Advertisement
২০ মে ২০২৪

দাগি থেকে ছিঁচকে, কুলুজি নিয়ে পুলিশি গুগ্‌ল

দাগি খুনি থেকে ছিঁচকে চোর। রাজ্যের তাবৎ চেনা অপরাধীর হাল-হদিস নিমেষে হাতের মুঠোয় পাওয়া চাই। সেই লক্ষ্যে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ তৈরি করে ফেলেছে কম্পিউটারের এক নতুন অ্যাপ্লিকেশন।

শুভাশিস ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৯
Share: Save:

দাগি খুনি থেকে ছিঁচকে চোর। রাজ্যের তাবৎ চেনা অপরাধীর হাল-হদিস নিমেষে হাতের মুঠোয় পাওয়া চাই। সেই লক্ষ্যে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ তৈরি করে ফেলেছে কম্পিউটারের এক নতুন অ্যাপ্লিকেশন।

পুলিশকর্তাদের দাবি: রাজ্যের যেখানে যত অপরাধী রয়েছে, ওই মোবাইল অ্যাপে আঙুলের এক ছোঁয়ায় তাদের সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য পেয়ে যাবে পুলিশ। ফলে কোনও ঘটনার পরে চটজলদি গ্রেফতারি ও কিনারা করা অনেকটা সহজ হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে
রয়েছে মূলত সিআইডি। ‘‘চলতি সপ্তাহেই অ্যাপটি চালু হয়ে যাবে।’’— সোমবার বলেছেন সিআইডির এক শীর্ষ আধিকারিক।

তাতে কতটা সুবিধা হবে, উদাহরণ দিয়ে ব্যাখ্যা করেছেন এক গোয়েন্দা-কর্তা। অভিযোগ, মন্ত্রী-ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচয় দিয়ে সম্প্রতি এক ব্যক্তি নানা লোককে প্রতারণা করছিল। অ্যাপে কয়েক জন ‘নামজাদা’ প্রতারকের ছবি তাঁদের দেখানো হয়। তাঁরা এক জনকে শনাক্ত করেন। স্রেফ তিন ঘণ্টার মধ্যে হুগলির পান্ডুয়া থেকে অভিযুক্তকে পাকড়ে ভবানীভবনে নিয়ে আসা হয়।

অ্যাপটি বানানো হয়েছে কী ভাবে?

গোয়েন্দা-সূত্রের খবর: গত দেড় বছর যাবৎ পশ্চিমবঙ্গের প্রায় দু’লাখ দাগি অপরাধীর ঠিকুজি-কোষ্ঠী নিয়ে তৈরি করা হয়েছে এই অ্যাপ। নাম— ক্রাইম ক্রিমিনাল সার্চ। রাজ্যের কুড়িটি জেলা ও পাঁচটি কমিশনারেটের যাবতীয় অপরাধ সংক্রান্ত তথ্যও তাতে ঢোকানো হয়েছে। থানার ‘ইনপুট’-এর ভিত্তিতে সেই তথ্য দৈনিক আপডেট করা হচ্ছে। কী ভাবে তা কাজ করবে?

সিআইডি’র দাবি— কোনও অপরাধীর ঠিকানা, ফোন নম্বর, ছবি ইত্যাদি আঙুলের ছোঁয়ায় উঠে আসবে স্ক্রিনে। দেখা যাবে তার অপরাধের খতিয়ান। জানা যাবে, সে কত দিন জেল খেটেছে, এখন কোথায় থাকতে পারে। তার বাড়িতে কে কে রয়েছে, কোন কোন দুষ্কৃতীর সঙ্গে তার মেলামেশা— এ সবও ফুটে উঠবে মোবাইলের পর্দায়।

এর কার্যকারিতা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে পুলিশকর্তারা বলছেন, দুষ্কৃতীদের মধ্যে ভাগ থাকে। কেউ বাস ডাকাতি করে, কেউ ট্রেনে ছিনতাই। কারও কাজ সোনা পাচার। এরা বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার হয়। অনেকে জেল থেকে বেরিয়ে একই ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। যে বাসে রাহাজানি করত, সে আবার তা-ই করে। সোনা পাচারকারী পুরনো পথে ফিরে যায়। ‘‘ফলে বাসে ডাকাতি হলে অ্যাপের সাহায্যে গোড়াতেই বর্তমান ও প্রাক্তন বাস-ডাকাতদের আলাদা করে ফেলা যাবে। তার পরে ওদের গতিবিধি নজরে রাখলে ছবিটা পরিষ্কার হয়ে যাবে।’’— পর্যবেক্ষণ এক অফিসারের।

পাশাপাশি নিরন্তর নজরদারিতেও বিস্তর সুবিধা হবে বলে গোয়েন্দা-সূত্রের আশা। তাঁদের বক্তব্য: জেলফেরত দুষ্কৃতীদের গতিবিধির হদিস রাখাটা বেশ কঠিন। এ বার অ্যাপ-ই বলে দেবে, কোথায় কার ডেরা বাঁধার সম্ভাবনা। এ ছাড়া ভিন রাজ্যের দুষ্কৃতীরা হামেশা স্থানীয় যোগসাজসে এখানে অপরাধ ঘটিয়ে চম্পট দেয়। ‘‘আমাদের রাজ্যের কোন কোন গ্যাং ভিন রাজ্যের ক্রিমিন্যালদের এজেন্ট, অ্যাপ তা জানিয়ে দেবে। ওদের ধরে মাথাদের নাগাল মিলতে পারে।’’— মন্তব্য এক গোয়েন্দাকর্তার। সীমান্ত-পারের দুষ্কৃতীদের এ পারের ‘দোসর’দের তত্ত্ব-তালাশও মজুত রাখা হবে। এবং পুলিশ জানাচ্ছে, ‘ক্রাইম ক্রিমিনাল সার্চ’-এর একটি অংশ আমজনতারও হাতের মুঠোয় থাকবে। সে ক্ষেত্রে অ্যাপটি নিজের মোবাইলে ডাউনলোড করতে হবে। কী কাজে লাগবে?

রাজ্যের যে কোনও থানা ও পুলিশ অফিসারের মোবাইল নম্বর ওতে পাওয়া যাবে। কোথাও কোনও অজ্ঞাতপরিচয়ের মৃত্যু হলে মৃতদেহের ছবি সঙ্গে সঙ্গে অ্যাপে ডাউনলোড করা হবে। কারও পরিজন হারিয়ে গেলে অ্যাপে ঢুকে দেখা যাবে, সেই সময়ে দুর্ঘটনায় কারও মৃত্যু হয়েছে কি না। কোনও গাড়ি ধাক্কা মেরে পালিয়ে গেলে অথবা সন্দেহজনক গাড়ি চোখে পড়লে অ্যাপ মারফত গাড়ির নম্বর সার্চ করে তার মালিকের হদিস মিলবে। ওই গাড়ির বিরুদ্ধে কোনও থানায় কোনও মামলা রয়েছে কি না, তা-ও জানা যাবে তৎক্ষণাৎ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Police Miscreants
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE