হঠাৎ ঝড়। তার জেরে অনেক সময় কোনও ট্রলার ঢুকে পড়ে বাংলাদেশের জল সীমানায়। কখনও চলে যায় নাগালের বাইরে। আর হদিস পাওয়া যায় না তার। হদিস মিললেও অনেক দেরি হয়ে যায়। কিন্তু এ বার এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে পাঁচ মিনিটেই হদিস মিলবে ওই ট্রলারের। সৌজন্যে ‘ডিসট্রেস অ্যালার্ট সিস্টেম’ বা বিপদ-যন্ত্র।
যন্ত্রটি কতটা সফল হবে, তা জানতে গত বছর দক্ষিণ ২৪ পরগনায় কিছু ট্রলারে এই সিস্টেম বসানো হয়েছিল। পরীক্ষা অনেকটাই সফল বলে মনে করছে মৎস্য দফতর। তাই এ বার দক্ষিণ ২৪ পরগনার জন্য ১০০০টি ও মেদিনীপুরের জন্য ৫০০টি এই যন্ত্র দেওয়া হবে। সম্প্রতি একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের পরে এ কথা মৎস্য দফতরের তরফে জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ছোট্ট এই যন্ত্র কয়েক বছর আগে তৈরি করেছিল ইসরো। গত বছর এই রাজ্যে পরীক্ষামূলক ভাবে এই যন্ত্র ব্যবহারের আগে দক্ষিণ ভারতের কিছু মৎস্যজীবীদেরও তা দেওয়া হয়েছিল।
কী ভাবে কাজ করবে ওই যন্ত্র?
অনেক দূরে চলে যাওয়ায় ট্রলারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারা, আগুন লাগা, উল্টে যাওয়া, আক্রান্ত হওয়া, কেউ অসুস্থ হয়ে পড়া— এই সব ক্ষেত্রেই নানা বিপদ সঙ্কেত নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য ওই যন্ত্রে থাকছে কতকগুলি বোতাম। সেই বোতামগুলির একটি টিপলেই বার্তা প্রথমে ইনস্যাট ৩-এ উপগ্রহের মাধ্যমে চেন্নাইয়ের একটি কেন্দ্রে পৌঁছবে। সেখান থেকে বার্তা হলদিয়া উপকূলরক্ষী বাহিনীর কাছে পৌঁছলে উদ্ধারকারী দল বিপদে পড়া ওই ট্রলারের দিকে ছুটবে। রাজ্য মৎস্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় সওয়া এক কোটি টাকার এই প্রকল্পে এ বার রাজ্যে মোট দেড় হাজার যন্ত্র বিলি করা হবে। ডেপুটি মৎস্য অধিকর্তা (সামুদ্রিক) সন্দীপকুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘ওই যন্ত্র সরবরাহের জন্য গুজরাতের একটি বেসরকারি সংস্থাকে বরাত দেওয়া হয়েছে। আশা করছি সুফল মিলবে।’’ মৎস্য দফতর সূত্রে খবর, কারা এই যন্ত্র পাবে তার জন্য একটি তালিকাও চাওয়া হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ ইউনাইটেড ফিসারমেন অ্যাসোসিয়েশনের কাছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপকূল এলাকায় ট্রলার রয়েছে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার। সাড়ে সাত হাজার টাকায় ওই যন্ত্র দেওয়া হবে এক একজন ট্রলার মালিককে।
মৎস্যজীবীদের প্রশ্ন, কয়েক লক্ষ মানুষের জীবন-জীবিকা জড়িত রয়েছে এই ঝুঁকিপূর্ণ পেশায়। তা হলে উন্নত মানের জলযান কেন কেনা বা ব্যবহার করা হচ্ছে না? তাঁদের দাবি, গত কয়েকটি ট্রলারডুবির ঘটনায় দেখা গিয়েছে, প্রাথমিক ভাবে মৎস্যজীবীদের সংগঠনই দায়িত্ব নেয়। বিপদে পড়া ট্রলারকে বাঁচাতে তারাই অন্য ট্রলার পাঠায়। সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক বিজন মাইতির কথায়, ‘‘গত বছর পরীক্ষামূলক ভাবে এগুলি চালু করার পরে দেখা গিয়েছে, বিপদ সঙ্কেত পাঠানোর পরে গভীর সমুদ্রে দুর্ঘটনাস্থলে উদ্ধারকারী দলের পৌঁছতে কখনও সময় লাগাচ্ছে দেড় থেকে দু’দিন। এত দেরিতে গিয়ে কিছু লাভ হয় না।’’ মৎস্যজীবীদের অভিযোগ, ঝড়বৃষ্টির সময় উপকূলরক্ষী বাহিনীর দল উদ্ধারে আসতে চায় না উন্নতমানের জলযান না থাকার জন্য। সন্দীপবাবু অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘এটা ঠিক নয় যে, উপকূলরক্ষী বাহিনী যেতে চায় না। তবে, ঝড়বৃষ্টির মধ্যে অনেক সময় অসুবিধা থাকে। এ ছাড়াও, উপকূল থেকে মৎস্যক্ষেত্র এত দূরে যে অনেকটা সময় পেরিয়ে যায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy