে বেশ কিছু পরিমাণে জমি বাবা কিনেছিলেন। তার পরে বাড়ি তৈরি হয়। আমাদের যা জমি ছিল, তার বাইরে আমাদের যাওয়ার কোনও রকম কারণ ছিল না, এখনও নেই।’’

অমর্ত্য বিশ্ববিখ্যাত অর্থনীতিবিদ, চিন্তাবিদ এবং নমস্য ব্যক্তি হলেও বিশ্বভারতীর উপাচার্য হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি রক্ষা করা তাঁর কর্তব্য বলে দাবি করেন বিদ্যুৎ। কিন্তু এই সবের পিছনে কি ‘রাজনৈতিক ইন্ধন’ রয়েছে? এই প্রশ্নের জবাবে অমর্ত্য বলেন, ‘‘রাজনীতি নিয়ে কোনও কথা বলব না।’’

উপাচার্যের গত কাল দাবি ছিল, নোবেল পুরস্কারের দলিল অনুযায়ী ওই শিরোপা অমর্ত্য পাননি। কারণ, যে পাঁচটি বিষয়ে তা দেওয়া হয়, তার মধ্যে অর্থনীতি নেই। অর্থনীতির এই পুরস্কার সুইডিশ ব্যাঙ্কের টাকায় এবং নোবেলের স্মৃতিতে দেওয়া। যদিও এই পুরস্কার নোবেল কমিটিই ঘোষণা করে এবং তা দেওয়া হয় অন্যান্য বিষয়ের পুরস্কারের সঙ্গেই। তা ছাড়া, দুনিয়া জুড়ে অমর্ত্যের পরিচিতির যা ব্যাপ্তি, তাতে কোনও দিনই তাঁকে নিছক নোবেল পুরস্কারের আলোয় আলোকিত হতে হয়নি বলে মনে করেন প্রবীণ আশ্রমিক থেকে শুরু করে পড়াশোনার জগতের সঙ্গে জড়িত মানুষদের এক বড় অংশ। কিন্তু অমর্ত্যের নোবেল-জয়কে এ দিনও কটাক্ষ করেন উপাচার্য। এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে অমর্ত্যের মন্তব্য, ‘‘আমার কিছুই বলার নেই। উনি (উপাচার্য) যত ইচ্ছা দাবি করে যেতে পারেন।’’

যদিও এই বিতর্কেও রাজনীতির রং লেগেছে। উপাচার্যের সুরেই বিজেপির জাতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ‘‘অমর্ত্য সেন নোবেল পাননি। এটা এখন লোক বলছে। আমি অনেক আগে বলেছিলাম। অর্থনীতিতে নোবেল বলে কিছু হয় না।’’ খয়রাশোলে বীরভূমের সাংসদ শতাব্দী রায়ের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘অর্মত্য সেন বাংলার গর্ব। তিনি জমি দখল করে আছেন! উপাচার্য কি প্রমাণ করতে পেরেছেন?’’ নোবেল-বিতর্কে শতাব্দীর মন্তব্য, ‘‘এটাতে হাসি ছাড়া আর কোনও উত্তর নেই।’’ কলকাতায় মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘আচার্যের উচিত ওঁকে (উপাচার্যকে) তাড়িয়ে দেওয়া।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Amartya Sen Visva Bharati University controversy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE