Advertisement
০৫ মে ২০২৪
টেট মামলায় ক্ষুব্ধ কোর্ট

রাজ্য কি বিভ্রান্ত করেছে কেন্দ্রকে

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা টেট নিয়ে রাজ্যের আমলারা কেন্দ্রকে ভুল বুঝিয়েছিলেন কি না, কিছু দিন আগে সেই প্রশ্ন তুলে প্রশাসনকে তীব্র কটাক্ষ করেছিলেন তিনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৪৯
Share: Save:

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা টেট নিয়ে রাজ্যের আমলারা কেন্দ্রকে ভুল বুঝিয়েছিলেন কি না, কিছু দিন আগে সেই প্রশ্ন তুলে প্রশাসনকে তীব্র কটাক্ষ করেছিলেন তিনি। মঙ্গলবার সেই মামলাতেই বিচারপতি চিন্নাস্বামী স্বামীনাথন কারনান ফের প্রশ্ন তুললেন, রাজ্য সরকার কি টেট নিয়ে আর্জিতে বিভ্রান্ত করেছে কেন্দ্রকে?

প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদের ওই নিয়োগ পরীক্ষায় বসার সুযোগ দিতে রাজ্য সরকার গত বছরের গোড়ায় কেন্দ্রের কাছে যে-আবেদন করেছিল, রাজ্যের পক্ষ থেকে এ দিন তার প্রতিলিপি কলকাতা হাইকোর্টে দাখিল করার কথা ছিল। কিন্তু সেটি পেশ করা হয়নি। কী কারণে ওই আবেদনপত্র আদালতে পেশ করা হল না, সেই প্রশ্নও তোলেন বিচারপতি কারনান। তার পরেই তাঁর প্রশ্ন, ‘‘রাজ্য সরকার কি তা হলে কেন্দ্রকে বিভ্রান্ত করার জন্য ওই আবেদন করেছিল?’’ বিচারপতির নির্দেশ, কাল, বৃহস্পতিবারেই আবেদনপত্রটি আদালতে দাখিল করতে হবে।

আগে প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীরাও টেটে বসতে পারতেন। তার পরে সিদ্ধান্ত হয়, শুধু প্রশিক্ষিত প্রার্থীরাই ওই শিক্ষকপদে নিয়োগের পরীক্ষায় বসার সুযোগ পাবেন। আরও কিছু দিন প্রশিক্ষণহীনদের টেটে বসার সুযোগ দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকার গত বছরের গোড়ায় সময়সীমা বাড়ানোর আবেদন করে কেন্দ্রের কাছে। গত বছর ১ এপ্রিল কেন্দ্র সেই আবেদন মঞ্জুর করে। তবে কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়ে দেয়, ২০১৬ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে নিয়োগ শেষ করতে হবে। কিন্তু এখনও সেই নিয়োগ না-হওয়ায় কয়েক জন প্রশিক্ষিত প্রার্থী হাইকোর্টে মামলা করেন। তাঁদের আইনজীবী সৌমেন দত্ত জানান, মামলার আবেদনে বলা হয়েছে, ৩১ মার্চ পেরিয়ে গিয়েছে। নিয়োগ হয়নি। তাই গত বছর ১১ অক্টোবর নেওয়া টেট বাতিল করা হোক।

প্রশিক্ষিত প্রার্থীর ঘাটতি নেই। তবু প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদের প্রাথমিকের নিয়োগ পরীক্ষায় বসার সুযোগ দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকার কেন কেন্দ্রের কাছে সময়সীমা বাড়ানোর আবেদন জানিয়েছিল, আগের দিন শুনানিতে সেই প্রশ্ন তুলেছিল উচ্চ আদালত। রাজ্যের আমলাদের তরফে কেন্দ্রকে ভুল বোঝানোর চেষ্টা হয়েছিল কি না, তখনই সেই বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেন বিচারপতি। শেষ পর্যন্ত প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দেন তিনি। বিচারপতি কারনান এ দিন আরও প্রশ্ন তোলেন, প্রাথমিকে কত শিক্ষকপদ খালি, সেই বিষয়ে রাজ্য সরকার নানা রকম পরিসংখ্যান দাখিল করছে কেন?

জবাব মেলেনি এখনও। কিন্তু নিয়োগ ক্রমশ বিলম্বিত হতে থাকায় শিক্ষা শিবির উদ্বিগ্ন। কারণ, রাজ্যের সর্বত্র প্রাথমিক স্কুলে অসংখ্য শিক্ষকপদ খালি। তাতে পঠনপাঠন মার খাচ্ছে ভীষণ ভাবে। ব্যাপক টানাপড়েনের পরে টেট নেওয়া হলেও তার ফল ঘোষণা আটকেই আছে। মামলার পর মামলায় পিছিয়ে যাচ্ছে নিয়োগ প্রক্রিয়া। নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদের সুযোগ দেওয়ার জন্য কেন্দ্রের তরফে যে-সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে, তা নিয়ে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে মূল মামলার শুনানি চলছে। সেই মামলার নিষ্পত্তি এখনও হয়নি বলে জানান রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের আইনজীবী সুবীর সান্যাল। তিনি আগেই প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে প্রশ্ন তোলেন, মূল মামলার নিষ্পত্তি না-হওয়া সত্ত্বেও নিয়োগে স্থিতাবস্থা জারি করা যায় কী ভাবে? প্রধান বিচারপতি তাঁকে এই প্রশ্ন-সহ লিখিত আবেদন করতে বলেছিলেন। প্রয়োজনে সেই আবেদনের ভিত্তিতে তিনি নির্দেশ দিতে পারেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TET Westbengal govt Central Govt
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE