Advertisement
E-Paper

কমিশনারেট নামেই, শিল্পাঞ্চলে আবার খুন, এ বার শ্যামনগরে

যত কাণ্ড উত্তর ২৪ পরগনায়! এক দিকে, শিয়ালদহ-কৃষ্ণনগর মেন লাইন। অন্য দিকে, শিয়ালদহ-বনগাঁ লাইন। এক পাশে, বি টি রোড। অন্য পাশে, যশোহর রোড। এক ধারে, ব্যারাকপুর ও নৈহাটি শিল্পাঞ্চল। অন্য ধারে, বারাসত-মধ্যমগ্রাম-দত্তপুকুর। উত্তর ২৪ পরগনার অত্যন্ত জলবহুল ও বিস্তীর্ণ এই অংশ যেন এখন অপরাধের ‘মুক্তাঞ্চল’!

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৫ ০৪:০১
প্রশান্ত দাসের বাড়িতে শমীক ভট্টাচার্য। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।

প্রশান্ত দাসের বাড়িতে শমীক ভট্টাচার্য। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।

যত কাণ্ড উত্তর ২৪ পরগনায়!

এক দিকে, শিয়ালদহ-কৃষ্ণনগর মেন লাইন। অন্য দিকে, শিয়ালদহ-বনগাঁ লাইন। এক পাশে, বি টি রোড। অন্য পাশে, যশোহর রোড। এক ধারে, ব্যারাকপুর ও নৈহাটি শিল্পাঞ্চল। অন্য ধারে, বারাসত-মধ্যমগ্রাম-দত্তপুকুর। উত্তর ২৪ পরগনার অত্যন্ত জলবহুল ও বিস্তীর্ণ এই অংশ যেন এখন অপরাধের ‘মুক্তাঞ্চল’! কখনও প্রকাশ্যে ফ্লাইওভারের উপরে গাড়ি ধাওয়া করে আরোহীদের গুলি করে মারে মোটরবাইকে সওয়ার একদল আততায়ী। কখনও আবার সিন্ডিকেট নিয়ে দ্বন্দ্বে খুন। আবার কখনও সমাজবিরোধীদের দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে এলাকা রক্তাক্ত হতে গেখেছেন সাধারণ মানুষ। অপরাধের সেই তালিকাতেই সর্বশেষ সংযোজন, শ্যামনগরে এক পঁচিশ বছরের যুবককে গুলি করে খুন।

ছোটখাটো একটা চায়ের দোকান ছিল পঁচিশ বছরের অভিষেক রাজভড়ের। আয় বাড়াতে বিরিয়ানির দোকান খোলার ইচ্ছে ছিল তাঁর। কিছু বন্ধুর সঙ্গে বাড়ির কাছেই সেই দোকান করেওছিলেন অভিষেক। রবিবার ছিল দোকান খোলার দিন। তার আগের রাতেই দুষ্কৃতীদের গুলিতে প্রাণ হারালেন শ্যামনগরের পিনকল মোড়ের বাসিন্দা অভিষেক। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, শনিবার রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ বাড়িতে ফিরে খেতে বসেছিলেন অভিষেক। দুষ্কৃতীরা তাঁর নাম ধরে ডাকে বাইরে থেকে। তিনি বেরোতেই আততায়ীদের দু’টি গুলি মাথা ফুঁড়ে দেয় অভিষেকের। নিহতের এক বন্ধু সাগর মাহাত বলেন, ‘‘আগে কিছু ঝামেলায় জড়ালেও ওর বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে কোনও অভিযোগ ছিল না। আর ইদানীং দোকান নিয়েই ব্যস্ত থাকত। ব্যবসা বাড়াতেও চাইছিল। তার পরেও কেন এই খুন, বুঝতে পারছি না।’’

যে বাড়িতে ভাড়া থাকতেন অভিষেক, কয়েক মাস আগে তার মালিকানা বদল হয়েছে। অভিযোগ, তার পর থেকেই বাড়িওয়ালার সঙ্গে গোলমাল বাধে অভিষেকদের। নিহতের মা রামকলিদেবীর অভিযোগ, ‘‘পঞ্চাশ বছর ধরে এখানে ভাড়া আছি। কিন্তু, এখন বাড়িওয়ালা তুলে দিতে চেয়ে হুমকি দিচ্ছে।’’ পুলিশকে সে কথা মৌখিক ভাবে জানিয়েছেন রামকলি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে ব্যারাকপুর কমিশনারেটের পুলিশ। কয়েক জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। বাড়িওয়ালার সঙ্গে এ দিন যোগাযোগ করা যায়নি।

সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক খুন-জখমের ঘটনায় কমিশনারেটের উপরে আর ভরসা রাখতে পারছেন না ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের মানুষ। গোটা ব্যারাকপুর মহকুমাই এই কমিশনারেটের আওতায়। দিন-রাত রাস্তা দিয়ে ছুটছে নীল বাতি লাগানো পুলিশ-গাড়ি। কর্তারা বৈঠকের পর বৈঠক করছেন। কিন্তু, অপরাধ কমছে না। এলাকার মানুষের অভিযোগ, মধ্যমগ্রামে জোড়া খুনের মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে ঘটনার কিনারা কার্যত করে ফেলেছে জেলা পুলিশ। কিন্তু, ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের অধিকাংশ অপরাধেরই কিনারা হয়নি। বরং পুলিশের বিরুদ্ধেই উঠে গিয়েছে এক যুবককে গুলি করে মারার অভিযোগ। টিটাগড়ে শুক্রবার রাতে পুলিশের গুলিতে প্রশান্ত দাস (২৫) নামে ওই যুবকের মৃত্যুর অভিযোগকে ঘিরে ব্যাপক জনরোষ ছড়িয়েছে। শনিবার সন্ধ্যা থেকে টিটাগড়ের কাঁঠালিয়া মোড়ে ব্যারাকপুর-বারাসত রোডে প্রশান্তর মৃতদেহ রেখে প্রায় ঘণ্টা দেড়েক অবরোধ করে জনতা। চাপে পড়ে টিটাগড় থানার এক সাব ইন্সপেক্টরকে ক্লোজ করা হয়েছে রবিবার। পুলিশই এফআইআর করেছে পাঁচ পুলিশকর্মীর নামে। শেষ পর্যন্ত সিআইডি তদন্তেরও সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এখানেই শেষ নয়। বুধবার রাতে জগদ্দলের কয়রাপুর খালের কাছে গুলিবিদ্ধ দু’টি দেহ উদ্ধারের ঘটনায় নদিয়া পুলিশ নিহতদের নাম-ঠিকানা জানতে পেরে গিয়েছিল ওই সন্ধ্যাতেই। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের পুলিশ অবশ্য রাত পর্যন্ত নিহতদের ‘অজ্ঞাতপরিচয়’ বলেই দাবি করে গিয়েছে। সব মিলিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে ক্রমেই ক্ষোভ জমছে। প্রশ্ন উঠেছে, জেলা পুলিশের থেকে অনেক বেশি পরিকাঠামো নিয়েও ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের এই হাল কেন?

রবিবার দুপুরে তেলেনিপাড়ায় প্রশান্তর বাড়িতে গিয়েছিলেন বিজেপি বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য। সেখানে ছিলেন তৃণমূল এবং সিপিএমের স্থানীয় নেতারাও। শমীকবাবু বলেন, ‘‘এই কমিশনারেটে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন লাগাতার উঠছে। আমরা নিরপেক্ষ তদন্ত চাই।’’ কংগ্রেস নেতা সম্রাট তপাদার বলেন, ‘‘অবিলম্বে ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনারকে বদলির দাবি জানাচ্ছি আমরা। দিনের পর দিন বোমাবাজি আর খুনের ঘটনা ঘটছে। নির্বাচনের পর থেকে বস্তা-বোঝাই বোমা মিলছে, যথেচ্ছ বোমাবাজি হচ্ছে। কিন্তু পুলিশ শুধুই দৌড়ে বেড়াচ্ছে।’’ সিপিএম নেত্রী গার্গী চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘নিরাপত্তা শব্দটাই এখন ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল থেকে হারিয়ে গিয়েছে।’’

শনিবার রাতের ঘটনায় পুলিশ কমিশনার নীরজকুমার সিংহের সঙ্গে বহু বার টেলিফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। অধস্তন পুলিশকর্মীরা জানাচ্ছেন, সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলায় ‘নিষেধ’ রয়েছে কমিশনারের।

shyamnagar security police bjp titagarh samik bhattacharya
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy