Advertisement
১৭ মে ২০২৪

আসার লোকেরাও এলেন না কেন, মিছিল-গুঞ্জন অব্যাহত

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে আয়োজিত শিল্পী এবং বিশিষ্টজনের মিছিলের পর তিন দিন কেটে গিয়েছে। কিন্তু বাংলার হেভিওয়েট নায়ক-নায়িকা-পরিচালকদের অধিকাংশের অনুপস্থিতি নিয়ে টলিউডের বাতাসে গুঞ্জন এখনও থামেনি। অনুপস্থিতদের মধ্যে এমন অনেকেই রয়েছেন, যাঁদের অতীতে তৃণমূল আয়োজিত সভা-সমাবেশে গিয়েছেন। অনেকেই মুখ্যমন্ত্রী-সহ একাধিক নেতামন্ত্রীর ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত। এমনকী তৃণমূলের টিকিটে বিধায়ক হয়েছেন, এমনও অনেকে সে দিন মিছিলে ছিলেন না।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:০৯
Share: Save:

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে আয়োজিত শিল্পী এবং বিশিষ্টজনের মিছিলের পর তিন দিন কেটে গিয়েছে। কিন্তু বাংলার হেভিওয়েট নায়ক-নায়িকা-পরিচালকদের অধিকাংশের অনুপস্থিতি নিয়ে টলিউডের বাতাসে গুঞ্জন এখনও থামেনি। অনুপস্থিতদের মধ্যে এমন অনেকেই রয়েছেন, যাঁদের অতীতে তৃণমূল আয়োজিত সভা-সমাবেশে গিয়েছেন। অনেকেই মুখ্যমন্ত্রী-সহ একাধিক নেতামন্ত্রীর ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত। এমনকী তৃণমূলের টিকিটে বিধায়ক হয়েছেন, এমনও অনেকে সে দিন মিছিলে ছিলেন না।

কেন? এ ব্যাপারে একাধিক মতামত আলোচিত হচ্ছে। ইন্ডাস্ট্রির একাংশের অনুমান, পুরোটাই আয়োজকদের ‘গটআপ’। তাঁরা যে মিছিলে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে কোনও ফতোয়া জারি করেননি বা কাউকে চাপ দিয়ে উপস্থিত থাকতে বাধ্য করেননি এই বার্তা দিতেই বেশ কয়েক জনকে মিছিলে আনা হয়নি। অরিন্দম শীল যেমন মিছিলের পরে নিজেই দাবি করেছিলেন, কাউকে আসার ব্যাপারে জোর না করেই যা ফিডব্যাক পেয়েছেন তাতে সবার নাকে ঝামা ঘষে দেওয়া গিয়েছে। আবার ইন্ডাস্ট্রির আর এক দল এর মধ্যে অন্য সমীকরণ দেখতে পাচ্ছেন। মিছিল পরিচালনার দায়িত্বে টলিউডের যে ক’জন ছিলেন, তাঁরা নিজস্ব রেষারেষি ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার জেরে নিজেদের একশো শতাংশ প্রভাব কাজে লাগাননি বলেও জোর জল্পনা।

মিছিলে টলিউডকে আনার দায়িত্বে ছিলেন দু’জন। শ্রীকান্ত মোহতা এবং অরিন্দম শীল। ক’দিন আগেও এঁদের ‘মধুর’ সম্পর্কের কথা বাংলা ছবির দুনিয়ায় সকলেই জানতেন। টালিগঞ্জের একটা বড় অংশের মতে, “শ্রীকান্ত মোহতা নির্দেশ দেবেন আর যত বড় নায়ক-নায়িকা-পরিচালকই হোন, তাঁরা হাজির থাকবেন না এমনটা হতে পারে না। মিছিল একশো ভাগ সফল হলে কৃতিত্বের অনেকটা ভাগ পেয়ে যেতেন অরিন্দম। সেটা যাতে না ঘটে, তার জন্যই ভেঙ্কটেশ শিবির সবটা গা লাগায়নি।” সেই জন্যই অপর্ণা সেন-প্রসেনজিত-রঞ্জিত-কোয়েল-রাইমা-সৃজিত-কমলেশ্বর-পরমব্রতদের মিছিলে দেখা যায়নি।

এ ব্যাপারে শ্রীকান্তের বক্তব্য জানার জন্য বারবার ফোন করেও সাড়া মেলেনি। অরিন্দম অবশ্য এই ‘চোরা লড়াই’কে প্রকাশ্যে আনতে চাননি। তিনি দাবি করেন, “শ্রীকান্ত যে চেষ্টা করেননি বা ব্যাকফুটে থেকেছেন এমন একেবারেই নয়। উনি জনে-জনে সবাইকে অনুরোধ করেছিলেন। তবে দেবশ্রীদি বা চিরঞ্জিতদা-কে উনি আসতে বলেছিলেন কি না জানি না।”

এর পরেই অরিন্দমের সাবধানী মন্তব্য, “অনেকেই গোয়ার ফিল্মোৎসবে ছিলেন বলে আসতে পারেননি। গৌতম ঘোষ তো আসবেন বলে রওনা হয়েই গিয়েছিলেন কিন্তু পৌঁছনোর আগেই মিছিল শেষ হয়ে গিয়েছিল। অপর্ণা সেন অসুস্থ।” তা হলে সৃজিত, দেবশ্রী, চিরঞ্জিত, কমলেশ্বর? একটু থমকে অরিন্দম বলেন, “যাঁরা আসেননি তাঁরা কিন্তু কোনও বিরূপ মন্তব্য করেননি।”

কেন আসেননি? প্রশ্ন করা হলে তারকারা অবশ্য বেশির ভাগই পাশ কাটাতে চেয়েছেন। কেউ কেউ আবার ইঙ্গিতে জানিয়েছেন, কথা বললে রোষানলে পড়ার ভয়েই নীরব থাকা শ্রেয় মনে করছেন। পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় যেমন বলে ফেললেন, “আমার নিজের নতুন ছবির শু্যটিং শুরু হচ্ছে আগামী সপ্তাহ থেকে। এখন কোনও মন্তব্য করে সব নড়বড়ে করে দিতে চাই না।” একই পথে হেঁটেছেন প্রসেনজিৎও। এসএমএস করেছেন ‘‘প্লিজ, আমি কিছু বলি না আপনারা জানেন। থ্যাঙ্কস।” সঙ্গীত পরিচালক ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত-র সংক্ষিপ্ত বক্তব্য, “আমি মুম্বইয়ে ছিলাম। কলকাতায় থাকলে ইন্ডাস্ট্রির বন্ধুদের পাশেই থাকতাম। যাঁরা শহরে ছিলেন, তাঁরা কেন আসেননি সেটা তাঁরাই বলতে পারবেন।”

মিছিলের আগের দিন পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় বলেছিলেন, গোয়ায় না থাকলে মিছিলে আসতেন। “ইন্ডাস্ট্রির পাশে থাকব, ঠিকভুল পরে ভাবব”, বলেছিলেন তিনি। শহরে থাকা সত্ত্বেও তাঁর স্ত্রী চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায় কিন্তু মিছিলে আসেননি। চূর্ণীর বক্তব্য, “আমার কাছে ওই মিছিলের উদ্দেশ্য স্পষ্ট ছিল না। আমি কখনও মিছিলে হাঁটিও না।” মিছিলে ছিলেন পরিচালক বিরসা দাশগুপ্ত এবং তাঁর স্ত্রী অভিনেত্রী বিদীপ্তা চক্রবর্তী। বিদীপ্তার বোন সুদীপ্তা কিন্তু মিছিলে আসেননি। কেন? সুদীপ্তার জবাব, “আমরা প্রত্যেকে আলাদা ব্যক্তিত্ব। যদি আমাকে শুধু আমার কথা জিজ্ঞাসা করেন সেটুকুই আমি বলতে পারি। অন্য কে কী করল, কেন করল জানি না।” ওঁর না আসার কারণটা তবে কী? সুদীপ্তা বলেন, “মিডিয়া ভুল বার্তা দিচ্ছে বলে তার বিরুদ্ধে মিছিল ছিল। কিন্তু মিডিয়া এত শক্তিশালী যে ঠিকভুল যা-ই বলুক, সেটা প্রাথমিক ভাবে সবাই বিশ্বাস করে। পরে ভুল প্রমাণ হলেও তার আর প্রাসঙ্গিকতা থাকে না। তাই এ ব্যাপারে মিছিল করাকে আমার যথেষ্ট বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি।”

গুঞ্জন আর থামবে কী করে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE