E-Paper

বালির দুই বুথ থেকে ছিনতাই ২৭৬টি ব্যালট, সেখানেও কি পুনর্নির্বাচনের নির্দেশ দেবে হাই কোর্ট?

সাঁকরাইলের মতো প্রায় একই ঘটনা ঘটায় বালি-জগাছা ব্লকের ওই দুই বুথেও কি নির্বাচন স্থগিত করে তদন্তের নির্দেশ দেবে আদালত? না কি, নির্বাচন কমিশন নতুন করে ভোট করানোর নির্দেশ দেবে?

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২৩ ০৫:৫৬
election.

—প্রতীকী ছবি।

গত ১১ জুলাই পঞ্চায়েত ভোটের গণনার দিন বালি-জগাছা ব্লকের গণনা কেন্দ্র দুর্গাপুর পল্লিমঙ্গল বিদ্যামন্দিরের দু’টি বুথ থেকে ছিনতাই হয়েছিল মোট ২৭৬টি ব্যালট পেপার। ওই ঘটনায় পরের দিন পুলিশের কাছেএফআইআর দায়ের করেন স্থানীয় বিডিও। এর পাশাপাশি, ঘটনাটি নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা করেছিলেন এক ব্যক্তি। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত বিডিও-কে নির্দেশ দিয়েছে, ওই দিন ঠিক কী হয়েছিল, তা তথ্য-সহ আজ, শুক্রবার কোর্টে পেশ করতে হবে। এ দিকে, ব্যালটছিনতাইয়ের ঘটনায় রাজ্য নির্বাচন কমিশন হাওড়ার সাঁকরাইলের ১৫টি বুথে পুনর্নির্বাচনের নির্দেশ দিয়ে বুধবার রাতে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, সাঁকরাইলের মতো প্রায় একই ঘটনা ঘটায় বালি-জগাছা ব্লকের ওই দুই বুথেও কি নির্বাচন স্থগিত করে তদন্তের নির্দেশ দেবে আদালত? না কি, নির্বাচন কমিশন নতুন করে ভোট করানোর নির্দেশ দেবে? মূলত এই দু’টি প্রশ্নই বৃহস্পতিবার দিনভর ঘুরপাক খেল হাওড়া জেলা প্রশাসন ও পুলিশ মহলে।

উল্লেখ্য, ১১ তারিখ সকাল থেকে ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে বালি-জগাছা ব্লকের দুর্গাপুর পল্লিমঙ্গল বিদ্যামন্দিরের সামনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলেছিল শাসক দল তৃণমূল ও সিপিএমের মধ্যে। হাতাহাতি, পুলিশকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ, পথ অবরোধ— কিছুই বাদ যায়নি। যার জেরে উত্তাল হয়ে উঠেছিল বালি-জগাছা ব্লক। দু’দলের মধ্যে দফায় দফায় মারপিটে উভয় পক্ষের অন্তত চার জন আহত হয়েছিলেন। এরই মধ্যে ওই দিন দুপুরে গণনা কেন্দ্রের পাঁচিলের পাশে একটা শুকনো নালায় তিন বান্ডিল ভোট দেওয়া (পোলড) ব্যালট পেপার উদ্ধারকে ঘিরে উত্তেজনা চরমে পৌঁছয়। সিপিএম দাবি করে, ওই ব্যালট পেপারগুলিতে দেখা গিয়েছে, তাদের প্রার্থীকেই ভোট দিয়েছেন মানুষ। তাই হেরে যাওয়ার আশঙ্কায় শাসক দল চূড়ান্ত গণনার আগে ওই ব্যালট পেপারগুলি ফেলে দিয়েছে।

যদিও জেলা প্রশাসনের বক্তব্য, বালির ৭ এবং ৮ নম্বর বুথ থেকে ছিনতাই হয়েছিল যথাক্রমে ৭৩টি ও ২০৩টি ব্যালট পেপার। যার মধ্যে ৭ নম্বর বুথে গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূল প্রার্থী পেয়েছিলেন ৩৫৪টি ভোট, বিজেপি পেয়েছিল ৭২টি ভোট এবং নির্দল প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট ছিল ১৮৬। যে হেতু ছিনতাই হওয়া ব্যালটের সঙ্গে বিজেপি এবং নির্দল প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটের যোগফল তৃণমূল প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটের চেয়ে কম ছিল, সেই কারণে ওই বুথে তৃণমূলকে জয়ী ঘোষণা করা হয়। একই ভাবে ৮ নম্বর বুথেও বিজেপি ও সিপিএম প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটের সঙ্গে ছিনতাই হওয়া ২০৩টি ব্যালটের যা যোগফল ছিল, তার চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী। তাই ওই কেন্দ্রেও শাসক দলকে জয়ী ঘোষণা করা হয়েছিল।

এই ঘটনার প্রতিবাদে গণনার দিনেই সিপিএমের সব এজেন্ট গণনা কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে আসেন। পরে তাঁরা জানান, বিষয়টি নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হবেন। এর পরেই এক ব্যক্তি ব্যালট পেপার উদ্ধারের ঘটনাটি নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা করেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার হাই কোর্ট বালি-জগাছার বিডিও-কে নির্দেশ দেয়, ১১ তারিখের যাবতীয় ভিডিয়ো ফুটেজ এবং প্রামাণ্য কাগজপত্র নিয়ে শুক্রবার তাঁকে আদালতে হাজির হতে হবে।

হাওড়া জেলা প্রশাসনের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘ওই দু’টি বুথে ব্যালট ছিনতাই হলেও উভয় ক্ষেত্রেই দু’জন প্রার্থী শতাধিক ও দু’শতাধিক ভোটে জয়লাভ করায় অঙ্কের নিয়মেই ওখানে ছিনতাই হওয়া ব্যালটের মূল্য অনেক কমে গিয়েছে। অর্থাৎ, ছিনতাই হওয়া ব্যালটের সংখ্যা ভোটের ব্যবধানের হিসাবের বাইরে রাখলেও জয়ী প্রার্থীরাই জিতবেন। তাই ওই দুই বুথে পুনর্নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা কম বলেই মনে হচ্ছে।’’

তবে জেলা প্রশাসনের বক্তব্য, বিষয়টি যে হেতু বিচারাধীন, তাই আদালতের নির্দেশ মতো কাজ হবে। এখন সাঁকরাইলের মতো বালি-জগাছা ব্লকের ওই দুই বুথে পুনর্নির্বাচন হয় কি না, আপাতত সে দিকেই তাকিয়ে জেলা প্রশাসনের কর্তারা।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

West Bengal Panchayat Election 2023 bali repoll

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy