Advertisement
E-Paper

আর কমিশনের মাধ্যমে নিয়োগ নয় মাদ্রাসায়

প্রায় ছ’বছর ধরে মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে মাদ্রাসায় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগের যে-ব্যবস্থা চলে আসছে, বুধবার তাতে দাঁড়ি টেনে দিল কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি সম্বুদ্ধ চক্রবর্তী এ দিন এই সংক্রান্ত একটি মামলায় রায় দিয়ে বলেন, সংখ্যালঘু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে নিয়োগ অসাংবিধানিক, অবৈধ। তাই মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী নিয়োগ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৪ ০৪:১৫

প্রায় ছ’বছর ধরে মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে মাদ্রাসায় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগের যে-ব্যবস্থা চলে আসছে, বুধবার তাতে দাঁড়ি টেনে দিল কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি সম্বুদ্ধ চক্রবর্তী এ দিন এই সংক্রান্ত একটি মামলায় রায় দিয়ে বলেন, সংখ্যালঘু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে নিয়োগ অসাংবিধানিক, অবৈধ। তাই মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী নিয়োগ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।

তবে ২০০৮ সাল থেকে এত দিন ওই কমিশন মারফত যে-সব নিয়োগ হয়েছে, তা বৈধ বলেই গণ্য হবে। কারণ, বিচারপতি চক্রবর্তীর রায়ের আগেই ওই সব নিয়োগ হয়ে গিয়েছে। এ দিন রায় দেওয়ার পরে বিচারপতি জানিয়ে দেন, রাজ্য সরকার চাইলে ডিভিশন বেঞ্চে যেতে পারে। তাই দু’সপ্তাহ এই রায় রূপায়ণ স্থগিত রাখার নির্দেশও দেওয়া হচ্ছে।

হাইকোর্টে মামলা করেছিল কাঁথির রহমানিয়া হাই মাদ্রাসা। তারা আবেদনে জানায়, কোনও সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠানের পরিচালন ব্যবস্থায় সরকার কোনও ভাবেই হস্তক্ষেপ করতে পারে না। মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে যে-ভাবে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগ করা হয়েছে, তা বিধিসম্মত নয়। আবেদনকারীর আইনজীবী আবু সোহেল বলেন, সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠান কী ভাবে চলবে, সংবিধানের ৩০ ধারায় তা স্পষ্ট করেই বলা আছে। এই ব্যাপারে সরকারের এক্তিয়ার ঠিক কতটা, তা-ও বিশদ ভাবেই ব্যাখ্যা করা হয়েছে সেখানে।

রায় দিতে গিয়ে বিচারপতি চক্রবর্তী এ দিন খ্রিস্টান মিশনারিদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কথা তোলেন। তিনি জানান, রাজ্যে খ্রিস্টান সংগঠন পরিচালিত যে-সব স্কুল রয়েছে, সেখানে কোনও সার্ভিস কমিশন নেই। তাদের পরিচালন সমিতিই স্থির করে, কাকে নিয়োগ করা হবে। রাজ্যে অন্য যে-সব সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেখানে নিয়োগের জন্যও সার্ভিস কমিশন নেই। সেগুলি পরিচালিত হয় তাদের নিজস্ব নিয়ম অনুযায়ী। সংবিধান এই নিজস্ব নিয়মের কথাই বলেছে। সংখ্যালঘু পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে শুধু মাদ্রাসায় নিয়োগের জন্যই সার্ভিস কমিশন গড়া হয়েছে। সংবিধান এই ব্যবস্থা সমর্থন করে না। তাই মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন এখন থেকে মাদ্রাসায় কোনও নিয়োগ করতে পারবে না। নিয়োগ করবে সংশ্লিষ্ট মাদ্রাসার পরিচালন সমিতি। কারণ, সংবিধানের ৩০ ধারায় বলা হয়েছে, সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠান কী ভাবে পরিচালিত হবে, সংশ্লিষ্ট পরিচালন সমিতিই তা ঠিক করবে।

২০০৮ সালে তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন চালু করে। তার পর থেকে মাদ্রাসায় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগ করা হয় কমিশনের মাধ্যমেই। কমিশনের পক্ষে আইনজীবী জয়ন্ত মিত্র বলেন, কমিশনের মাধ্যমে নিয়োগ হলে মেধার ভিত্তিতে তালিকা তৈরি করা যায়। ইচ্ছামতো যে-কাউকে নিয়োগ করা বা না-করার ব্যাপারটা এড়ানো যায়। এতে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার মান ভাল হয়। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে আপসের সুযোগ থাকলে পঠনপাঠনের মান ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী লক্ষ্মী গুপ্ত বলেন, কোনও সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এ ভাবে সার্ভিস কমিশন গড়াই যায় না। রাজ্যে অন্য কোনও সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠানে কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে আলাদা করে সার্ভিস কমিশন নেই।

সব পক্ষের বক্তব্য শুনে বিচারপতি মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে নিয়োগ বন্ধ করার নির্দেশ দেন। এখন যে-সব নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে, সেগুলি আপাতত বন্ধ থাকবে। সরকার যদি ডিভিশন বেঞ্চে আর্জি জানাতে চায়, তার জন্য তাদের দু’সপ্তাহ সময় দেওয়া হচ্ছে।

সরকারি অর্থে চলে, রাজ্যে এমন মাদ্রাসার সংখ্যা ৬১৪। মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন সূত্রের খবর, ফি-বছর মাদ্রাসাগুলিতে হাজারখানেক শিক্ষক নিযুক্ত হন। আর গ্রন্থাগারিক-সহ শিক্ষাকর্মী নিয়োগ হয়েছে এক বারই। সেই সংখ্যাটা প্রায় ৪০০। সরকার কি ডিভিশন বেঞ্চে আপিল করবে? দফতরের সচিব সইদুল ইসলাম বলেন, “কোর্টের রায়ের প্রতিলিপি হাতে আসেনি। তার আগে এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানানো সম্ভব নয়।”

madrasa ssc
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy