Advertisement
০৬ মে ২০২৪

কুণাল নিয়ে রিপোর্ট কোথায়, কোর্টের তোপ

জেলের মধ্যে কুণাল ঘোষের আত্মহত্যার চেষ্টা নিয়ে আদালতের কড়া সমালোচনার মুখে পড়ল কারা দফতর। এই ঘটনা নিয়ে আদালতে রিপোর্ট দাখিলের ক্ষেত্রে গড়িমসির জন্য বিচারক তিরস্কারও করলেন কারাকর্তাদের। সোমবার এক লিখিত নির্দেশে সিবিআই আদালতের বিচারক অরবিন্দ মিশ্র জানান, আদালত কারা দফতরের কাছে রিপোর্ট চেয়েছিল। এ দিন তা জমা দেওয়ার কথা থাকলেও তা করেনি তারা। বিস্ময় প্রকাশ করে বিচারক বলেন, নির্দেশ অগ্রাহ্য করে কারাকর্তারা আদালতকে বাধ্য করছেন বিরূপ মনোভাব নিতে। দু’দিনের মধ্যে বিস্তারিত কারণ ব্যাখ্যা করে রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:৩৯
Share: Save:

জেলের মধ্যে কুণাল ঘোষের আত্মহত্যার চেষ্টা নিয়ে আদালতের কড়া সমালোচনার মুখে পড়ল কারা দফতর। এই ঘটনা নিয়ে আদালতে রিপোর্ট দাখিলের ক্ষেত্রে গড়িমসির জন্য বিচারক তিরস্কারও করলেন কারাকর্তাদের।

সোমবার এক লিখিত নির্দেশে সিবিআই আদালতের বিচারক অরবিন্দ মিশ্র জানান, আদালত কারা দফতরের কাছে রিপোর্ট চেয়েছিল। এ দিন তা জমা দেওয়ার কথা থাকলেও তা করেনি তারা। বিস্ময় প্রকাশ করে বিচারক বলেন, নির্দেশ অগ্রাহ্য করে কারাকর্তারা আদালতকে বাধ্য করছেন বিরূপ মনোভাব নিতে। দু’দিনের মধ্যে বিস্তারিত কারণ ব্যাখ্যা করে রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

গত সোমবার সিবিআই আদালতেই সারদা কেলেঙ্কারিতে ধৃত তৃণমূলের সাসপেন্ডেড সাংসদ কুণাল আত্মহত্যার হুমকি দেন। সে দিনই বিচারক কারা দফতরের এডিজি এবং প্রেসিডেন্সি জেলের সুপারকে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেন। শুক্রবার ভোরে প্রেসিডেন্সি জেলেই ঘুমের ওষুধ খান কুণাল। ক্ষুব্ধ বিচারক এ দিন বলেন, আদালতের সতর্কতা সত্ত্বেও কারা কর্তৃপক্ষ ঘটনার গুরুত্ব বুঝতে পারেননি।

নবান্ন সূত্রে বলা হচ্ছে, সে দিন কী হয়েছিল তার খোঁজ করতে গিয়ে বেশ বিপাকে পড়েছে কারা দফতর। কারণ ওই সময়ের কোনও ভিডিও ফুটেজই খুঁজে পাচ্ছেন না তাঁরা! কেন?

নবান্ন সূত্রের খবর, এ বছর ৫ মে প্রেসিডেন্সি জেলের ভিতরেই সহবন্দির হাতে খুন হন খাদিম কর্তা অপহরণ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বন্দি হ্যাপি সিংহ। সেই ঘটনার তদন্তে নেমে সিআইডি জেলের সিসিটিভি ফুটেজ রেকর্ড করার যন্ত্র (ডিজিটাল ভিডিও রেকর্ডার বা ডিভিআর) খুলে নিয়ে যায়। সেটি আর ফেরত দেয়নি তারা। কারাকর্তারা বারবার চিঠি লিখে জানতে পারেন, যন্ত্রটি ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। নবান্নের এক শীর্ষকর্তা বলেন, “ডিভিআর না থাকায় মে মাস থেকে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত প্রেসিডেন্সি জেলের ক্যামেরার কোনও রেকর্ড নেই। কুণাল কী অবস্থায় ছিলেন, কী ভাবে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল, তার কোনও ছবি-প্রমাণ মিলছে না।” কারা সূত্রের খবর, বিষয়টি টের পাওয়ার পরে তড়িঘড়ি নতুন সিসিটিভি ক্যামেরা, ডিভিআর বসানো হয়েছে।

হ্যাপি সিংহ খুন হওয়ার পরে এত দিন কেটে গেলেও কেন ডিভিআর ফেরত দেওয়া হল না, তা জানতে এডিজি (সিআইডি) রামফল পওয়ারকে ফোন করা হয়। তিনি ফোন ধরেননি। এসএমএসেরও উত্তর দেননি। অনেকের প্রশ্ন, ডিভিআর ফরেন্সিক পরীক্ষায় যাওয়ার পরে নতুন ডিভিআর বসানোর ব্যাপারে কারাকর্তারা উদ্যোগী হননি কেন?

এ দিন আদালতে কুণালের আইনজীবী সৌম্যজিৎ রাহা বলেন, তাঁর মক্কেল জানিয়েছেন, জেলের মধ্যে আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনায় জেলের সুপার, মেডিক্যাল অফিসার ও ওয়ার্ডেনরা কেউ দায়ী নন। সৌম্যজিতের অভিযোগ, অসুস্থ হওয়ার পর এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে এবং এসএসকেএম থেকে বাঙুর ইনস্টিটিউট অব নিউরোলজিতে নিয়ে যাওয়ার সময় কুণালকে হেনস্থা করা হয়েছে। কী ভাবে কুণালকে হেনস্থা করা হয়েছে, তা বোঝাতে বিভিন্ন খবরের কাগজের কাটিংও জমা দেন তিনি। এ নিয়েও জেলের সুপারের কাছে এ দিন রিপোর্ট তলব করেছেন বিচারক।

এ দিন এজলাসের লক-আপে কুণালকে দেখে বেশ অসুস্থই মনে হয়েছে। এর আগে আদালতে আসা-যাওয়ার পথে ও এজলাসে বহু বার মুখ খুলেছেন তিনি। সারদায় শাসক দলের যোগ নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্যও করেছেন বহু বার। এ দিন অবশ্য বেশ নিস্তেজ ছিলেন তিনি। এজলাসে বসে থাকা অবস্থায় তাঁকে জোরে জোরে শ্বাস নিতেও দেখা গিয়েছে।

কুণালের শারীরিক অবস্থা নিয়েও এ দিন সরব হন তাঁর আইনজীবী। তিনি বলেন, কোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও জেলে তাঁর মক্কেলের ‘মেডিক্যাল ডায়েট’ বন্ধ করে দেওয়া হয়। গত সোমবার আদালতে এ নিয়ে অভিযোগ করার পরে তা ফের চালু হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE