Advertisement
০৩ মে ২০২৪

অবসরের ইচ্ছা বুদ্ধের, ঠেকালেন বাকিরা

ভাবছি, এ বার ঘুরে দাঁড়ানোই ভাল। লাইনটা লিখেছিলেন কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়। রাজ্যের সাহিত্যানুরাগী প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ‘ঘুরে দাঁড়ানো’ কথাটা প্রথম ব্যবহার করতে শুরু করেছিলেন নিজের দলকে চাঙ্গা করার লক্ষ্যে। কিন্তু ভোটে লাগাতার বিপর্যয়ের পরে সেই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যই এখন ভাবছেন, সরে দাঁড়ানোই ভাল! বস্তুত, শুধু ভাবছেনই না। তাঁর ওই ভাবনার কথা দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে জানিয়েও দিয়েছেন সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য বুদ্ধবাবু।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৪ ০২:৫৭
Share: Save:

ভাবছি, এ বার ঘুরে দাঁড়ানোই ভাল। লাইনটা লিখেছিলেন কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়। রাজ্যের সাহিত্যানুরাগী প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ‘ঘুরে দাঁড়ানো’ কথাটা প্রথম ব্যবহার করতে শুরু করেছিলেন নিজের দলকে চাঙ্গা করার লক্ষ্যে। কিন্তু ভোটে লাগাতার বিপর্যয়ের পরে সেই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যই এখন ভাবছেন, সরে দাঁড়ানোই ভাল!

বস্তুত, শুধু ভাবছেনই না। তাঁর ওই ভাবনার কথা দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে জানিয়েও দিয়েছেন সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য বুদ্ধবাবু। লোকসভা ভোটে বেনজির বিপর্যয়ের পরে প্রথম রাজ্য কমিটির বৈঠকে জেলার নেতাদের মনোভাব বুঝতে আলিমুদ্দিনে হাজির ছিলেন সিপিএমের তিন শীর্ষ নেতা প্রকাশ কারাট, সীতারাম ইয়েচুরি ও মানিক সরকার। এই অবসরেই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের জানিয়ে দিয়েছেন, আর নয়। দলের ভিতরে-বাইরে এত লোক যখন মনে করছে মুখ না বদলানোই এমন লাগাতার ভরাডুবির কারণ, তার পরে তিনি আর বোঝা হয়ে থাকতে চান না। দলের পলিটব্যুরো বা কেন্দ্রীয় কমিটিতে তাঁকে আর বিবেচনা না করার কথা সরাসরিই কারাটদের বলে দিয়েছেন তিনি। দলের শীর্ষ নেতাদের ধারণা, রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী নিয়ে আলাদা করে কথা না হলেও ওই পদেও আর থাকার পক্ষপাতী নন প্রমোদ দাশগুপ্তের এক সময়ের প্রিয় শিষ্য।

তিন বছর আগে বিধানসভা ভোটে পরাজয়ের পরে পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে ইস্তফাই দিয়ে দিয়েছিলেন বুদ্ধবাবু। এ বার তেমন কিছু তিনি করেননি। কিন্তু এ বার সিপিএমের সঙ্কট আরও ঘোরালো। কারণ, রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুও বুদ্ধবাবুর মতোই পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর পক্ষে। রাজ্য কমিটির বৈঠকের প্রথম দিন এ বার দলের সহকর্মীদের ক্ষোভ স্বকর্ণে শুনে সে দিন সন্ধ্যাতেই রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর ঘরে বুদ্ধবাবু কারাটদের বলেছিলেন, তাঁকে পরের দিন বলার অনুমতি দেওয়া হোক। রাজ্য কমিটির মঞ্চে দাঁড়িয়েই তিনি বিদায় চেয়ে নিতে চান। তাতে প্রমাদ গুনে কারাটেরা ফের তাঁকে নিরস্ত করেছেন। এবং ঝুঁকি নিতে না চেয়ে বুদ্ধবাবুকে রাজ্য কমিটিতে বলতেই দেওয়া হয়নি! দু’দিন যাবৎ আলিমুদ্দিনে এসে নিজেকে একেবারে গুটিয়েই রেখেছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী।

সিপিএম সূত্রের বক্তব্য, দলের শীর্ষ নেতার ইনিংস থেকে কার্যত অবসরই নিতে চেয়েছেন বুদ্ধবাবু। তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রের ব্যাখ্যা, একে তো বিপর্যয়ের জন্য যে পারছে, সে-ই তাঁকে কাঠগড়ায় তুলছে। ভোট মিটে যাওয়া এবং ফলপ্রকাশের মাঝের সময়ে কলকাতা প্রেস ক্লাবের আহ্বানে সাড়া দিয়ে তাঁর অন্যতম প্রিয় লেখক গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের স্মরণ-অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। সেটাকেও আক্রমণের বিষয়বস্তু বানিয়ে ফেলা হয়েছে! এই অবস্থায় পদ আঁকড়ে থাকার অর্থ হয় না। তা ছাড়া, দলের অন্দরে ক্ষোভের আঁচকে কাজে লাগিয়ে আসন্ন পার্টি কংগ্রেসে তাঁকে পলিটব্যুরো থেকে অব্যাহতিই দেওয়া হতে পারে। প্রকাশ্যে অবশ্য দেখানো হবে শারীরিক কারণ। তার চেয়ে তাঁর নিজেরই সরে যাওয়া ভাল। দলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “আপাতত ঠেকিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু বুদ্ধদা ব্যাপারটাকে যে ভাবে নিয়েছেন, তাতে তাঁকে আটকে রাখলেও অনিচ্ছুক ঘোড়াকে জল খাওয়ানোর চেষ্টার সামিল হবে!”

বুদ্ধ-বিমান এখনই সরে গেলে শূন্যতা ভরাট করা যে মুশকিল হবে, বুঝতে পারছেন সিপিএমের রাজ্য নেতারাও। সিপিএম সূত্রের খবর, বুদ্ধবাবুকে নিরস্ত করতে সেই রাতে কারাটদের পাশাপাশি সব চেয়ে সক্রিয় হয়েছিলেন রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য গৌতম দেব। তিনি বুদ্ধবাবুকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, এখন হাহাকারের সময় নয়! নিজের শরীরের জন্য কলকাতার বাইরে না গেলেও এ বার কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে যোগ দিতে দিল্লি যাওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন গৌতমবাবু। কোনও প্রক্রিয়ার তোয়াক্কা না করে রাতারাতি নেতৃত্বের পদত্যাগের পক্ষপাতী নন দলের পলিটব্যুরো সদস্যও সূর্যকান্ত মিশ্রও। প্রকাশ্যে অবশ্য দলের অন্দরের এই কাহিনির সত্যতা স্বীকার করেননি সূর্যবাবু। তাঁর মন্তব্য, “এ সবই গল্প! বাস্তবের সঙ্গে মিল নেই!”

কারাট-মানিকেরা আপাতত ভবিষ্যতের পথ সন্ধান শুরু করেছেন। প্রথমে ভাবা হচ্ছিল, সম্মেলন প্রক্রিয়া এগিয়ে এনে নেতৃত্বে রদবদল যা করার, করা হবে। কিন্তু বাংলার সিপিএম নেতাদের ধারণা হয়েছে, আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরে ১৭টি পুরসভার সঙ্গে কলকাতা-সহ অন্য ৮২টি পুরসভার ভোটও সেরে ফেলতে চাইতে পারে রাজ্য সরকার। যে পুরসভাগুলির ভোট পরের বছর এপ্রিল-মে’তে নির্ধারিত ছিল।

রাজ্যে ৯৯টি পুরসভা এবং শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের ভোট শেষ পর্যন্ত একসঙ্গে হওয়া মানে তা কার্যত মিনি সাধারণ নির্বাচনের চেহারা নেবে। সত্যিই তেমন হলে ওই সময় সম্মেলন করা সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। তাই করণীয় কী, এই প্রশ্নে দিশাহীনতা নিয়েই দিল্লিতে পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে যোগ দিতে যাচ্ছেন বিমানবাবুরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

buddha karat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE