প্রতীকী ছবি।
জলপথে দুর্ঘটনা ঠেকাতে পুরনো ও জোড়াতালি দেওয়া ভুটভুটির খোলনলচে বদলিয়ে নতুন চেহারার যন্ত্রচালিত নৌকা নামাতে চায় রাজ্য সরকার। লক্ষ্য পূরণে মাস চারেক আগে কনক্লেভ করে ভিন রাজ্যের নৌকা নির্মাণ সংস্থাগুলিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল পরিবহণ দফতর। নবান্ন সূত্রের দাবি, সেই ডাকে সাড়া দিয়ে কেরল, মহারাষ্ট্র ও ওডিশার একাধিক সংস্থা লগ্নি করতে আগ্রহ দেখিয়েছে।
নবান্নের এক কর্তা জানান, যাত্রী নিরাপত্তার স্বার্থে নৌকা তৈরির ক্ষেত্রে পরিবহণ দফতর কিছু শর্ত দিয়েছিল। তার মধ্যে যেমন পরিকাঠামোর বিশেষ আদল বলা ছিল, তেমনই যাত্রিবহন ক্ষমতা অনুযায়ী দর বেঁধে দেওয়ার কথাও বলা হয়। সে সব মেনে যারা আগ্রহপত্র জমা করেছিল, তাদের মধ্যে ২৪টি সংস্থাকে এ পর্যন্ত নথিভুক্ত করা হয়েছে। এ বার ওই সংস্থাগুলির সঙ্গে যন্ত্রচালিত নৌকার মালিকদের পরিচয় করিয়ে দেবে পরিবহণ দফতর।
সরকারের ভূমিকা হবে অনুঘটকের। এক পরিবহণ-কর্তা বলেন, ‘‘নথিভুক্ত নির্মাণ সংস্থাগুলিকেই বরাত দিতে হবে নৌকা মালিকদের। মোট খরচের ৩০ শতাংশ কিংবা সর্বোচ্চ এক লক্ষ টাকা ভর্তুকি দেবে সরকার। আর পরিবহণ দফতর যদি নিজে নৌকা কেনে, সে ক্ষেত্রে দরপত্রে ওই সংস্থাগুলি অগ্রাধিকার পাবে।’’
নবান্নের সিদ্ধান্ত, জানুয়ারিতে বিশ্ববঙ্গ শিল্প সম্মেলনে নৌকা শিল্পে ভিন রাজ্যের লগ্নির বিষয়টি তুলে ধরা হবে। শিল্প দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘যে সংস্থাগুলি লগ্নি করতে রাজি হয়েছে, সম্মেলনে তাদের প্রতিনিধিদের ডাকা হবে।’’ ভিন রাজ্যের নৌকা নির্মাতা সংস্থাগুলিকে এ রাজ্যে লগ্নিতে রাজি করানোর ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা ছিল ফিকি-র। তাদের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল মৌসুমী ঘোষ বলেন, ‘‘লগ্নির পাশাপাশি এ রাজ্যে কর্মসংস্থানেরও সুযোগ করে দেবে নৌকা শিল্প।’’
সুন্দরবন-সহ বিভিন্ন জেলায় শ’য়ে শ’য়ে মানুষ প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে যে যন্ত্রচালিত নৌকায় যাতায়াত করেন, সেগুলিকে কী ভাবে আরও বেশি নিরাপদ করে গড়ে তোলা যায়, তার দিশা খুঁজতে গত জুন মাসে নৌকা নির্মাণ সংস্থাগুলিকে কনক্লেভ-এ ডেকেছিল পরিবহণ দফতর। সেখানেই মহারাষ্ট্রের ‘মাহিন্দ্রা মেরিন’ সংস্থাকে এ রাজ্যে নৌকা তৈরির কারখানা গড়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। বলেছিলেন, ‘‘আমরা নদী লাগোয়া এলাকায় জমি দেব। আপনারা আসুন।’’ শিল্প দফতর সূত্রের খবর, মন্ত্রীর প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে মাহিন্দ্রা মেরিন নৌকা শিল্পে লগ্নি করতে আগ্রহপত্র জমা দিয়েছে।
এ রাজ্যে প্রায় ১৪ হাজার যন্ত্রচালিত নৌকা চলে। অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়ার প্রবণতাই জলপথে বিপদ ডেকে আনে, মনে করেন পরিবহণকর্তারা। পাশাপাশি, নৌকার গ়ড়নও যে এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নেয়, কনক্লেভে সে কথা জানিয়েছিলেন কেরল, ওডিশা ও তামিলনাড়ুর প্রতিনিধিরা। তাঁদের বক্তব্য মাথায় রেখে পরিবহণ দফতরের তৈরি করে দেওয়া টেকনিক্যাল কমিটি নয়া নৌকার গড়ন ও প্রযুক্তিগত বিষয়গুলি নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। এত দিন কোনও ভুটভুটিতেই অগ্নি নিরোধক ব্যবস্থা ছিল না। নতুন নৌকায় সেই বন্দোবস্ত রাখা আবশ্যক করা হয়েছে।
কনক্লেভে মহারাষ্ট্রের একটি সংস্থার প্রতিনিধির পরামর্শ ছিল, নৌকা ও ঘাট দুইই পরিবেশবান্ধব হওয়া উচিত। পরামর্শ নেমে রাজ্য ইতিমধ্যে ‘জলসাথী’ নিয়োগ করে তাঁদের হাতেই ঘাটের যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য ও নিরাপত্তার ভার দিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy