নতুন ৫০০ এবং ১০০ টাকার নোট রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যথেষ্ট পরিমাণে সরবরাহ করতে পারলে ডিসেম্বরে সরকারি কর্মীদের বেতনের একটি অংশ নগদে অগ্রিম দিতে পারে রাজ্য। সোমবার এই ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে নবান্ন। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক নগদ জোগানের দায়িত্ব নিলে যাতে অন্তত ৫০০০ টাকা সরকারি কর্মীদের হাতে তুলে দেওয়া যায়, তার ব্যবস্থা করতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শনিবার নবান্নের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘কর্মীদের অগ্রিম হিসেবে পাঁচ হাজার টাকা দিতে অসুবিধা নেই। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সম্মতি দিলে সোমবার এ ব্যাপারে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে। তবে দু’হাজার টাকার নোট দিয়ে এই অগ্রিম আমরা দিতে চাই না।’’
অর্থ দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, কর্মচারীদের হাতে কিছু টাকা মাসের শুরুতে পৌঁছে দিতেই অগ্রিম দেওয়ার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। সরকার হাজার পাঁচেক টাকা দিতে চায়। কিন্তু যদি দু’হাজার টাকার নোটে তা দেওয়া হয়, তা হলে কর্মীরা সমস্যায় পড়বেন। সে জন্যই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, তারা নতুন ৫০০ টাকা ও ১০০ টাকার জোগান যথেষ্ট পরিমাণে দিতে পারবে কি না। যদি পারে, তা হলে অর্থ দফতর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবে।
দফতর সূত্রের খবর, এমনিতে অনলাইন বেতন যে ভাবে হয়, ডিসেম্বরেও তেমনই হবে। এই অগ্রিম তার বাইরে। পুজো-অগ্রিম বাবদ টাকা দিয়ে, পরে তা যেমন মাসে মাসে কেটে নেওয়া হয়, এ ক্ষেত্রেও তাই হবে। কেবল এই অগ্রিম দেওয়া হবে নগদে। প্রতিটি দফতর এই অগ্রিমের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা নির্দিষ্ট চেক মারফত এককালীন তুলে নেবে। মাসের শেষ দিনে দফতর থেকেই তা বিলি করা হবে। এখনও পর্যন্ত এমনই ঠিক রয়েছে। সাড়ে তিন লক্ষ সরকারি কর্মীর জন্য এই অগ্রিমের ব্যবস্থা করা হলেও শিক্ষক, পুরসভা, পঞ্চায়েতের ক্ষেত্রে কী হবে, তা এখনও ঠিক হয়নি।
অর্থ দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যে পরিমাণ টাকা দিতে পারবে, সেই মতো ব্যবস্থা হবে। টাকা না দিতে পারলে সরকার চাইলেও অগ্রিম দেওয়া মুশকিল হবে।’’
নোট বাতিলের পরে রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে এ দিনই নবান্নে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। সচিবালয়ে আসার আগে এ দিন তিনি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, বড়বাজার এবং ক্যানিং স্ট্রিট ঘুরে আসেন। মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় এবং স্বরাষ্ট্রসচিব মলয় দে-র সঙ্গে এ নিয়ে অলোচনাও করেন। সোমবার মুখ্যমন্ত্রীর বাঁকুড়া যাওয়ার কথা ছিল। এ দিন তিনি ওই কর্মসূচি বাতিল করেছেন। চলতি মাসের শেষে নির্ধারিত ব্যাঙ্কক সফর বাতিল করেছেন আগেই। নবান্নের খবর, সোমবার মুখ্যমন্ত্রী ফের দিল্লি যেতে পারেন।
এ দিন নবান্নের ওই বৈঠকেই রাজ্যের কৃষিক্ষেত্রের অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন মমতা। বলেন, ‘‘শহরে কোথাও কিছু টাকা পৌঁছলেও গ্রামে কিছুই যায়নি। সমবায় ব্যাঙ্ক বন্ধ হওয়ার জোগাড়। চাষিরা সার-বীজ কেনার জন্য আর্থিক সহায়তা না পেলে রবি চাষটাই হবে না। সে ক্ষেত্রে মূল্যবৃদ্ধি ঠেকানো যাবে না।’’ মুখ্যমন্ত্রীর উদ্বেগ, ‘‘মধ্যপ্রদেশ-রাজস্থানে ওরা ৫০০ টাকার নতুন নোট পাঠাল। অথচ এ রাজ্যে এল না! নোট বিলিতেও বৈষম্য করছে কেন্দ্র। বন্ধ হয়েছে কেন্দ্রীয় অনুদানও।’’
নতুন ৫০০ টাকার নোট বাজারে না আসায় মানুষের অসুবিধা নিয়ে সরব নবান্নের এক কর্তার কথায়, ‘‘২০০০ টাকার নোট কাজে লাগছে না। ৫০০ টাকার নোট নেই। যাঁদের হাতে ১০০ টাকার নোট রয়েছে, তাঁরাও ভয়ে খরচ করছেন না। ফলে বাজারে টাকার জোগান কমে গিয়েছে। অনেকে আবার ১০০ টাকার নোট মজুতের কারবারে নেমেছে। ফলে পরিস্থিতি বেশ খারাপ।’’
নবান্ন সূত্রে বলা হয়েছে, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক রাজ্যে কত টাকার নোট ছেড়েছে, কত পরিমাণ পুরনো নোট সংগ্রহ করেছে, এ সব কিছুই জানাচ্ছে না। ফলে রাজ্য আসল পরিস্থিতি জানাই যাচ্ছে না।
এ দিন মুখ্যমন্ত্রী সরব হওয়ার পরে অবশ্য রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সন্ধ্যায় কিছুটা আশা দেখিয়েছে। এ দিন রাজ্য সমবায় ব্যাঙ্ক কৃষিঋণের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের কাছে ২০০ কোটি টাকা চেয়েছিল। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানায়, ধাপে ধাপে ওই টাকা দেওয়া হবে। সোমবার প্রথম কিস্তির ২৬ কোটি টাকা রাজ্য সমবায় ব্যাঙ্কে পাঠাবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। যার ২০ কোটি টাকা কৃষিঋণের জন্য। এই টাকা জেলায় জেলায় পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে রাজ্য। হুগলি, বর্ধমান, পশ্চিম মেদিনীপুর, বীরভূম, বাঁকুড়া, নদিয়ার আলু এবং বোরো চাষের এলাকায় এই টাকা অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ঋণ দেওয়া হবে। অন্যান্য জেলার প্রত্যন্ত এলাকার কৃষি উন্নয়ন সমিতিগুলির কাছেও ঋণের টাকা যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy