অসহায়: তখনও দৃষ্টি ছিল। বাবার সঙ্গে জান্নাতুন। —ফাইল চিত্র।
জটিলতা ছিল হৃৎপিণ্ডে। নিরাময়ের জন্য শিলিগুড়ির হাসপাতালে হৃৎপিণ্ডে অস্ত্রোপচার হয়। তার পরে দেখা যায়, তাঁর মস্তিষ্কের ভয়ানক ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। অসাড় হয়ে যায় কোমর থেকে নিম্নাঙ্গ। এ বার চলে গেল তাঁর চোখের আলোটুকুও। আর কোনও দিন দেখতে পাবেন না আঠারোর জান্নাতুন ফিরদৌসি।
এ বার অচেনা কলকাতা শহর ছেড়ে উত্তরবঙ্গের বাড়িতে ফিরতে চান ওই তরুণী। কোমরের নীচ থেকে শরীরে সাড় না-থাকলেও মাটিতে ঘষে ঘষে চলতে পারতেন, যদি চোখ দু’টো ঠিক থাকত। এখন তাঁর পক্ষে এ ভাবে চলাফেরা করা বিপজ্জনক বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা।
জান্নাতুন ফিরদৌসির বাড়ি আলিপুরদুয়ারের রাঙালিবাজনা গ্রামে।
সেলাই মিস্ত্রি বাবা আমদাজ আলিই দেখভাল করছেন এসএসকেএম হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে থাকা মেয়ের। ‘‘স্ত্রী আরও দু’টি সন্তান নিয়ে পড়ে আছেন গ্রামে। মেয়েকে ফিরিয়ে নিয়ে গেলে আমি আবার রোজগার করতে শুরু করব। নয়তো আমার পরিবার খেতে না-পেয়ে মরে যাবে,’’ বলছেন আমজাদ।
হাসপাতালের খবর, যথাসাধ্য চিকিৎসার করেও জান্নাতুনের দৃষ্টিশক্তি বাঁচানো যায়নি। এখন আর কিছু করার নেই। আমজাদের আর্জি মেনে জান্নাতুনকে ফেরানোর জন্য এসএসকেএমের সুপার মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় আলিপুরদুয়ারের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক পূরণ শর্মাকে চিঠি লিখেছেন। পূরণ বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘বীরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে জান্নাতুনকে রাখার ব্যবস্থা হচ্ছে। ওটাই ওর বাড়ির সব চেয়ে কাছাকাছি হবে। আশা করি, মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে জান্নাতুনকে কলকাতা থেকে আলিপুরদুয়ারে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।’’
ঠিক কী হয়েছিল জান্নাতুনের?
২০১৫ সালের জুলাইয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময়ে জান্নাতুনের হৃৎপিণ্ডে জটিলতা ধরা পড়ে। শিশুসাথী প্রকল্পে শিলিগুড়ির চ্যাং হাসপাতালে হৃৎপিণ্ডে অস্ত্রোপচার হয়। ২৭ জুলাই অস্ত্রোপচারের পরেই ‘কোমা’-য় চলে যান জান্নাতুন। আমজাদের অভিযোগ, দু’মাস পরে মেয়ের জ্ঞান ফিরলে দেখা যায়, তাঁর মস্তিষ্ক ভীষণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নিম্নাঙ্গ অসাড়। আড়াই বছর ও-ভাবেই হাসপাতালে পড়ে ছিলেন জান্নাতুন। দার্জিলিং লিগাল এড ফোরামের অমিত সরকারেরা আমজাদকে নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। হাইকোর্টের নির্দেশেই গত জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে জান্নাতুনকে ট্রেনে করে নিয়ে আসা হয় কলকাতায়। ভর্তি করানো হয় এসএসকেএমে। তাঁর চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দিয়ে একটি দল গঠন করা হয়।
প্রাথমিক চিকিৎসার পরে বিশেষজ্ঞেরা জানান, হৃৎপিণ্ডের অস্ত্রোপচারের সময়ে জান্নাতুনের মস্তিষ্ক ভয়ঙ্কর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নতুন করে মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করে তাঁকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরানো যাবে না। ফিজিওথেরাপি করে যতটা সুস্থ করে তোলা যায়, সেই চেষ্টা চালানো হবে। গত চার মাস ধরে জান্নাতুনের চিকিৎসা চলছিল। এই চার মাস আমজাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ।
জান্নাতুন দৃষ্টিশক্তিও হারিয়েছেন সম্প্রতি। লিগাল এড-এর সম্পাদক অমিতবাবু জানান, যে-চিকিৎসক এবং হাসপাতালের গাফিলতিতে জান্নাতুনের এই হাল হয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা চলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy