Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বিজ্ঞাপনে চাই মমতার ছবি, সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য

সে দিন আর নেই! মাস খানেক আগেও মুখ্যমন্ত্রীর ছবি দেওয়া বিজ্ঞাপন হামেশাই দেখা যেত সংবাদমাধ্যমে। এখন সরকারি বিজ্ঞাপনে সার্বিক ভাবে অনেকটা ভাটা পড়েছে। তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের একাংশের দাবি, সরকারি বিজ্ঞাপনে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও ভারতের প্রধান বিচারপতি ছাড়া আর কারও ছবি থাকবে না— সুপ্রিম কোর্টের এই রায় তার অন্যতম কারণ।

দেবজিৎ ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৫ ০৩:২১
Share: Save:

সে দিন আর নেই!

মাস খানেক আগেও মুখ্যমন্ত্রীর ছবি দেওয়া বিজ্ঞাপন হামেশাই দেখা যেত সংবাদমাধ্যমে। এখন সরকারি বিজ্ঞাপনে সার্বিক ভাবে অনেকটা ভাটা পড়েছে। তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের একাংশের দাবি, সরকারি বিজ্ঞাপনে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও ভারতের প্রধান বিচারপতি ছাড়া আর কারও ছবি থাকবে না— সুপ্রিম কোর্টের এই রায় তার অন্যতম কারণ। তাই আগের ‘সুদিন’ ফিরিয়ে আনতে ওই নির্দেশ পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে রাজ্য সরকার।

নবান্নের খবর, ক’দিন আগেই দিল্লির রেসিডেন্ট কমিশনারের অফিসের মাধ্যমে এই বিষয়ে ‘রিভিউ পিটিশন’ পেশ করেছে রাজ্য। যেহেতু তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর বিজ্ঞাপনের বিষয়টি দেখে, তাই তাদেরই মামলার কাগজপত্র তৈরি করার নির্দেশ দেন প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা। এখন সুপ্রিম কোর্টে গরমের ছুটি চলছে। ১ জুলাই আদালত খুললেই শুনানির দিন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু হবে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। নবান্নের এক কর্তা বলেন, ‘‘রাজ্যের নিজস্ব বিজ্ঞাপনে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি রাখার পক্ষেই মূলত সওয়াল করবে সরকার। একই সঙ্গে রাজ্যপালের ছবিও যাতে রাখা য়ায় সেই আর্জিও জানানো হবে।’’

রাজ্যের ওই বক্তব্য যাতে গ্রাহ্য হয় তার সমর্থনে এক গুচ্ছ যুক্তি সাজিয়েছে নবান্ন। প্রশাসন সূত্রে খবর, গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোয় প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী দু’জনেরই পৃথক সত্তা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী যেমন দেশের প্রশাসনিক প্রধান, তেমনই মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। তা হলে বিজ্ঞাপনে ছবি ছাপার ক্ষেত্রে কেন পৃথক নীতি হবে? রাজ্যের আরও যুক্তি, প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী দু’জনেই জনতার ভোটে জিতে আসেন এবং জনপ্রতিনিধি হিসেবেই প্রশাসনিক প্রধানের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলান। তাহলে ছবির মাপকাঠিতে কী ভাবে দু’জনকে পৃথক গোত্রে ফেলা যায়।

প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি আবেদনের সমর্থনে আরও কিছু ব্যাখ্যা দিয়েছেন নবান্নের অফিসারেরা। তাঁদের যুক্তি, কেন্দ্রের যেমন নিজস্ব অনেক প্রকল্প আছে, তেমন রাজ্যগুলিও নিজের টাকায় কিছু প্রকল্প চালায়। সে ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার যদি তার প্রকল্পের ইতিবৃত্ত প্রধানমন্ত্রীর ছবি দিয়ে ফলাও করে ছাপার অধিকার পায় তা হলে রাজ্যকেও সেই সুযোগ দেওয়া উচিত। তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে শুধু সরকারের কর্মসূচি জানান দেওয়া হয় না। সেই সুযোগ পেতে কী করতে হবে, সেই নির্দেশিকাও দেওয়া থাকে। এতে আমজনতারই সুবিধা হয়।’’

নবান্ন সূত্রের খবর, বিজ্ঞাপনে মুখ্যমন্ত্রীর কোন ছবি যাবে সেটা তাঁর অফিসই ঠিক করে দেয়। যদিও গোড়া থেকে এই নিয়ম ছিল না। তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরই মুখ্যমন্ত্রীর ছবি পছন্দ করত। কিন্তু বছর দুয়েক আগে একটি বিজ্ঞাপনে মুখ্যমন্ত্রীর প্রকাশিত ছবি নিয়ে গোল বাধে প্রশাসনে। তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর যে ছবি দেয় তা নিয়ে আপত্তি তোলে তাঁর অফিস। এবং তার জেরে শাস্তির মুখে পড়তে হয় এক তথ্যকর্তাকে। তাঁকে বদলি করে দেওয়া হয় অন্যত্র। এর পরেই ছবি বাছাইয়ের দায়িত্ব নিজেদের হাতে তুলে নেয় মুখ্যমন্ত্রীর অফিস। তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর অবশ্য এই দাবি মানতে চায়নি।

তবে এই আমলে বিজ্ঞাপনের বহর যে অনেকটাই বেড়েছে তা মানছেন তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের কর্তারা। তাঁদের ব্যাখ্যা, প্রথম থেকেই এই সরকার সামাজিক প্রকল্পের উপরে জোর দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রায় প্রতি মাসেই

জেলা সফরে গিয়ে বহু প্রকল্পের শিলান্যাস বা উদ্বোধন করেন। মুখ্যমন্ত্রীর সেই সব কর্মসূচির কথা মানুষকে আগাম জানাতে গিয়েই বিজ্ঞাপনের সংখ্যা বেড়েছে। শুধু বিজ্ঞাপনই নয়, বিবিধ রকম খেলা-মেলা-পুরস্কার-অনুষ্ঠানে যাতে অর্থে টান না পড়ে তার জন্য এই সরকার তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের বাজেট বরাদ্দও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়িয়েছে। অর্থ দফতরের হিসেব বলছে, বাম আমলে যেখানে তথ্য দফতরের বাজেট ৩০ কোটি টাকা ছিল, এখন সেটাই ২০০ কোটিতে ঠেকেছে।

বিরোধী রাজনীতিকেরা অবশ্য আর্জি পেশের পিছনে রাজনৈতিক তাগিদই দেখছেন। তাঁদের মতে, বাম আমলে সরকারি বিজ্ঞাপনে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি দেওয়ার খুব একটা রেওয়াজ ছিল না। দেওয়া হলেও তা কদাচিৎ। কিন্তু এই আমলে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি দেওয়া কার্যত বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাঁদের মতে, কয়েক মাস পরেই বিধানসভা নির্বাচন। ভোট যত এগোবে, সরকারও নানা প্রকল্পের শিলান্যাস ও উদ্বোধনের মাত্রা বাড়াবে। সেই সব কর্মসূচির বিজ্ঞাপনে যাতে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি দেওয়া যায় তাই আদালতের রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানাতে উঠেপড়ে লেগেছে সরকার।

তবে আর্জি জানালেই যে সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যের আবেদন মেনে নেবে সে ব্যাপারে নিশ্চিত নয় প্রশাসনের একাংশ। নবান্নের এক কর্তা বলেন, ‘‘বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন বিজ্ঞাপনে কাদের ছবি রাখা যাবে তার নির্দেশিকা তৈরি করতে সুপ্রিম কোর্ট আইন বিশেষজ্ঞ মাধব মেননের নেতৃত্বে একটি কমিটি তৈরি করেছিল। ওই কমিটি সব রাজ্যকে তাদের মতামত জানানোর জন্য ২০১২ সালে চিঠি পাঠিয়েছিল। নবান্নেও পৌঁছেছিল সেই চিঠি। কিন্তু তখন বিহার ছাড়া কোনও রাজ্যই জবাব দেয়নি।’’ ফলে এখন নতুন করে এই আবেদন কতটা গ্রাহ্য হবে তা নিয়ে খানিকটা সংশয়েই নবান্নের কর্তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE