Advertisement
E-Paper

আসছে না কেন্দ্রের টাকা, প্রকল্প নিয়ে সংশয়ে শিশুকল্যাণ দফতর

আবেদন করেও পর্যাপ্ত টাকা মিলছে না কেন্দ্র থেকে। তাই আটকে রয়েছে বহু শিশু সুরক্ষা প্রকল্প। ফলে যথারীতি বিপাকে রাজ্যের শিশু কল্যাণ দফতর। দফতর সূত্রে খবর, শিশু সুরক্ষা প্রকল্পগুলি রাজ্যের হলেও তা বাস্তবায়নে যে অর্থের প্রয়োজন হয়, তার জন্য ভরসা কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু অভিযোগ, বহু বার আবেদন করেও পর্যাপ্ত টাকা মেলেনি। ফলে স্বভাবতই প্রকল্পগুলি রূপায়িত করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে রাজ্যকে।

সুপ্রিয় তরফদার

শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৪ ০৪:৩০

আবেদন করেও পর্যাপ্ত টাকা মিলছে না কেন্দ্র থেকে। তাই আটকে রয়েছে বহু শিশু সুরক্ষা প্রকল্প। ফলে যথারীতি বিপাকে রাজ্যের শিশু কল্যাণ দফতর।

দফতর সূত্রে খবর, শিশু সুরক্ষা প্রকল্পগুলি রাজ্যের হলেও তা বাস্তবায়নে যে অর্থের প্রয়োজন হয়, তার জন্য ভরসা কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু অভিযোগ, বহু বার আবেদন করেও পর্যাপ্ত টাকা মেলেনি। ফলে স্বভাবতই প্রকল্পগুলি রূপায়িত করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে রাজ্যকে। এ ভাবে আদৌ কত দিন শিশু সুরক্ষা প্রকল্প সুষ্ঠু ভাবে চালানো যাবে, তা নিয়েও সংশয়ে রাজ্য সরকার।

নারী ও শিশু কল্যাণ দফতর সূত্রের খবর, শহরে বস্তি এলাকার শিশুদের সুরক্ষাকে সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২০০৯ সালে দায়িত্বের পুনর্বিন্যাস করেছিল কেন্দ্রীয় সরকারের মহিলা ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রক। অর্থ জোগানের দায়িত্ব কেন্দ্র নিলেও দফতরের দেখভালের দায়িত্ব রাজ্য সরকারের হাতে দেওয়া হয়েছিল। প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘সুসংহত শিশু সুরক্ষা প্রকল্প’ বা ‘আইসিপিএস’। কিন্তু অভিযোগ, কেন্দ্র যে অর্থ দিচ্ছে, তা যথেষ্ট নয়। মূল্যবৃদ্ধির পরেও কেন্দ্র এই খাতে বাড়তি অর্থ বরাদ্দ করেনি। বারবার আবেদন করেও সাড়া মেলেনি।

তবু তার মধ্যেও থেমে থাকেনি সুসংহত শিশু সুরক্ষা প্রকল্পের আওতাধীন প্রকল্পগুলির অন্যতম ‘ওপেন শেল্টার’ প্রকল্প। যেখানে বহু রাজ্যে এই প্রকল্প ঠিক ভাবে চালুই হয়নি, সেখানে পশ্চিমবঙ্গ এ ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা নিয়েছে বলেই দাবি রাজ্যের শিশু কল্যাণ দফতরের। সূত্রের খবর, ন’য়ের দশক থেকেই পথ-শিশুদের সুরক্ষার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে একটি প্রকল্প চালু ছিল। কিন্তু কেন্দ্রের তরফেই সিদ্ধান্ত হয়, এই প্রকল্পটি দেখভালের দায়িত্ব রাজ্য সরকারকে দেওয়া উচিত। সেই মতো ২০০৯ সালে রাজ্যগুলিকে সুসংহত শিশু সুরক্ষা প্রকল্প-সহ ‘ওপেন শেল্টার’ প্রকল্প চালু করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। তৎকালীন বামশাসিত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার এক বছর সময় চেয়ে নিলেও সেই সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরে ২০১১ সালের এপ্রিল মাস থেকে চালু হয় প্রকল্পটি।

এই ‘ওপেন শেল্টার’ প্রকল্প ঠিক কী? শিশু সুরক্ষা সুনিশ্চিত করার জন্য রাজ্যের তরফ থেকে ‘স্টেট চাইল্ড প্রোটেকশন সোসাইটি’ নামের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তার চেয়ারম্যান রাজ্যের নারী ও শিশু কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী (স্বাধীন দায়িত্ব প্রাপ্ত) শশী পাঁজা। জেলা-ভিত্তিক এই কমিটির চেয়ারম্যানেরা হলেন সংশ্লিষ্ট জেলার জেলাশাসকেরা। এই কমিটির মাধ্যমেই কেন্দ্রের দেওয়া টাকায় চলে আইসিপিএস প্রকল্প। তার মধ্যেই অন্যতম একটি প্রকল্প ‘ওপেন শেল্টার’। তবে প্রকল্পটি শুধুমাত্র শহর এলাকার জন্য। শিশু কল্যাণ দফতরই বিভিন্ন এনজিও-র মাধ্যমে রাজ্যের বিভিন্ন শহরে ২০০০ বর্গফুট এলাকার বাড়িতে এই প্রকল্প চালানোর অনুমতি দেয়। টেলিভিশন, কম্পিউটার, বিদ্যুৎ ও জলের যথাযথ ব্যবস্থা থাকলে তবেই অনুমতি মেলে। বর্তমানে এই প্রকল্পের আবাসন রয়েছে কলকাতায় ১৮টি, হাওড়ায় ২টি, শিলিগুড়িতে ১টি ও উত্তর ২৪ পরগনায় ৪টি।

দফতর সূত্রের খবর, এই প্রকল্পের প্রকারভেদ দু’টি। প্রথমত, ৬ থেকে ১৮ বছর বয়সী ছেলেমেয়েদের ২৪ ঘণ্টা থাকা-খাওয়া, স্কুলে যাওয়া, পড়াশোনা, চিকিৎসা ও বিনোদনের ব্যবস্থা করা। সেই সঙ্গে তাদের পেশার ক্ষেত্রেও উপযুক্ত করে তোলার জন্য জরুরি ‘ভোকেশনাল ট্রেনিং’ দেওয়া। আর দ্বিতীয়টি হল ‘ডে কেয়ার’। অর্থাৎ, ওই একই বয়সের কিছু ছেলেমেয়েদের প্রয়োজন মতো রাতে থাকা-খাওয়া বাদ দিয়ে সারা দিন অন্যান্য সব সুযোগ সুবিধা দেওয়া।

কলকাতার এই প্রকল্পে যুক্ত এক এনজিও-র অধিকর্তা জানান, মূলত বস্তি এলাকার ক্লাবগুলিতে রোজই সংস্থার কর্মীরা যান। সেখানে অভিভাবকদের অনুমতি নিয়েই শিশুদের এই প্রকল্পের আওতায় আনা হয়। যে সব শিশুদের বাবা-মা মারা গিয়েছেন, অথবা যে কোনও এক জন বেঁচে থাকলেও শিশুর ভরণ-পোষণে অক্ষম, সেই পরিবারগুলি থেকেই শিশুদের এই প্রকল্পের আওতায় আনা হয়। এ ছাড়া, আর্থিক দুরবস্থার কারণে যে শিশুরা নানা শ্রমে যুক্ত, তাদেরও প্রকল্পের আবাসনে আনা হয়।

তবে এই প্রকল্পের প্রধান শর্ত, ২৪ ঘণ্টা থাকার ক্ষেত্রে ছেলেমেয়েদের সর্বাধিক সংখ্যা হতে পারে ২৫। এই ২৫ জনের জন্য প্রতি বছরে কেন্দ্রীয় সরকার প্রায় ১০ লক্ষ টাকা দেয়। কিন্তু রাজ্যের দাবি, খরচ হয় তার থেকেও বেশি। কারণ, প্রকল্পের আওতায় থাকা সকলের জামা-কাপড়, স্কুল, প্রাইভেট টিউশন, টেলিভিশন, কম্পিউটারের খরচ, চিকিৎসা, বিদ্যুৎ, রক্ষণাবেক্ষণের খরচ দেওয়ার পরে দ্বিতীয় খাতের জন্য আলাদা কোনও টাকা থাকে না। একটি খাতের অর্থ দিয়েই প্রকল্পের দু’টি দিক চালাতে হয়।

শিশু কল্যাণ দফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালে আইসিপিএস খাতে রাজ্যকে ২০ কোটি টাকা দেওয়ার কথা হয়। অগস্ট মাসে রাজ্যের হাতে আসে ৩ কোটি ৬৫ লক্ষ ৬ হাজার টাকা। তার পরে আর কিছুই পাওয়া যায়নি। ওই বছরের ২২ নভেম্বর দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সরকারের মহিলা ও শিশু কল্যাণ দফতরের সঙ্গে রাজ্যের শিশু কল্যাণ দফতরের আধিকারিকদের বৈঠক হয়। সেখানে রাজ্যের তরফ থেকে ‘ওপেন শেল্টার’ খাতে অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধির আবেদন জানানো হয়। কিন্তু কেন্দ্রের তরফ থেকে কোনও সদুত্তর মেলেনি বলে অভিযোগ। দিল্লির শিশু কল্যাণ দফতরে বহু বার ফোন করা হলেও এ বিষয়ে কেউ কিছুই বলতে চাননি।

রাজ্যের নারী ও শিশু কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, “কেন্দ্র অর্থ দিলেও প্রকল্প চালাতে হয় রাজ্যকে। উপকৃত হয় রাজ্যের শিশুরাই। ফলে আমাদের দায়বদ্ধতা অনেকটাই বেশি। কিন্তু এ ভাবে আর্থিক সমস্যা চলতে থাকলে কতটা ভাল পরিষেবা দিতে পারব সেটাই চিন্তার। চেষ্টা করে যাচ্ছি। ফের অর্থের জন্য আবেদন জানাব।”

icpcs child welfare department supriya tarafdar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy