Advertisement
১১ মে ২০২৪

অধীর-গড় ভেঙে যুব সভাপতিও এ বার তৃণমূলে

লোকসভা ভোটের পরেও কংগ্রেসে ভাঙন অব্যাহত। ভাঙনের ধাক্কা এখন পৌঁছে যাচ্ছে স্বয়ং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা ডাকসাইটে নেতা অধীর চৌধুরীর গড় মুর্শিদাবাদেও! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে গিয়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন কংগ্রেসের তিন বিধায়ক অসিত মাল, উমাপদ বাউড়ি ও গোলাম রব্বানি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৪ ০২:৩৫
Share: Save:

লোকসভা ভোটের পরেও কংগ্রেসে ভাঙন অব্যাহত। ভাঙনের ধাক্কা এখন পৌঁছে যাচ্ছে স্বয়ং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা ডাকসাইটে নেতা অধীর চৌধুরীর গড় মুর্শিদাবাদেও!

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে গিয়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন কংগ্রেসের তিন বিধায়ক অসিত মাল, উমাপদ বাউড়ি ও গোলাম রব্বানি। এ বার দল ছেড়ে দিচ্ছেন যুব কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি সৌমিক হোসেন। মুর্শিদাবাদের প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ মান্নান হোসেনের পুত্র সৌমিকের আজ, শুক্রবারই তৃণমূল ভবনে সদলবল শাসক দলে যোগ দেওয়ার কথা। সৌমিকের পাশাপাশি তাঁর বাবাকে নিয়ে নানা জল্পনা থাকলেও মান্নান অবশ্য জানাচ্ছেন, তিনি এখন দলত্যাগ করছেন না। এ দিকে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের দাবি, গোটা যুব কংগ্রেসই মিশে যাচ্ছে তৃণমূলে!

প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দীপা দাশমুন্সির সমর্থিত প্রার্থীকে হারিয়ে গত বছরের এপ্রিলে যুব কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন সৌমিক। এই ১৬ মাস যুব কংগ্রেসের দায়িত্বে থেকে তাঁর মনে হয়েছে, স্বাধীন ভাবে কাজ করা এখন আর কংগ্রেসে সম্ভব নয়। জেলা কংগ্রেস রাজনীতিতেও মান্নান পরিবারকে কোণঠাসা করার চেষ্টা হচ্ছে। এই অভিমানের কথা কংগ্রেসের মধ্যে চাউর হয়ে গেলেও প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি মানস ভুঁইয়া ছাড়া দলের রাজ্য স্তরের আর কোনও শীর্ষ নেতাই সৌমিককে দলে ধরে রাখার চেষ্টা করেননি। প্রদেশ নেতৃত্বের প্রতি অভিমান নিয়েই সৌমিক বৃহস্পতিবার বলেছেন, “আমার বাবা এবং আমাকে পদে পদে অসম্মান করা হচ্ছে। অনেক চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু আর কোনও উপায় দেখছি না। কংগ্রেসেরই একাংশ তো আগেই আমাকে তৃণমূলে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন! এ বার সত্যি সত্যিই দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

বেশ কিছু দিন ধরেই জল্পনা চলছিল, মান্নান-সৌমিকেরা দল ছাড়ছেন। সেই প্রচারে কংগ্রেসেরই একাংশের মদত ছিল বলে সৌমিকের অভিযোগ। তবে ছেলে তৃণমূলে চলে গেলেও মান্নান এখনও বলছেন, “হাফ প্যান্ট পরা অবস্থা থেকে কংগ্রেসটা করছি। অনেক যন্ত্রণা হচ্ছে। কিন্তু এখনই দল ছাড়ছি না।” মান্নান-ঘনিষ্ঠদের অভিযোগ, মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রে তাঁকে হারানোর পিছনে কংগ্রেসেরই একাংশের হাত ছিল। সৌমিকের দলত্যাগের সেটাও একটা বড় কারণ। প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব অবশ্য এমন অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলেই উড়িয়ে দিচ্ছেন।

অধীর, যুব সভাপতি সৌমিক, পরিষদীয় দলনেতা মহম্মদ সোহরাব তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদই জেলার দখলে থাকায় বিশেষ গর্ব ছিল মুর্শিদাবাদ কংগ্রেসের। সেই গর্বেও চিড় ধরল! সৌমিকের অভিযোগ, যুব কংগ্রেস থেকে কিছু মুখকে লোকসভা ভোটে সুযোগ দেওয়া রাহুল গাঁধীর পরিকল্পনা হলেও রাজ্যে তা হয়নি। মুর্শিদাবাদের মতো জেলায় কংগ্রেসের কয়েক জন বিধায়ক দলকে লোকসভায় ‘লিড’ দিতে পারেননি। তা নিয়ে কোনও তদন্ত হয়নি। তাঁদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণেই ডোমকলের এক নেতাকে ‘শাস্তি’ পেতে হয়। সর্বশেষ লালবাগে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান ঘিরে মান্নানকে অসম্মানিত হতে হয়েছে।

ঘটনাচক্রে, হুমায়ুন কবীর, ইমানি বিশ্বাস, সৌমিকসাম্প্রতিক কালে মুশির্দাবাদে দলত্যাগী কংগ্রেস নেতাদের বেশির ভাগই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। পরিস্থিতি বুঝে মুকুলবাবু দাবি করেছেন, সাম্প্রদায়িক শত্তির বিরুদ্ধে বাংলায় লড়াই করার মতো একমাত্র শক্তি এখন তৃণমূলই। তাঁর আরও বক্তব্য, “ব্যক্তি সৌমিক হোসেন বলে নয়, যুব কংগ্রেস মিশে যাচ্ছে তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সঙ্গে। কারণ, যুব কংগ্রেসের ৪২টি লোকসভা এলাকার সভাপতিদের মধ্যে ৩২ জনই তাঁদের কর্মীদের নিয়ে তৃণমূলে যোগ দেবেন। মনে রাখতে হবে, এই সভাপতিরা সবাই কিন্তু নির্বাচিত!” প্রদেশ সভাপতি অধীরের অবস্থান হল, নেতারা দল ছেড়ে গেলে উদ্বেগের কিছু নেই। কর্মীরা আছেন। তিনি এ দিন অবশ্য নতুন করে মন্তব্য করতে চাননি। তবে প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তীর বক্তব্য, “যে যেমন খুশি দাবি করতেই পারেন। কিন্তু সৌমিক নিজের জেলার তিনটি লোকসভা কেন্দ্রের এক জন যুব সভাপতিকেও সঙ্গে পাচ্ছেন না। যুব রাজ্য কমিটিরও প্রায় কেউই যাচ্ছেন না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

adhir chowdhury tmc congress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE