বিভিন্ন কলেজে আসন-সংখ্যার অতিরিক্ত পড়ুয়া ভর্তি নিয়ে কিছু দিন ধরেই ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বুধবার বিধানসভায় দাঁড়িয়ে তিনি জানিয়ে দিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলির বেঁধে দেওয়া কোটার বাইরে কোনও কলেজেই কোনও ভাবে অতিরিক্ত ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা যাবে না।
শিক্ষামন্ত্রীর কথায়, বারবার নিষেধ করা সত্ত্বেও অনেক কলেজেই সমানে বাড়তি ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা হচ্ছে। এতে শিক্ষার মানোন্নয়নে ব্যাঘাত ঘটছে। এটা তাঁরা চলতে দেবেন না। কলেজে বাড়তি ছাত্রের ঠাঁই হবে না। ছাত্র ভর্তি করতে হবে শুধু অনলাইনেই। বাড়তি পড়ুয়া নিলে বাতিল হয়ে যাবে তাঁদের রেজিস্ট্রেশন।
ভর্তিতে স্বচ্ছতা রাখতে অনলাইন যে একমাত্র পথ, শিক্ষা শিবিরে সেই বিষয়ে দ্বিমত নেই। তবে তাদের বক্তব্য, অনলাইন মানে কেন্দ্রীয় অনলাইনই দরকার। তার বন্দোবস্ত না-করে নাম-কা-ওয়াস্তে কলেজে কলেজে নিজেদের মতো করে অনলাইন চালু রাখলে ছাত্র ভর্তিতে অনিয়ম এড়ানোর সম্ভাবনা নেই।
রাজ্যে কয়েক বছর আগে কেন্দ্রীয় অনলাইনে ছাত্র ভর্তির পরিকল্পনা হয়েছিল। পরে সরকারি ভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়, সেই পরিকল্পনা বাতিল করা হয়েছে। সেই যে বাতিল হল, তার পরে কেন্দ্রীয় অনলাইন নিয়ে সরকারের তরফে আর কোনও উচ্চবাচ্য করা হয়নি। যদিও শিক্ষা মহল এবং বিরোধী রাজনৈতিক শিবির থেকে কেন্দ্রীয় অনলাইনের মাধ্যমে ভর্তির দাবি জানানো হয়েছে দফায় দফায়। কিন্তু কেন্দ্রীয় ভাবে নয়, কলেজগুলি নিজেদের মতো করে অনলাইনে ছাত্র ভর্তি চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বারে বারেই অভিযোগ উঠছে, কেন্দ্রীয় ভাবে অনলাইনে ছাত্র ভর্তির ব্যবস্থা না-থাকায় অনেক কলেজই অতিরিক্ত পড়ুয়া ভর্তি করছে। আর সেটা চলছে ছাত্র সংসদের যোগসাজশেই। তাতে টাকারও লেনদেন চলে বলে জানিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রীই। ভর্তি-মরসুমের আগে তিনি যে বিধানসভায় ফের অতিরিক্ত ছাত্র ভর্তির বিরুদ্ধে সরব হলেন এবং অনলাইনে ভর্তির পক্ষে সওয়াল করলেন, সেটা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করছে শিক্ষা মহল।
বিরোধী শিবিরের বক্তব্য, এ ক্ষেত্রে শিক্ষামন্ত্রীও দায় এড়াতে পারেন না। কেননা ২০১৪ সালের মে মাসে শিক্ষামন্ত্রীর চেয়ারে বসেই কেন্দ্রীয় অনলাইনে ছাত্র ভর্তির সরকারি পরিকল্পনা বাতিল হচ্ছে বলে জানিয়েছিলেন পার্থবাবু। এখন তিনি ভর্তি নিয়ে গলদের কথা বললে সেই দায় তো তাঁর উপরেও বর্তায়। কেন্দ্রীয় ভাবে অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়া চালু না-হলে কলেজে কলেজে ভর্তির প্রক্রিয়ায় গলদ থেকেই যাবে। কেননা ভর্তি প্রক্রিয়ায় লাগাতার অনিয়মে ছাত্র সংসদগুলির যোগসাজশ যে বরাবরই থাকে, বারে বারে সেটা প্রমাণিত হয়েছে এবং হচ্ছে।
এ দিন বিধানসভায় প্রথম পর্বে শিক্ষা সংক্রান্ত প্রশ্নোত্তরের সময় দিনহাটার তৃণমূল বিধায়ক উদয়ন গুহ অতিরিক্ত প্রশ্ন করতে গিয়ে ওই অঞ্চলে একটি নতুন কলেজ গড়ার প্রস্তাব বিবেচনা করার জন্য শিক্ষামন্ত্রীর কাছে আবেদন জানান। উদয়নবাবুর বক্তব্য, তাঁর বিধানসভা কেন্দ্রে কলেজ মাত্র একটি। সেখানে প্রায় ১০ হাজার ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করেন। পার্থবাবু পাল্টা প্রশ্ন করেন, এত ছাত্রছাত্রী নিয়ে ওই কলেজটি চালানো হচ্ছে কেন, সবার আগে তো সেটাই জানা দরকার।
তৃণমূল বিধায়ক জ্যোতির্ময় করের অন্য একটি প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষামন্ত্রী জানান, উচ্চশিক্ষায় এ রাজ্যের ছাত্রছাত্রীরা যাতে মেধায় ও উৎকর্ষে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সফল হতে পারেন, সেটা নিশ্চিত করাই সরকারের লক্ষ্য। এই প্রসঙ্গেই তিনি জানিয়ে দেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটার বাইরে ছাত্র ভর্তি করা যাবে না। অনলাইনেই কলেজগুলিতে ভর্তি নিতে হবে। অতিরিক্ত পড়ুয়া ভর্তি হলে রেজিস্ট্রেশন বাতিলের ব্যবস্থা হবে। ক্ষোভের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘ভর্তি হয়ে ওরা ক্লাসও করে না। ওদের অনেকেরই হাজিরা ৬-৭ শতাংশ। তফসিলি জাতি, উপজাতি, অনগ্রসর শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য বৃত্তি আছে অনেক। ওরা শুধু সেগুলো পাওয়ার জন্য কলেজে নাম লেখায়।’’
কোনও কলেজে বাড়তি পড়ুয়া ভর্তি হলে সেই সব ছাত্র বা ছাত্রীর রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা হবে বলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে মঙ্গলবারেই। তার পরের দিনেই শিক্ষামন্ত্রী খাস বিধানসভায় এই বিষয়ে সওয়াল করায় শিক্ষাজগতের আশা, সরকার এ বার অনলাইনে ভর্তি নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। কেননা বাড়তি ছাত্র ভর্তি বন্ধ করার পথ সেটাই।
বিরোধী শিবির অবশ্য বলছে, অনলাইন মানে কেন্দ্রীয় অনলাইনই চাই। নইলে কলেজ প্রশাসন কোনও ভাবেই অতিরিক্ত ছাত্রছাত্রীর ভর্তির ব্যাপারটা আটকাতে পারবে না।