শেষমেশ চৌমণ্ডলপুর ও মাখড়া থেকে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহারই করে নিল জেলা প্রশাসন। গত ২৬ অক্টোবর থেকে টানা ১২ দিন ধরে ওই এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি রেখে ব্যারিকেড গড়ে বারবার রাজনৈতিক প্রতিনিধিদলের এলাকায় ঢুকতে বাধা দিয়েছে। মাঝে অবশ্য মহরম উপলক্ষে প্রশাসন দু’দিন ওই ১৪৪ ধারা শিথিল করেছিল। শুক্রবার বোলপুরের মহকুমাশাসক মলয় হালদার বলেন, “আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির পর্যালোচনা করার পরেই পাড়ুই থানার মঙ্গলডিহি এবং বাতিকার পঞ্চায়েত এলাকা থেকে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হয়েছে।” বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, ওই এলাকায় ১৪৪ ধারা জারির পিছনে রয়েছে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণ। তাঁদের দাবি, এলাকায় কোণঠাসা হয়ে পড়া শাসক দলকে সুবিধা করে দিতেই ১৪৪ ধারা জারি রেখে বিরোধীদের ওই দুই গ্রামে ঢুকতে দেওয়া হতো না। পুলিশের অবশ্য যুক্তি, চৌমণ্ডলপুর ও মাখড়ায় গণ্ডগোল পরবর্তী সময়ে আশান্তির আশঙ্কা করেই এত দিন ওই ধারা বলবত রাখা হয়েছিল।
বস্তুত, শিথিল হওয়ার দিন থেকেই স্বাভাবিক হতে শুরু করেছিল চৌমণ্ডলপুর ও মাখড়া। এ দিন ১৪৪ ধারা সম্পূর্ণ রূপে প্রত্যাহারের খবর পেয়ে ছন্দে ফিরতে শুরু করেন এলাকার মানুষ। এ দিনই আবার পঞ্চায়েতের প্রাথমিক স্কুলগুলির বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় তাক লাগিয়ে দিয়েছে মাখড়া প্রাথমিক স্কুলের ছেলেমেয়েরা। পঞ্চায়েতের স্থানীয় কুষ্টিগিরিতে অনুষ্ঠিত ওই প্রতিযোগিতায় এলাকার ১৩টি প্রাথমিক স্কুলের শতাধিক পড়ুয়ারা যোগ দেয়। আয়োজকেরা জানিয়েছেন, ১০০ ও ২০০ মিটার দৌড় এবং হাইজাম্প প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান পেয়েছে মাখড়ার ছাত্রছাত্রীরা। এ ছাড়াও একাধিক বিভাগে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান দখল করেছে তারা। ইলামবাজার নবচক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক (প্রাথমিক) প্রশান্ত কবিরাজ বলেন, “এলাকা স্বাভাবিক হতেই মাখড়া প্রাথমিক স্কুলের কচিকাঁচারা খেলায় যোগ দিচ্ছে দেখে খুব ভাল লাগছে। তবে, শুধু যোগ দেওয়ায় নয়, ওরা রীতিমতো একাধিক বিভাগে প্রথম স্থানও দখল করেছে। এটা সত্যিই খুব ভাল একটা দিক।”
এমনিতে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় মাখড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা বরাবর ভাল ফল করে। স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক তথা গেম টিচার শেখ নিয়াজুদ্দিন মণ্ডল জানান, স্কুল থেকে পাঁচ ছেলে ও চার মেয়ে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়েছিল। চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়া জামিলা খাতুন ১০০ ও ২০০ মিটার দৌড়ে প্রথম স্থান পেয়েছে। তারই সহপাঠী শেখ মইনউদ্দিন আবার হাইজাম্পে প্রথম হয়েছে। পাশাপাশি শেখ হাসিনা, মিলন শেখ-সহ স্কুলের একাধিক পড়ুয়া নানা বিভাগে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান পেয়েছে। নিয়াজুদ্দিন বলছেন, “পড়ুয়াদের এই সাফল্যে আমরা গর্বিত। এ রকম একটা সময় কাটিয়েও ওরা যে সাফল্য দেখাল, তা সত্যিই অভাবনীয়।” আর পড়ুয়ারা বলছে, “স্যার রয়েছেন। পুলিশও আছে। আর ভয় কীসের!”
ঘটনা হল, গত ২৭ অক্টোবর সংঘর্ষ চলাকালীন মাখড়ার ওই প্রাথমিক স্কুলে ক্লাস চলছিল। তার পর থেকেই আতঙ্কিত পড়ুয়ারা আর স্কুলমুখো হয়নি। অথচ স্কুল খোলা থাকছিল স্বাভাবিক নিয়মেই। সেখানে পুলিশ ক্যাম্প বসলেও প্রধান শিক্ষক শেখ ফজলুল হক, সহকারী প্রধান শিক্ষক শেখ নিয়াজুদ্দিন মণ্ডল-সহ অন্য দুই শিক্ষক প্রতিদিন এসে স্কুল খোলা রেখেছিলেন। কিন্তু আতঙ্ক কাটিয়ে পড়ুয়াদের সেখানে আসতে দেখা যেত না। মহরমের আগে ১৪৪ ধারা শিথিল হতে স্কুলের ১৫৬ পড়ুয়ার মধ্যে ৫ শতাংশ পড়ুয়ারা হাজির হতে শুরু করে। প্রধান শিক্ষকের আশা, এ বার হয়তো পুরোদমে ক্লাস শুরু হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy