Advertisement
০৪ মে ২০২৪

করিডরে গতি কেন কম নয়, হাতির মৃত্যুতে প্রশ্ন

উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্সে আকছার হয়। দক্ষিণবঙ্গে একেবারে হয় না, তা নয়। সংখ্যায় কম। কিন্তু, শুক্রবার রাতে বাঁকুড়ায় ট্রেনের ধাক্কায় এক সঙ্গে তিন-তিনটি হাতির মৃত্যু ফের তুলেছে সেই অমোঘ প্রশ্ন। কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ এবং রেল মন্ত্রকের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হওয়া সত্ত্বেও কেন হাতির করিডর বলে পরিচিত এলাকায় ট্রেনের গতি নিয়ন্ত্রণ করা হবে না?

কংসাবতী নদীতে দলছুট হাতিরা। ঝাড়গ্রামে দেবরাজ ঘোষের তোলা ছবি।

কংসাবতী নদীতে দলছুট হাতিরা। ঝাড়গ্রামে দেবরাজ ঘোষের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৬ ০৩:১৬
Share: Save:

উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্সে আকছার হয়। দক্ষিণবঙ্গে একেবারে হয় না, তা নয়। সংখ্যায় কম। কিন্তু, শুক্রবার রাতে বাঁকুড়ায় ট্রেনের ধাক্কায় এক সঙ্গে তিন-তিনটি হাতির মৃত্যু ফের তুলেছে সেই অমোঘ প্রশ্ন। কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ এবং রেল মন্ত্রকের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হওয়া সত্ত্বেও কেন হাতির করিডর বলে পরিচিত এলাকায় ট্রেনের গতি নিয়ন্ত্রণ করা হবে না?

প্রশাসন সূত্রের খবর, রেল মন্ত্রক এবং রাজ্য বন দফতরের কাছে ঘটনার বিষয়ে বিশদে রিপোর্ট চেয়েছেন কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশমন্ত্রী অনিল মাধব দাভে। হাতি সংরক্ষণে একটি সুসংহত পরিকল্পনাও (রিজিওনাল ল্যান্ডস্কেপ প্ল্যান) নিয়েছে বন মন্ত্রক।

পিয়ারডোবা ও বিষ্ণুপুর স্টেশনের মাঝামাঝি গ্রাম ভালুকা ও ঘুঘুমুড়া। বিষ্ণুপুর থানার দুই লাগোয়া গ্রামের পাশ দিয়েই হাতি চলাচলের করিডর। মাঝে রেলপথ। রেল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ ৬টি হাতি রেললাইন পারাপারের সময় আপ খড়্গপুর-আদ্রা পাসেঞ্জারের সামনে এসে পড়ে। দু’টি ছোট হাতি ট্রেনের চাকার তলায় ঢুকে মারা যায়। বাচ্চাকে বাঁচাতে এসে ট্রেনের ধাক্কায় ছিটকে পড়ে মারা যায় মা হতিটিও। বিষ্ণুপুরের স্টেশন ম্যানেজার হরিদাস রায় জানান, ওই দুর্ঘটনার ফলে ইঞ্জিন বিকল হয়ে গিয়ে ট্রেনটি ঘুঘুমুড়ার কাছে ঘটনাস্থলেই থেমে পড়ে। পুরুলিয়া এক্সপ্রেসকে থামিয়ে দেওয়া হয় পিয়ারডোবা স্টেশনে। আদ্রা থেকে রেসকিউ ট্রেন এসে প্যাসেঞ্জার ট্রেনটিকে পিয়ারডোবায় নিয়ে যায়। ওই প্যাসেঞ্জার ট্রেনের যাত্রীদের পুরুলিয়া এক্সপ্রেসে তুলে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া হয়।

ডুয়ার্সে এই ধরনের ঘটনার পরেই রেল এবং বন দফতরের চাপানউতোরের যে ছবি দেখা যায়, বিষ্ণুপুরের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সামনে এসেছে দুই দফতরের সমন্বয়ের অভাবও। ডিএফও (বিষ্ণুপুর পাঞ্চেত বন বিভাগ) অয়ন ঘোষ এই দুর্ঘটনার জন্য রেলকেই দায়ী করেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমরা ওই রাস্তায় ট্রেনের গতি কমানোর জন্য অনেকদিন বলে এসেছি। কখনও শোনা হয়, কখনও হয়না। ফলে এ রকম দুর্ঘটনা বাড়ছে।’’ ঘুঘুমুড়ার অমল দাস কিংবা লাগোয়া মড়ার গ্রামের পরিতোষ ঘোষরা এ দিন দুর্ঘটনাস্থলের সামনে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘‘এই রেলপথের দু’ধারেই জঙ্গল হওয়ায় হাতিদের আনাগোনা বছরভর লেগে আছে। এক একটা দুর্ঘটনা হলেই বন দফতর রেলকে ওই করিডরে গতি কমাতে বলে। কিছুদিন মানা হয়। তার পরে যে কে সেই।’’

দক্ষিণ-পূর্ব রেলের আদ্রা ডিভিশনের সিনিয়র ডিসিএম ভাস্কর অবশ্য বলেন, ‘‘কোন দিন, কোন সময়ে, কোন এলাকায় রেললাইনের উপর দিয়ে হাতি চলাচল করতে পারে, এই মর্মে বন দফতর রেলকে জানায়। সেই মতো নির্দিষ্ট এলাকায় ট্রেনের গতি নিয়ন্ত্রিত করা হয়। কিন্তু, শুক্রবার রেললাইনের উপরে হাতির পাল উঠে আসবে বলে বন দফতর আগাম কোনও খবর রেলকে দেয়নি। তাই ওই রাতে স্বাভাবিক গতিতেই ট্রেন চালানো হয়েছে।”

যা শুনে বনকর্তারা ক্ষোভের সঙ্গে বলছেন, ‘‘হাতির গতিবিধি কি কেউ আগাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। যেটা তাদের যাতায়াতের স্বাভাবিক পথ, সেটা ধরে তারা যাবেই। কবে, কখন, তার একটা আভাস দিতে পারি। দিন-ক্ষণ-লগ্ন নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

elephant death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE