২ সেপ্টেম্বর, কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠনগুলির ডাকা সাধারণ ধর্মঘটের দিন রাজ্য সরকারি কর্মীদের ছুটির আবেদন গ্রাহ্য হবে না বলে বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে আগেই। এ বার আরও এক ধাপ এগোল রাজ্য। ফের একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ধর্মঘটের আগে-পরে ছুটি নিয়ে টানা অবকাশ যাপনের রাস্তা বন্ধ করতে চাইল তারা। অর্থ দফতরের জারি করা ওই বিজ্ঞপ্তির সারমর্ম হল, ধর্মঘটের আগের দিন, অর্থাৎ ১ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবারও কোনও অজুহাতে ছুটি মিলবে না। একই ভাবে শনি ও রবিবার সপ্তাহান্তিক ছুটির পরে সোমবার, ৫ সেপ্টেম্বর হাজিরা বাধ্যতামূলক। এর নড়চড় হলেই বেতন কাটার পাশাপাশি চাকরি জীবন থেকে এক দিন কমে যাবে।
রাজ্য সরকারি কর্মীদের একটা বড় অংশের মধ্যে এই বিজ্ঞপ্তির বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছে। কোঅর্ডিনেশন কমিটির নেতা মনোজ গুহর মন্তব্য, ‘‘সরকার ভয় পেয়েই এ কাজ করেছে। হুমকি দিয়ে কর্মচারীদের দমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।’’ আইএনটিইউসি অনুমোদিত কনফেডারেশন অব স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ-এর নেতা মলয় মুখোপাধ্যায়ের মতে, সরকারের এই কাজ নজিরবিহীন স্বৈরতান্ত্রিক মানসিকতার নিদর্শন।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ধমর্ঘট নিয়ে তাঁর কড়া অবস্থানের কথা এ দিন আরও এক বার স্পষ্ট করে দিয়েছেন। এ দিন বিধানসভার বাইরে তিনি বলেন, ‘‘ধর্মঘট-সংস্কৃতি আমরা বরদাস্ত করব না। এতে রাজ্যের কয়েক হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ক্ষতি হয়।’’ সপ্তাহের শেষ কাজের দিনে ডাকা এই ধরনের ধর্মঘট তাঁর কথায়, ‘‘ছুটি (ক্যাজুয়াল লিভ) নেওয়ার ধর্মঘট।’’ রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তার মতে, কেন অর্থ দফতর নজিরবিহীন ভাবে দ্বিতীয় বিজ্ঞপ্তি জারি করে টানা ছুটি নেওয়া আটকাতে চাইছে তা মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের এই মন্তব্যেই পরিষ্কার।
ধর্মঘট ডাকার জন্য বিরোধীদের এক হাত নেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘‘হেরে গিয়েও এদের শিক্ষা হয় না। শুধু সুযোগ খোঁজে ধর্মঘট ডাকার। কিন্তু প্রতি বছর কয়েকটি করে ধর্মঘট ডাকা হচ্ছে, যা কর্মনাশা। এরা পশ্চিমবঙ্গকে পিছিয়ে দিতে চাইছে।’’ পাশাপাশি ধর্মঘটের দিন দোকান-বাজার খুলে রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন মমতা। বাস-ট্যাক্সিও রাস্তায় নামাতে বলেছেন। তাঁর আশ্বাস, ‘‘কোনও ক্ষতি হলে সরকার ক্ষতিপূরণ দেবে।’’ ২ সেপ্টেম্বর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখার জন্য রেলের চারটি অঞ্চলের জেনারেল ম্যানেজারদের অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব মলয় দে। ওই দিন ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখার জন্য রাজ্য প্রশাসনের তরফে রেল কর্তৃপক্ষকে সব রকম সহযোগিতার আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি।
বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, ধমর্ঘটের বিরোধিতা করে মমতা আসলে কেন্দ্রীয় সরকারেরই পাশে দাঁড়াচ্ছেন। কারণ, কেন্দ্রের বঞ্চনার প্রতিবাদেই শ্রমিক সংগঠনগুলির এই ধর্মঘট। এ দিন এই প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী জানান, তাঁর সরকারও কেন্দ্রের অনেক নীতির বিরুদ্ধে। শ্রমিকদের অনেক দাবিও তিনি সমর্থন করেন। কিন্তু তাঁর যুক্তি, ‘‘দাবির প্রতি সমর্থন মানেই ধমর্ঘটকে সমর্থন করা নয়। প্রথম থেকেই আমরা ধমর্ঘটের বিরুদ্ধে।’’
ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ধর্মঘটের দিন সরকারি অফিস খোলা রাখতে অনমনীয় মনোভাব দেখিয়েছেন মমতা। এমনও হয়েছে ধর্মঘটের আগের দিন মহাকরণ, নবান্ন-সহ বিভিন্ন অফিসে রাত্রিবাস করেছেন কর্মীরা। কিন্তু অর্থ দফতরের জারি করা দ্বিতীয় বিজ্ঞপ্তিটি নিয়ে কর্মচারীদের একাংশের মধ্যে এ দিন ক্ষোভ দেখা গিয়েছে। তৃণমূল প্রভাবিত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের সদস্যেরাও বেশ অস্বস্তিতে। যদিও ওই সংগঠনের অন্যতম আহ্বায়ক সৌম্য বিশ্বাস এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে রাজি হননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy