ফাইল চিত্র।
বিধানসভায় শাসক-বিরোধী জোর তরজার মধ্যেই পাশ হয়ে গেল রাজ্যের নাম বদলের প্রস্তাব। কংগ্রেস বিধায়করা ওয়াকআউট করলেন। বামেদের সংশোধনী খারিজ হয়ে গেল। বিজেপি বিধায়করা বললেন, নাম বদলের প্রস্তাবে কেন্দ্রের সিলমোহর পড়তে দেবেন না তাঁরা। সংখ্যাধিক্যের সুবাদে প্রস্তাব পাশ করাতে অবশ্য কোনও সমস্যা হয়নি সরকারের। তবে অধিবেশন থেকে বেরিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে বিরোধীদের তীব্র আক্রমণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় সোমবার রাজ্যের নাম বদল সংক্রান্ত য়ে প্রস্তাব পাশ হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, বাংলা ভাষায় রাজ্যের নাম হবে ‘বাংলা’। হিন্দিতে হবে ‘বঙ্গাল’। ইংরেজিতে হবে ‘বেঙ্গল’। মুখ্যমন্ত্রী যখন এ প্রসঙ্গে বক্তব্য রাখছিলেন, তখনই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে অধিবেশন। কংগ্রেস বিধায়করা নাম বদলের প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন। তা নিয়ে তুমুল বিতণ্ডা শুরু হয়। শেষে কংগ্রেস সভাকক্ষ থেকে ওয়াকআউট করে বাইরে গিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে।
বামেরাও নাম বদলের প্রস্তাবের বিরোধিতা করছিল। তবে বাম বিধায়করা ওয়াকআউট করেননি। তাঁর সভাকক্ষে থেকে সংশোধনী প্রস্তাব জমা দেন। সে প্রস্তাব বিধানসভায় খারিজ হয়ে যায়। ভোটাভুটিতে স্বাভাবিক ভাবেই শাসক দলের আনা প্রস্তাবের পক্ষেই বেশি ভোট পড়ে।
আরও পড়ুন, নামে আসে যায়, বাংলা নিয়ে এখন তর্কের তুফান
রাজ্যের নাম বদলের প্রস্তাব বিধানসভায় পাশ হওয়ার পর বিধানসভার প্রেস কর্নারে সাংবাদিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘আজ রাজ্যের জন্য ঐতিহাসিক দিন।’’ যাঁরা নাম বদলের প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছেন, তাঁদের ধন্যবাদ জানান মুখ্যমন্ত্রী। এর পর তিনি বলেন, ‘‘যাঁরা নাম বদলের প্রস্তাবের বিরোধিতা করলেন, তাঁদের জন্য আমার কোনও দুঃখ নেই। ইতিহাস তাঁদের ক্ষমা করবে না।’’ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘ওঁরা নিজেরা নাম বদলের চেষ্টা করেছিলেন। পারেননি। তাই এখন আমাদেরও করতে দেবেন না। আঙুর ফল টক।’’
রাজ্যের নাম বদলের প্রস্তাব শুধু রাজ্য বিধানসভায় পাশ হলেও কিন্তু প্রক্রিয়া শেষ হয় না। বিধানসভার সিদ্ধান্তের কতা কেন্দ্রীয় সরকারকে জানাতে হয়। কেন্দ্র তার পর সংসদে সেই প্রস্তাব পেশ করে। সেখানে প্রস্তাব পাশ হওয়ার পর রাষ্ট্রপতির কাছে তা পাঠানো হয় চূড়ান্ত সিলমোহরের জন্য। রাষ্ট্রপতি সই করলে তবেই নাম বদলের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হয়। তবে মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভার প্রেস কর্নার থেকে এ দিনই ঘোষণা করে দিয়েচেন যে এ বার থেকে পশ্চিমবঙ্গ নয়, বাংলা নামটাই ব্যবহার করবেন তিনি। কেন্দ্র যাতে দ্রুত নাম বদলের প্রক্রিয়া শেষ করে, তার জন্যও তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে কথা বলবেন বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান। সাংবাদিক সম্মেলন শেষ করার পর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফোনে কথা বলেচেন বলেও জানা গিয়েছে। রাজনাথকে মমতা বলেছেন, ‘‘রাজ্যের নাম বদলের প্রক্রিয়া দ্রুত সেষ করুন। এটা বাংলার আবেগের বিষয়।’’ তবে কেন্দ্রের তরফে থেকে কী আশ্বাস মিলেছে তা এখনও জানা যায়নি।
এ দিনের সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী অন্য বেশ কয়েকটি রাজ্যের এবং বড় শহরের নাম বদলের উদাহরণ তুলে ধরেন। ভাষার সঙ্গে সামঞ্চস্য রাখতে ‘বাংলা’ নামটিই এ রাজ্যের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত বলে তিনি মন্তব্য করেন। দিল্লিতে কিছু দিন আগে বিভিন্ন রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কেন্দ্রের বৈঠকের প্রসঙ্গও এ দিন ফের টেনে আনেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যের নাম যেহেতু ওয়েস্ট বেঙ্গল (ডব্লিউ দিয়ে শুরু), তাই শেষের দিকে আমাদের বলতে দেওয়া হয়। দিল্লিতে মিটিং করতে গিয়ে দেখলাম, পঞ্জাবের উপমুখ্যমন্ত্রীকেও বলার সুযোগ দিচ্ছে। কিন্তু আমাকে দিচ্ছে না।’’ নাম বদলের পর যেহেতু রাজ্যের নাম ইংরেজি ‘বি’ অক্ষর দিয়ে শুরু হবে, সেহেতু এ রাজ্যকে আর বঞ্চনার শিকার হতে হবে না বলে মুখ্যমন্ত্রী মনে করছেন।
বিরোধী দলগুলি নাম পরিবর্তনের বিরোধিতা করলেও, কংগ্রেস বিধায়ক তথা পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান মানস ভুঁইয়াকে কিন্তু অন্য রকম ভূমিকা নিতে দেখা গিয়েছে। কংগ্রেস বিধায়করা বিধানসভা থেকে ওয়াকআউট করলেও, মানস ভুঁইয়া সভাকক্ষ ছাড়েননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy