রাত বাড়লেই ফুরফুরে দখিনা হাওয়া মিলছে দক্ষিণবঙ্গে। গরমের জ্বালাও কিছুটা জুড়োচ্ছে। কিন্তু সকাল হতে না হতেই সেই স্বস্তিটা উধাও। রোদে বেরোলেই দরদর করে ঘাম হচ্ছে, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অস্বস্তিও। আবহবিদেরা বলছেন, দিনের এই অস্বস্তির পিছনে দায়ী রাতের দখিনা হাওয়া-ই। কেন?
আবহবিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা, বঙ্গোপসাগরের উপরে পর্যাপ্ত জলীয় বাষ্প মজুত রয়েছে। দখিনা হাওয়ার ধাক্কায় সেই জলীয় বাষ্পই ঢুকছে দক্ষিণবঙ্গের পরিমণ্ডলে। হাওয়ার জোর যত বাড়বে, ততই সে জলীয় বাষ্প বয়ে নিয়ে আসবে। বাড়বে আর্দ্রতাও-অস্বস্তি। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের বিজ্ঞানী গণেশকুমার দাস শনিবার বলেন, “দক্ষিণবঙ্গে এখন দখিনা হাওয়া খুবই জোরালো ভাবে বইছে।” আগামী কয়েক দিনও কলকাতা-সহ গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে এমনই অস্বস্তি থাকবে বলেই হাওয়া অফিস সূত্রের খবর।
এই অস্বস্তিতে কিছুটা রেহাই দিচ্ছে তাপমাত্রা। কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে এখন তাপমাত্রা তুলনায় অনেক কম। এ দিন কলকাতায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা এ সময়ে স্বাভাবিক। যদিও এ সময়ে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে ২-৩ ডিগ্রি বেশি থাকাটাই দস্তুর। হাওয়া অফিসের এক বিজ্ঞানী বলেন, “দক্ষিণবঙ্গের তাপমাত্রা এখন তুলনায় কম। না হলে অস্বস্তি আরও বাড়ত।”
দক্ষিণবঙ্গে তাপমাত্রায় লাগাম পড়লেও উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারত কিন্তু তাপপ্রবাহের (সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে ৫ ডিগ্রি বেশি) মুখে পড়েছে। দিল্লি, লখনউ, জৈসলমেরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৫-৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি ঘোরাফেরা করছে। এ বছরের এপ্রিল-মে-তে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারতে পারদের এমন উত্থান লক্ষ করা যায়নি। মৌসম ভবনের বিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা, এপ্রিল-মে-তেও উত্তর ভারতে একের পর এক পশ্চিমী ঝঞ্ঝা (ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা থেকে আসা বায়ুপ্রবাহ) আছড়ে পড়ছিল। ফলে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারতে নিয়মিত বৃষ্টি হয়েছে। তাই তাপমাত্রাও বাড়তে পারেনি। মৌসম ভবনের এক বিজ্ঞানী বলেন, “পশ্চিমী ঝঞ্ঝা আসা বন্ধ হওয়ায় এখন তাপমাত্রা বাড়ছে।” উত্তর-পশ্চিম ভারতের এই তাপমাত্রার বৃদ্ধিকে কিছুটা অশনিসঙ্কেত হিসেবে দেখছেন অনেকে। কেন?
আবহবিজ্ঞানীদের একাংশের ব্যাখ্যা, মে মাসে উত্তর-পশ্চিম ভারত তাপপ্রবাহের কবলে পড়লে, তার প্রভাবে উত্তর ও মধ্য ভারতে ছোট ছোট ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়। তা মৌসুমি বায়ুকে দক্ষিণ ভারত থেকে পূর্ব ভারতের দিকে টেনে তোলে। কিন্তু কেরলে বর্ষা ঢোকার পর উত্তর-পশ্চিম ভারতে এমন লাগামছাড়া গরমের ফলে ওই এলাকায় স্থানীয় ভাবে শক্তিশালী ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হতে পারে। তার ফলে মৌসুমি বায়ুর শাখাটি পশ্চিম ভারতের দিকে ঘুরে যেতে পারে। “সে ক্ষেত্রে পূর্ব ভারতে বর্ষা আসতে দেরি হবে।”মন্তব্য এক আবহবিজ্ঞান শিক্ষকের।
পূর্ব ভারতে এ বার বর্ষার হাজিরা নিয়ে আগে থেকেই অনিশ্চয়তা রয়েছে। নিয়মমাফিক, আজ, রবিবার ৮ জুন দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা আসার কথা। কিন্তু শুক্রবার কেরলে বর্ষা ঢুকেছে। এ দিন তার তেমন অগ্রগতি হয়নি। তার উপরে উত্তর-পশ্চিম ভারতের এই গরম বর্ষার উপরে কী প্রভাব পড়বে, তা নিয়ে চিন্তায় আবহবিদেরা। বর্ষার এই বিলম্বে চিন্তায় কৃষি দফতরও।