Advertisement
০৭ মে ২০২৪

আন্দোলন রুখতে নতুন জলকামান

পুলিশের ভাঁড়ারে এখন ২৩টি জলকামান রয়েছে। তার মধ্যে তিনটি অকেজো। সম্প্রতি রাজ্য পুলিশের ডিজি-র ডাকা এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আরও ২০টি জলকামান কেনা হবে। প্রতিটির দাম কমবেশি ৫০ লক্ষ।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

দেবজিৎ ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৭ ০৪:১১
Share: Save:

পরের লোকসভা নির্বাচন এখনও দেড় থেকে দু’বছর দূরে। ২০১৯-এর সেই ভোটে জিতে ফের ক্ষমতায় আসতে মরিয়া বিজেপি এখন থেকেই এ রাজ্যের পথে পথে নেমে পড়ছে। রাজ্য সরকারের নানান নীতি ও কাজকর্মের বিরোধিতা করে জেলায় জেলায় বিক্ষোভ-আন্দোলন করছে গেরুয়া বাহিনী। পুলিশকর্তাদের একাংশের ধারণা, যত দিন গড়াবে, এই আন্দোলনের ধার ততই বাড়বে। এটা মাথায় রেখে জলকামানকেই হাতিয়ার করতে চাইছে নবান্ন।

পুলিশের ভাঁড়ারে এখন ২৩টি জলকামান রয়েছে। তার মধ্যে তিনটি অকেজো। সম্প্রতি রাজ্য পুলিশের ডিজি-র ডাকা এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আরও ২০টি জলকামান কেনা হবে। প্রতিটির দাম কমবেশি ৫০ লক্ষ। এক পুলিশকর্তা জানান, প্রতিটি পুলিশ কমিশনারেট একটি করে জলকামান পেলেও সব জেলাকে এখনও তা দেওয়া যায়নি। নতুন কামান এলে তারা অগ্রাধিকার পাবে। কিছু জেলাকে একাধিক জলকামান দেওয়া হবে। ‘‘কোন জেলায় বিজেপির সাংগঠনিক শক্তি বেশি কিংবা নেতারা বিক্ষোভ-আন্দোলনকে জোরদার করে তুলতে সক্ষম, তা পর্যালোচনা করে কামান দেওয়া হবে। প্রাথমিক ভাবে কলকাতার লাগোয়া জেলাগুলিরই একাধিক জলকামান পাওয়ার কথা,’’ বলেন ওই পুলিশকর্তা।

কলকাতা পুলিশের কাছে ক’দিন আগেও একটি মাত্র জলকামান ছিল। গত মে মাসে বামেদের নবান্ন অভিযানকে কেন্দ্র করে রাজপথ উত্তাল হয়ে ওঠায় পুলিশ বেধড়ক লাঠি চালিয়ে বিক্ষোভ সামাল দেয়। ‘‘জলকামানের প্রয়োজন কতটা, তা বোঝা গিয়েছিল তখনই। কিন্তু সেই কামান যথেষ্ট সংখ্যায় না-থাকায় সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরার সামনে লাঠি চালিয়ে সমালোচনার পাত্র হয়েছিল কলকাতা পুলিশ,’’ বলেন লালবাজারের এক পুলিশকর্তা। ওই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে পাঁচটি কামানের বরাত দেয় লালবাজার। সেগুলো এখনও এসে পৌঁছয়নি।

সামাজিক বা রাজনৈতিক কারণে বিক্ষোভ-আন্দোলন ঠেকাতে সব রাজ্যের পুলিশই এখন জলকামান ব্যবহার করে। এর জন্য তারা একটা ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর’ (এসওপি) বা আদর্শ ব্যবহার বিধি তৈরি করে ফেলেছে। এ রাজ্যে এখনও তেমন কিছু হয়নি। ‘‘পুলিশের আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে বর্তমান সরকার অনেক বেশি রক্ষণশীল। আন্দোলনকারীরা পুলিশকে আক্রমণ করলেও একাধিক ঘটনায় বাহিনীকে সংযত থাকারই পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। প্রাণঘাতী নয়, এমন অস্ত্রের বেশি ব্যবহার চায় প্রশাসন। সেই জন্যই আরও জলকামান কেনার সিদ্ধান্ত,’’ বলেন নবান্নের এক কর্তা।

জলকামান অবশ্য কিনলেই হবে না, সেগুলির নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবহার দরকার। তা হয়নি বলেই রাজ্য পুলিশের তিনটি জলকামান অকেজো হয়ে গিয়েছে। এক পুলিশকর্তা জানাচ্ছেন, জলকামানের গাড়িতে দু’টি ইঞ্জিন থাকে। একটি ইঞ্জিন দিয়ে গাড়ি চালানো হয়, জলের পাম্প চালাতে ব্যবহৃত হয় অন্যটি। পাম্প যত শক্তিশালী হয়, হোসপাইপ দিয়ে নির্গত জলের তোড় হয় তত বেশি। পাম্প খারাপ হয়ে গেলে গোটা জলকামানটাই বিকল হয়ে পড়ে। তাই নিয়ম করে পাম্প চালানো দরকার। সেই জন্যই দলকলকর্মীরা মাঝেমধ্যে গাড়ির ইঞ্জিন চালু করে রাখেন। ওই পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘প্রশিক্ষণের অঙ্গ হিসেবে জলকামান নিয়ে পুলিশের নিয়মিত মহড়া হওয়া উচিত। কিন্তু এখন তা উঠে গিয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE