Advertisement
E-Paper

কোর্ট না-খোঁচালে নড়ে না পুলিশ: বিচারপতি

পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে বারবার ভর্ৎসনা করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। খেদের সঙ্গে এ বার তারা বলছে, আদালত হস্তক্ষেপ না-করলে পুলিশ নড়েচড়ে বসে না। বুধবার একটি মামলার রায় ঘোষণার পরে এ ব্যাপারে ইতিহাসের সাক্ষ্য তুলে ধরেন বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত। তিনি বলেন, হাইকোর্টের ইতিহাসই বলছে, কোনও মামলায় আদালত খোঁচা না-দিলে পুলিশ নড়েচড়ে বসার তাগিদ দেখায় না।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৪ ১০:২০

পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে বারবার ভর্ৎসনা করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। খেদের সঙ্গে এ বার তারা বলছে, আদালত হস্তক্ষেপ না-করলে পুলিশ নড়েচড়ে বসে না। বুধবার একটি মামলার রায় ঘোষণার পরে এ ব্যাপারে ইতিহাসের সাক্ষ্য তুলে ধরেন বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত। তিনি বলেন, হাইকোর্টের ইতিহাসই বলছে, কোনও মামলায় আদালত খোঁচা না-দিলে পুলিশ নড়েচড়ে বসার তাগিদ দেখায় না।

মধ্যমগ্রামে গণধর্ষণ ও ধর্ষিতার পুড়ে মৃত্যু, বীরভূমের পাড়ুইয়ে পঞ্চায়েত ভোটের আগের দিন বিক্ষুব্ধ প্রার্থীর বাবা সাগর ঘোষের হত্যাকাণ্ড-সহ সাম্প্রতিক কালের বিভিন্ন মামলায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে তোপ দেগেছে উচ্চ আদালত। শুধু খুন বা রাজনৈতিক মামলা নয়, অন্যান্য মামলাতেও পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা, কখনও বা ইচ্ছাকৃত উদাসীনতা নিয়ে বিচারপতিরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

বিচারপতি দত্ত এ দিন যে-মামলার রায় দিয়েছেন, তার পুলিশি তদন্তে প্রথমে ঘাটতি ছিল। বিচারপতি হস্তক্ষেপ করার পরে এক সপ্তাহের মধ্যে অনিচ্ছাকৃত মৃত্যুর মামলা বদলে যায় খুনের মামলায়। পুলিশের তদন্ত অন্য দিকে মোড় নেওয়ার পরে ধরা পড়ে তিন অভিযুক্তও। সেই সঙ্গে মামলাটির নিষ্পত্তিও হয়ে যায়।

২০১৩ সালের অগস্টে একটি জমি নিয়ে বিবাদের জেরে বেশ কয়েক জন প্রতিবেশী শাবল, কোদাল নিয়ে মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার বাসিন্দা নেফাজুদ্দিন শেখকে আক্রমণ করে বলে অভিযোগ ওঠে। গুরুতর আহত হন তিনি। কয়েক দিন পরে হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর ছেলে হাজিজুল আলি (এই মামলার আবেদনকারী) বেলডাঙা থানায় পাঁচ জনের নামে এফআইআর করেন। মামলায় আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী রামাশিস মুখোপাধ্যায় আদালতে বলেন, পুলিশ দু’জনকে গ্রেফতার করলেও অন্য তিন জন প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। ধৃত দু’জনের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত ভাবে মৃত্যু (ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারা) ঘটানোর মামলা দিয়েছে পুলিশ। তাই পুলিশি তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ এনেই হাইকোর্টে এসেছেন তাঁর মক্কেল।

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি, মামলার প্রথম শুনানির দিন বিচারপতি দত্ত সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মনজিৎ সিংহের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, কেন এবং কী কারণে ওই ঘটনায় ৩০৪ ধারা প্রয়োগ করা হল? এটা যে পরিষ্কার খুনের ঘটনা, পুলিশ সেটা বুঝতে পারল না কেন? অন্য তিন জনকেই বা পুলিশ গ্রেফতার করতে পারছে না কেন? বিচারপতি পুলিশের কাজের কঠোর সমালোচনা করেন।

বুধবার ওই মামলার শুনানিতে সরকারি কৌঁসুলি জানান, অভিযুক্ত অন্য তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং তাঁদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় খুনের মামলা দেওয়া হয়েছে। তার পরেই বিচারপতি মন্তব্য করেন, আবেদনকারী যত ক্ষণ না হাইকোর্টে দ্বারস্থ হচ্ছেন, তত ক্ষণ পুলিশের তদন্ত ঠিক দিকে যাচ্ছে না। বিচারপতি দত্ত আগে হাইকোর্টেরই আইনজীবী ছিলেন। ২০০৬ সালে তিনি বিচারপতির দায়িত্বভার পান। আইনজীবী ও বিচারপতি হিসেবে তাঁর অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই এ দিন তিনি বলেন, হাইকোর্ট হস্তক্ষেপ না-করলে পুলিশের ঘুম ভাঙে না। ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হন অসংখ্য মানুষ।

যথাযথ তদন্তের জন্য সাধারণ মানুষকে কেন আদালতের শরণাপন্ন হতে হবে, বিচারপতির এ দিনের মন্তব্য সেই প্রশ্ন ফের উস্কে দিল।

dipankar dutta high court police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy