লোকসভা ভোটে পশ্চিমবঙ্গে দলের প্রার্থী মনোনয়ন করতে গিয়ে ঈষৎ আতান্তরে পড়েছে কংগ্রেস। এ বারের ভোটে দলের বর্তমান বিধায়ক এবং প্রথম সারির নেতাদের কয়েক জনকে প্রার্থী করার ভাবনা-চিন্তা রয়েছে দলের অন্দরে। অথচ সে কথা তাঁদের কাছে পাড়তেই গররাজি হয়ে যাচ্ছেন কেউ কেউ!
এ বার ভোটে কংগ্রেসের মরণ-বাঁচন লড়াই। বিভিন্ন সমীক্ষার ইঙ্গিত, কেন্দ্রে কংগ্রেস ক্ষমতায় ফিরছে না। পশ্চিমবঙ্গেও তাদের অবস্থা সঙ্গিন। প্রায় দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া পশ্চিমবঙ্গে দলকে ঘুরে দাঁড় করাতে ভোটের মাত্র দু’মাস আগে রেল প্রতিমন্ত্রী তথা বহরমপুরের দাপুটে নেতা অধীর চৌধুরীকে প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি করেছেন রাহুল গাঁধী। দেরিতে হলেও রাহুলের উদ্দেশ্য একটাই, রাজ্যে কংগ্রেসকে ফের লড়াইয়ে নিয়ে আসা।
অধীরও চান, ভোটে তৃণমূলে ধস নামাতে মজবুত প্রার্থী দিতে।
কিন্তু যাঁদের কথা ভেবেছেন, তাঁদের অনেকেই প্রার্থী-প্রস্তাবে রাজি হচ্ছেন না।
অধীর দুই প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য এবং মানস ভুঁইয়াকে প্রার্থী করতে চেয়েছিলেন। সেই সঙ্গে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন হুগলির কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান এবং নদিয়ার শঙ্কর সিংহকেও। কিন্তু সেই প্রস্তাব নানা কারণ দেখিয়ে সকলেই ফিরিয়ে দিয়েছেন বলে কংগ্রেসের একটি সূত্রের ইঙ্গিত। এ ব্যাপারে মানসবাবুকে প্রশ্ন করা হলে তাঁর বক্তব্য, তাঁকে জাতীয় স্তরে প্রচার কমিটির সদস্য করা হয়েছে। নিজে প্রার্থী হয়ে লড়াইয়ের সময় দেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। অধীর ঘাটালে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন মানসবাবুর স্ত্রী গীতা ভুঁইয়াকেও। কিন্তু গীতাদেবীরও বক্তব্য, “আমি প্রার্থী হচ্ছি না।” আর প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপবাবুর কথায়, “আমার মুখ পশ্চিমবঙ্গের মানুষ অনেকে দেখেছে। আর কেন! বরং নতুন প্রজন্মের নেতাদের সুযোগ করে দেওয়া হোক। নবীনদের সেই লড়াইয়ে প্রবীণেরা সব রকম ভাবে পাশে থাকুন।”
অবশ্য ব্যতিক্রমও আছে। সোমেন মিত্রের মতো প্রবীণ কংগ্রেস নেতা ইতিমধ্যেই কলকাতা উত্তর কেন্দ্রে প্রার্থী হতে দ্বিধা করেননি।
আসলে অধীর চাইছেন, কংগ্রেসের ভোট বাড়াতে ওজনদার নেতাদের দাঁড় করাতে। এখন পর্যন্ত সোমেনবাবুই সরাসরি অধীরের সেই লক্ষ্যপূরণের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন।
মজার বিষয় হল, কংগ্রেসের প্রবীণেরা যখন ঝুঁকি নিতে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি-র বর্ষীয়ান নেতারা কিন্তু অনেকেই ভোটে লড়তে এগিয়ে এসেছেন। বিভিন্ন সমীক্ষায় বিজেপি-র উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখেই অনেকে এগিয়ে আসছেন বলে একটি সূত্রের ব্যাখ্যা। কিন্তু কলকাতা উত্তর ও দক্ষিণে যেখানে তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি, সেখানেও প্রার্থী হওয়ার ঝুঁকি নিয়েছেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি রাহুল সিংহ ও প্রাক্তন সভাপতি তথাগত রায়। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তপন শিকদার, সত্যব্রত মুখোপাধ্যায়ও প্রার্থী হয়েছেন। স্বভাবতই দলের অন্দরে প্রশ্ন উঠছে, সাহস দেখানোর পরীক্ষায় প্রথমেই কি ধাক্কা খেল না কংগ্রেস? অধীরের বক্তব্য, “জোর করে তো আর কাউকে প্রার্থী করতে পারি না! তবে এ বার আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করব তৃণমূলের বিরুদ্ধে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy