বাঁকুড়ার ইঁদপুরে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। ছবি: অভিজিৎ সিংহ।
দলের শীর্ষ নেতৃত্বের তোপের মুখে পড়ে নিজের হুমকিমূলক মন্তব্যের জন্য ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ক্ষমা চেয়ে নিলেন বিজেপি-র বীরভূম জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডল। তবে তাতে দলীয় স্তরে বিতর্কে ইতি পড়লেও মামলা থেকে রেহাই মিলছে না তাঁর। বৃহস্পতিবার রামপুরহাটে দলীয় জনসভায় তৃণমূল কর্মীদের হাত কেটে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন দুধকুমার। ওই দিন রাতেই স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা রামপুরহাটের পুরপ্রধান অশ্বিনী তিওয়ারি তাঁর বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর করেন। বীরভূম জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, ওই অভিযোগের ভিত্তিতে দুধকুমারের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৫৩, ১১৭, ৫০৬ ও ১১৬ ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। যার মধ্যে কয়েকটি জামিন অযোগ্য।
বিজেপি কর্মীরা তৃণমূলের সন্ত্রাসের শিকার হলে ‘সন্ত্রাসের হাত’ কেটে নেওয়া হবে বলে বৃহস্পতিবার হুমকি দিয়েছিলেন দুধকুমার। সঙ্গে সঙ্গেই বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ জানিয়েছিলেন, দল এই ধরনের মন্তব্য অনুমোদন করে না। তাঁরা আইনের শাসন এবং শান্তির পক্ষে। দলেই চাপের মুখে পড়ে শুক্রবার রাহুলবাবুকে পাঠানো চিঠিতে দুধকুমার লিখেছেন, ‘এ রূপ বক্তব্যের জন্য আমি সমস্ত স্তরের নাগরিক এবং দলের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী’। দুধকুমারের আরও বক্তব্য, বিজেপি কর্মীদের উপরে তৃণমূলের দুষ্কৃতীদের অত্যাচারে উত্তেজিত হয়ে তিনি ওই মন্তব্য করে ন এবং ভবিষ্যতে এর পুনরাবৃত্তি হবে না। দুধকুমারের চিঠি পাওয়ার পর এ দিন বাঁকুড়ার ইঁদপুরে দলীয় সভায় রাহুলবাবু বলেন, “দ্বিতীয় বার এমনটা করলে ওঁকে দলে রাখা হবে কি না, তা নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করা হবে।”
বিজেপি নেতৃত্বের বক্তব্য, হুমকির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তের ক্ষমাপ্রার্থনা এবং দলের তরফে তাঁকে ভর্ৎসনা করার নজির তৃণমূলে বিশেষ নেই। রাহুলবাবুর কথায়, “আমরা প্রমাণ করলাম, সর্বত্রই আইনের শাসন এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় আমাদের আন্তরিকতা আছে।”
বিজেপি-র কেন্দ্রীয় সম্পাদক তথা রাজ্যের পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহ জানান, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশেই রাজ্য নেতৃত্ব দুধকুমারের কৈফিয়ৎ তলব করেন এবং তাঁকে কড়া বার্তা দেন। সিদ্ধার্থনাথের কথায়, “কোনও দলের কারও কাছ থেকেই এই ধরনের মন্তব্য আসা উচিত নয়।”
দুধকুমার দাবি করেছেন, “আমি তৃণমূল কর্মীদের হাত কেটে নেওয়ার কথা বলিনি। আমি বলেছি, তৃণমূলের সন্ত্রাসবাদী গুন্ডাদের কথা। আমাদের কর্মীদের উপরে তৃণমূলের ওই গুন্ডাবাহিনী যে সন্ত্রাস চালাচ্ছে, তা মনে পড়তেই উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলাম।” দুধকুমার ক্ষমা চাইলেও বিজেপির একাংশের বক্তব্য, তিনি তৃণমূল কর্মীদের আক্রমণ করতে বলেননি। আক্রান্ত হলে পাল্টা আক্রমণের কথা বলেছেন। হিংসার রাজনীতির মোকাবিলা অহিংসার পথে করার চেষ্টা করলে প্রতিপক্ষের কাছে আত্মসমর্পণ ছাড়া উপায় থাকে না।
বিরোধীদের তোপ অবশ্য এ দিনও অব্যাহত। সিউড়িতে একটি স্কুলের অনুষ্ঠানে রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “বিজেপি নেতারা গোটা দেশ জুড়ে মানুষের গলা-হাত কেটে বেড়াচ্ছেন। এখানে দুধকুমার তা মুখ ফসকে বলে ফেলেছেন। এই যা তফাত! তবে এর মোকাবিলা কী ভাবে করতে হয়, তা আমাদের জানা আছে।” দুবরাজপুরে দলের বীরভূম জেলা সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়ে সিপিএম সাংসদ মহম্মদ সেলিম এ দিন বলেন, “বিজেপি-তৃণমূল চোরে চোরে মাসতুতো ভাই। অনুব্রত মণ্ডল আর দুধকুমার মণ্ডলের একই সংস্কৃতি। ওঁরা মস্তানরাজ কায়েম করতে চান।”
দুধকুমারের বিরুদ্ধে এফআইআর প্রসঙ্গে বীরভূমের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়ার প্রতিক্রিয়া, “অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা ও তদন্ত শুরু হয়েছে।” দুধকুমারের বিরুদ্ধে আগেও উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। সে যাত্রা তাঁকে আগাম জামিন নিতে হয়। এ বার কি দুধকুমারকে গ্রেফতার করা হবে? এসপি-র জবাব, “এটা তদন্তকারী অফিসার দেখছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy