বিশৃঙ্খলায় রাশ টানতে সংগঠনের সর্ব স্তরে অনুশাসনের কড়া বার্তা দিচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার সেই বার্তাই কাঠামো ধরে নেমে এল ছাত্র সংগঠনেও। শিক্ষাঙ্গনে নৈরাজ্য বন্ধে হুঁশিয়ারি দিলেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) রাজ্য সভানেত্রী জয়া দত্ত। স্বীকার করে নিলেন নিজেদের খামতির কথাও।
জয়ার সাফ কথা, ‘‘অধ্যক্ষদের ঘেরাও করে কোনও ছাত্র আন্দোলন বরদাস্ত করা হবে না। অধ্যক্ষকে ঘেরাও করে, টিভিতে মুখ দেখিয়ে নেতা হওয়া যায় না!” আগামী ২৬ অগস্ট কলকাতায় টিএমসিপি-র প্রতিষ্ঠা দিবসের সমাবেশের প্রস্তুতি হিসাবে সোমবার মেদিনীপুরে এক সভায় সংগঠনের রাজ্য সভানেত্রী বলেছেন, ‘‘মনে রাখতে হবে, আমরা ছাত্রসমাজ এমন কোনও কাজ করব না, যার জন্য দলনেত্রীকে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।”
ছাত্রদের রাজধর্ম শেখাতে কর্মশালার কথাও বলছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘আমি বলব, প্রত্যেকটা কলেজে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কর্মশালা হোক। আমরা তৈরি হই নিজেরা। শিক্ষার কোনও শেষ হয় না। আমরা সব ভাইবোনকে তৈরি করতে পারিনি। তাই ওই ঘটনা ঘটেছে।” ওই ঘটনা বলতে দাঁতন কলেজে ঘেরাওয়ের কথা বলেছেন জয়া। দিন কয়েক আগেই পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতন-২ ব্লকের কাশমূলী গভর্নমেন্ট জেনারেল ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ বাদল জানাকে নিগ্রহের অভিযোগ ওঠে টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে। ঘটনায় টিএমসিপি-র তিন কর্মীকে গ্রেফতারও করে পুলিশ। এর আগে জেলার গড়বেতা, কেশপুরেও কলেজ চত্বরেও গোলমালের ঘটনা ঘটে। নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়ায় টিএমসিপি-র দু’পক্ষ।
মেদিনীপুরে গিয়ে টিএমসিপি সভানেত্রী এ দিন যে বার্তা দিয়েছেন, তা অবশ্যই দলের উচ্চ নেতৃত্বের নির্দেশে। তৃণমূলের মহাসচিব এবং শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘এটাই আমাদের দলের অবস্থান। এই কথাই সংগঠনের সকলকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে যে, বিশৃঙ্খলা বরদাস্ত করা হবে না! এই জন্যই মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের কলেজে গোলমালের পরে ওখানকার ছাত্র সংগঠনের ইউনিট ভেঙে দেওয়া হয়েছে।’’
কিন্তু তৃণমূল নেত্রী নিজে ছাত্রদের শৃঙ্খলারক্ষার বার্তা দেওয়া সত্ত্বেও কেন বারবার ছাত্র সংগঠন ঘেরাওয়ের পথে যাচ্ছে? পরে জয়ার জবাব, ‘‘ওরা প্রথম বা দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। ভুল করলে বারবার বোঝাতে তো হবেই। এক বারে শুদ্ধকরণ তো সম্ভব নয়!’’ তবে বোঝানো সত্ত্বেও ছাত্রদের আচরণ বদল না হলে তা দলনেত্রীকে জানানো হবে বলে জয়া জানিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ছাত্র আন্দোলন মানে যে ঘেরাও নয়, তা নেত্রী স্পষ্ট করে বলেছেন। সে জন্যই বারবার আমরা বোঝানোর চেষ্টা করছি, বিশৃঙ্খলা বা ঘেরাও করে শিক্ষাঙ্গনে আন্দোলন করা যাবে না।’’
জয়া এ দিনের সভায় দলনেত্রীর লড়াইয়ের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েই বলেছেন, “সারা জীবন জয়া দত্ত রাজ্য সভাপতি থাকবে না! তোমরাও রাজ্য সভাপতি হতে পারো। সেই ভাবে নিজেদের গড়ে তোলো। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবন সম্পর্কে জানতে হবে, কেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদ করবে, তা জানতে হবে। ৩৬৫ দিন কলেজ গেটে পরিষেবা দিতে হবে।” তাঁর হুঁশিয়ারি, “জোর করে নেতা হওয়া যায় না! যে কাজ করবে, তার ভিত্তিতে তাকে যোগ্য সম্মান দেওয়া হবে। নেতা হতে গেলে ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে থাকতে হয়। মিছিলে- স্লোগানে থাকতে হয়।” সভায় উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি। নৈরাজ্য বন্ধে অজিতবাবুরও কড়া বার্তা, “আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা কোনও ভাবেই বরদাস্ত হবে না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy