বিমল গুরুঙ্গের সমর্থন আদায় করার পরে বাংলার ভূমিপুত্র ও জামাই সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়াকেই দার্জিলিঙে প্রার্থী করল বিজেপি। আজ দিল্লিতে নরেন্দ্র মোদী, লালকৃষ্ণ আডবাণী, রাজনাথ সিংহ, সুষমা স্বরাজ, অরুণ জেটলির উপস্থিতিতে দলের নির্বাচন কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নিজের ফেসবুক পাতায় বিজেপির এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান গুরুঙ্গ।
তৃৃতীয় দফায় রাজ্যের আরও ৬টি আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করল বিজেপি। দার্জিলিঙে অহলুওয়ালিয়ার পাশাপাশি আলিপুরদুয়ারে বীরেন্দ্রবড়া ওঁরাওকে প্রার্থী করা হয়েছে। বদলানো হয়েছে বহরমপুরের প্রার্থীকে। সুশান্তরঞ্জন পালের বদলে সেখানে প্রার্থী হচ্ছেন দেবেশ অধিকারী। সুশান্তবাবু বহরমপুরের বাসিন্দা নন বলে বিজেপি-র স্থানীয় নেতা-কর্মীদের একটি অংশ ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন।
এ ছাড়া মালদহ দক্ষিণে বিষ্ণু রায়, জয়নগরে বিপ্লব মণ্ডল, পুরুলিয়ায় বিকাশ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কাঁথিতে কমলেন্দু পাহাড়ী প্রার্থী হচ্ছেন। রাজ্যে বিজেপি-র প্রার্থী ঘোষণা বাকি থাকল শুধু যাদবপুর ও শ্রীরামপুরে। ওই দুই কেন্দ্রে চমক থাকবে বলে বিজেপি সূত্রের ইঙ্গিত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দার্জিলিঙে ভাইচুং ভুটিয়াকে প্রার্থী করার পর থেকেই গোর্খা নেতাদের সঙ্গে তৃণমূলের টানাপড়েন শুরু হয়। তার পরেই বিমল গুরুঙ্গরা বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে জোট বাঁধার জন্য আলোচনা শুরু করেন। গুরুঙ্গদের আগ্রহ দেখে দার্জিলিঙে পূর্বনির্ধারিত প্রার্থীর নাম কেটে দেওয়া হয়। গুরুঙ্গরা চাইছিলেন, জাতীয় স্তরের কোনও নেতাকেই প্রার্থী করুক বিজেপি। এর পরে রাজীবপ্রতাপ রুডির নাম ভাবা হয়। তিনি রাজি না হওয়ায় দিল্লির নেতাদের কাছে অহলুওয়ালিয়ার নাম প্রস্তাব করেন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। মালিধুরায় বৈঠকের পরে অহলুওয়ালিয়ার নামে সিলমোহর দেয় গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটিও। আদিবাসী বিকাশ পরিষদের দলছুট নেতা জন বার্লা ও তাঁর অনুগামীরাও আসন্ন ভোটে জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও দার্জিলিং আসনে বিজেপিকে সমর্থনের কথা ঘোষণা করেছেন। একদা মোর্চার জোটসঙ্গী জন বার্লার প্রোগ্রেসিভ টি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের তরাই-ডুয়ার্সের চা বলয়ে যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে।
আসানসোলে জন্ম দার্জিলিংয়ের এই নতুন প্রার্থীর। সেখানকার সেন্ট জোসেফ স্কুলে পড়াশোনা। পরে বিধানচন্দ্র কলেজে স্নাতক করার পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন নিয়ে পড়েছেন। ছাত্র রাজনীতির হাতেখড়িও কলকাতা থেকে। প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির সময়ে ছাত্র পরিষদ করেছেন। তার পর ১৯৭৮ সালে রোজগারের সন্ধানে চলে যান বিহারে। ১৯৮৬ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত তিনি সাংসদ ছিলেন। রাজ্যসভায় বিরোধী দলের উপনেতাও হয়েছিলেন। কিন্তু কলকাতার বাইরে পাড়ি দিলেও রাজ্যের প্রতি টান রয়েছে বরাবর। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গেই তাঁর সুসম্পর্ক। গত লোকসভা নির্বাচনেও মোর্চা নেতারা তাঁকে প্রার্থী হওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু সেই সময় নিজেই যশোবন্ত সিংহের নাম প্রস্তাব করেন অহলুওয়ালিয়া।
তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য মনে করেন, অহলুওয়ালিকাকে সামনে রেখে বিমল গুরুঙ্গরা চেষ্টা করলেও ভাইচুংকে হারানোটা সহজ হবে না। পাহাড়ের সঙ্গে সমতলেও তৃণমূলের সাংগঠনিক শক্তির কথা মাথায় রাখার কথা বলছেন তাঁরা। আবার সমতলের ভোট টানতে শিলিগুড়ি পুরসভার কাউন্সিলর সুজয় ঘটককে প্রার্থী করতে পারে কংগ্রেস। ফলে দার্জিলিং দখলের লড়াই এ বারে নজর কাড়বে।
অহলুওয়ালিয়া অবশ্য গুরুঙ্গ, রোশন গিরিদের সঙ্গে একপ্রস্ত আলোচনা সেরে ফেলেছেন। দোলের পরেই দার্জিলিং যাচ্ছেন তিনি। অহলুওয়ালিয়া বলেন, “সাংসদ হয়ে গোর্খাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা সংসদে তুলে ধরাই আমার লক্ষ্য।” মমতার সঙ্গেও সুসম্পর্ক রয়েছে তাঁর। বিজেপি নেতৃত্বের মতে, ভোটের পর ক্ষমতায় আসতে মমতার সমর্থনও দরকার হতে পারে। তখন অহলুওয়ালিয়া-মমতা সুসম্পর্ক কাজে লাগবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy