Advertisement
০২ মে ২০২৪

উত্তর সীমান্তে নজর বাড়াতে দায়িত্বে রাজ

উত্তরবঙ্গের সীমান্তের অপরাধ-চক্রকে শায়েস্তা করতে নিজেই আসরে নামলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরকারি সূত্রের খবর, সে জন্য রাজ্য পুলিশের ডিজি (উপকূল রক্ষী বাহিনী ও হোমগার্ড) রাজ কানোজিয়াকে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

রাজ কানোজিয়া

রাজ কানোজিয়া

কিশোর সাহা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৬ ০৩:২৬
Share: Save:

উত্তরবঙ্গের সীমান্তের অপরাধ-চক্রকে শায়েস্তা করতে নিজেই আসরে নামলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরকারি সূত্রের খবর, সে জন্য রাজ্য পুলিশের ডিজি (উপকূল রক্ষী বাহিনী ও হোমগার্ড) রাজ কানোজিয়াকে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। উত্তরবঙ্গের পাঁচ জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় নজর রাখবেন তিনি। এবং এই নিয়ে ডিজি সুরজিৎ কর পুরকায়স্থের সঙ্গে কথা বললেও রাজ রিপোর্ট দেবেন সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে।

বুধবার স্বরাষ্ট্র দফতর থেকে এই সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিটি জারি করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে— দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার ও মালদহের সীমান্তবর্তী এলাকায় জাল নোট পাচার, চোরাকারবার ও অনুপ্রবেশ আটকাতে নজরদারি করবেন রাজ কানোজিয়া। এর মধ্যেই এই পাঁচ জেলার অফিসারদের নিয়ে বৈঠকের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। নবান্নের এক শীর্ষ কর্তা জানান, উত্তরবঙ্গের সীমান্ত জেলায় অপরাধ চক্র দমনে যাতে কোনও ফাঁক না থাকে, সেটা নিশ্চিত করতে রাজ্য বদ্ধপরিকর। সে কারণেই স্পর্শকাতর পাঁচটি জেলাকে বেছে নিয়ে এগোতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী।

রাজ এর আগেও উত্তরবঙ্গের আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে ছিলেন। সেটা বেশি দিন আগের কথাও নয়, তৃণমূলের প্রথম জমানার শেষ ভাগে। দ্বিতীয়বার ক্ষমতাসীন হয়ে তাঁকে সেখান থেকে সরিয়ে উপকূল রক্ষী বাহিনীর সঙ্গে হোমগার্ডের দায়িত্ব দেন মমতা। এ বারে তার সঙ্গে বাড়তি হিসেবে জুড়ে দেওয়া হল এই পাঁচ জেলায় সীমান্তবর্তী এলাকায় অপরাধ দমনের দায়িত্ব। সম্প্রতি সীমান্তের ও পারে সন্ত্রাসবাদীদের কার্যকলাপ বেড়ে গিয়েছে। প্রথমে ঢাকার গুলশনে রেস্তোরাঁতে হানা। তার পরে কিশোরগঞ্জে। আর মাত্র সাত দিন আগে অসমের কোকরাঝাড়ে ভরা হাটে হামলা চালাল এনডিএফবি জঙ্গিরা। সরকারি সূত্রে বলা হচ্ছে, এই পরিস্থিতিতে গোটা উত্তরবঙ্গেই সীমান্ত এলাকায় বাড়তি সতর্কতা ও নজরদারি প্রয়োজন হয়েছে। সে জন্য এই এলাকায় কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে, এমন এক জন অফিসারকে দায়িত্ব দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।

মালদহ-সহ দীর্ঘ সীমান্ত এলাকায় জাল নোট ও গরু পাচার নিয়ে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তার সঙ্গে রয়েছে অনুপ্রবেশের মতো গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। এই সব এলাকায় পাচার নিয়ে কেন্দ্রও চিন্তিত। সম্প্রতি, মালদহে সীমান্ত এলাকায় অপরাধ মূলক ঘটনা বেড়ে যাওয়া, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ির সীমান্তে জঙ্গিদের আনাগোনার স্পষ্ট তথ্য পৌঁছেছে রাজ্যের কাছেও। গুলশনে জঙ্গি হানার পরে বিএসএফের কাছে দিল্লি থেকে নির্দেশ এসেছে সীমান্তে নজরদারি বাড়ানোর। এ বারে রাজ কানোজিয়াকে দায়িত্ব দিয়ে সেই কাজটাই এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইলেন মুখ্যমন্ত্রী।

তবে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্নও উঠেছে। প্রথমত, নজরদারির এই তালিকা থেকে উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরকে কেন বাদ রাখা হল? এই দুই জেলাতেও বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। এবং সেই সীমান্ত দিয়ে অপরাধমূলক কাজের অভিযোগও যথেষ্ট। দ্বিতীয়ত, উত্তরবঙ্গে এডিজি, আইজি, দু’জন ডিআইজি থাকা সত্ত্বেও কেন ডিজি পদমর্যাদার অফিসারকে দায়িত্ব দিতে হচ্ছে?

রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা জানান, সরকারের হাতে থাকা তথ্যের ভিত্তিতে আপাতত ওই পাঁচ জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় অপরাধ দমনের কাজে গতি আনতেই ডিজি পদমর্যাদার এক অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই কর্তার যুক্তি, এডিজি, আইজি, ডিআইজি-রা মূলত দৈনন্দিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, ভিআইপি-দের সুরক্ষা সংক্রান্ত কাজকেই অগ্রাধিকার দেন। সে ক্ষেত্রে জাল নোট, চোরাকারবার ও জঙ্গি গতিবিধির ব্যাপারে এক জন ডিজি বাছাই অফিসারদের নিয়ে নিয়মিত তদারকি করলে সীমান্ত-অপরাধ দমনের কাজ আরও মসৃণ হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

State Government
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE