এত দিন কলকাতার সঙ্গে যোগাযোগের মূল মাধ্যম ছিল রেলপথ। এ বার হুগলির চুঁচুড়ার সঙ্গে জলপথেও যুক্ত হতে চলেছে কলকাতা। পাশাপাশি, চন্দননগর এবং উত্তরপাড়া থেকেও কলকাতার আশপাশে দক্ষিণশ্বের, বেলুড় মঠের মতো কয়েকটি পর্যটনকেন্দ্রে চালু হচ্ছে লঞ্চ পরিষেবা।
হুগলি-চুঁচুড়া, চন্দননগর এবং উত্তরপাড়া কোতরং গঙ্গা তীরবর্তী হুগলির তিন পুরসভাকে বেছে নিয়ে সেখানকার বাসিন্দাদের সুবিধার জন্য লঞ্চ পরিষেবার সুযোগ করে দিল রাজ্য পরিবহণ দফতর। ইতিমধ্যেই চন্দননগর এবং উত্তরপাড়া থেকে পরীক্ষামূলক ভাবে ওই পরিষেবা চালু হয়েছে। দেড়শো বছর পূর্তি উপলক্ষে হুগলি-চুঁচুড়া পুরসভা আনুষ্ঠানিক ভাবে সেই পরিষেবা চালু করতে চলেছে আর কিছু দিনের মধ্যেই। হুগলি-চুঁচুড়া এবং চন্দননগর পুরসভা পেয়েছে দু’টি করে লঞ্চ। উত্তরপাড়া একটি।
উত্তরপাড়াই হোক বা চন্দননগর, চুঁচুড়া৩টি এলাকার মানুষের কাছে কলকাতা যাতায়াতের জন্য প্রথম পছন্দ ট্রেন। সড়কপথে কলকাতার সঙ্গে বাস যোগাযোগ এখনও সরাসরি গড়ে ওঠেনি। এই পরিস্থিতিতে লঞ্চ পরিষেবা চালু হওয়ায় মানুষের যাতায়াত কিছুটা সময়সাপেক্ষ হলেও অনেক আরামদায়ক হবে বলেই মনে করছেন প্রশাসনিক কর্তারা। পরিবহণ দফতরের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরসভাগুলি ভিন্ন ভিন্ন পরিকল্পনার মাধ্যমে লঞ্চগুলি তাদের মতো করে ব্যবহার করতে পারবে। ওই দফতরের এক পদস্থ কর্তা বলেন, “লঞ্চে সাধারণ যাত্রীদের সফর অনেক আরামদায়ক হবে। দূষণহীন পরিবেশ পাবেন তাঁরা। পুরসভাগুলির নিজস্ব আয় বাড়বে। কিছু কর্মসংস্থানও হবে। প্রতিটি লঞ্চ কিনতে ৪৫ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে।”
জেলা প্রশাসন জানায়, লঞ্চে চুঁচুড়া থেকে বাবুঘাটে যাওয়া যাবে। তা ছাড়া, মাসের একটি দিন বেছে নেওয়া হচ্ছে সাধারণ মানুষকে কাছাকাছি এলাকায় ভ্রমণের সুযোগ করে দিতে। তাঁরা বেলুড় মঠ, চন্দননগর, ইমামবাড়া, দক্ষিণেশ্বর, ব্যারাকপুরের গাঁধীঘাট, হালিশহর, মূলাজোড় কালীবাড়ি, ব্যান্ডেল চার্চ-সহ বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যেতে পারবেন।
বর্তমানে চুঁচুড়া থেকে শুধু উল্টো পাড়ে উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটির লঞ্চ যোগাযোগ রয়েছে। নতুন ব্যবস্থা নিয়ে পুরসভার চেয়ারম্যান গৌরীকান্ত মুখোপাধ্যায় বলেন, “সাধারণ মানুষ যাতে পরিবেশ সহায়ক উপায়ে ঘোরার সুযোগ পান আমরা সেই চেষ্টাই করছি। খরচ যাতে সাধারণ মানুষের সাধ্যের মধ্যে থাকে সেই চেষ্টা করছি।”
চন্দননগরের রানিঘাট থেকে এখন লঞ্চ চলে উত্তর ২৪ পরগনার জগদ্দল ঘাটের মধ্যে। সকালের দিকে কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য লঞ্চে ভিড়ও হয়। প্রয়োজনের ভিত্তিতে কলকাতা ছাড়াও নতুন লঞ্চ ওই পথেও চালানোর চিন্তাভাবনা করছেন পুর কর্তৃপক্ষ। তাতে ভিড় সামলানো সহজ হবে বলে মনে করছেন তাঁরা। তা ছাড়া, ভ্রমণের বিশেষ প্যাকেজ তো রয়েছেই।
চন্দননগরের মেয়র রাম চক্রবর্তী বলেন, “বেলুড় মঠ, দক্ষিণেশ্বর-সহ বিভিন্ন জায়গায় গঙ্গাপথে মানুষ ভ্রমণের সুযোগ পাবেন। দীর্ঘ পথে যাত্রীদের খাওয়ার ব্যবস্থাও থাকবে। লঞ্চের টিকিটের সঙ্গেই সেই খরচ যুক্ত করা হবে। তবে ভাড়া যাতে সাধারণের আওতায় থাকে সে ভাবেই পরিকল্পনা করা হচ্ছে।” রাজ্য পরিবহণ দফতর থেকে পাওয়া লঞ্চ নিয়ে পরিকল্পনা করেছে উত্তরপাড়া কোতরং পুরসভাও। উত্তরপাড়া খেয়াঘাট থেকে আড়িয়াদহ পর্যন্ত নৌকায় যাতায়াতের সুযোগ রয়েছে। পুরো বিষয়টি পুরসভার নিয়ন্ত্রণে চলে। এর পাশাপাশি লঞ্চ যুক্ত হওয়ায় পুর কর্তৃপক্ষ এ বার উত্তরপাড়া খেয়াঘাট থেকে দক্ষিণেশ্বর এবং বেলুড় মঠ পর্যন্ত লঞ্চ চালানোর সিদ্ধান্ত নেন। চেয়াররম্যান অদিতি কুণ্ডু বলেন, “উত্তরপাড়া, ভদ্রকালী-সহ বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে বহু মানুষ সড়ক পথে দক্ষিণেশ্বর এবং বেলুড় মঠে নিজেদের কাজে যান। এ বার জলপথে নতুন ব্যবস্থার বাড়তি সুযোগ পাওয়া যাবে। যানজটের ঝক্কি এড়ানো যাবে জলপথে।” এখন পুরোদস্তুর জলপথে পরিবহণ ব্যবস্থা চালুর অপেক্ষা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy