Advertisement
E-Paper

কথা বললে কুণালকে ধাক্কা নয়, নির্দেশ

এক জন কথা বলতে গেলেই পুলিশ বর্গিদের মতো ‘হা রে রে’ চিৎকার করছে বা গলা টিপে ধরছে। আর অন্য জনকে সসম্মানে কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে। এক যাত্রায় এ রকম পৃথক ফল কেনতা নিয়ে এ বার আদালতের বিচারকের কাছে প্রশ্ন তুললেন তৃণমূলের সাসপেন্ড হওয়া সাংসদ কুণাল ঘোষ। সোমবার আদালতে কুণাল অভিযোগ করেন, গ্রেফতার হওয়ার পরে এক জন মন্ত্রী (মদন মিত্র) পুলিশের সামনে ‘সাংবাদিক বৈঠক’ করছেন, আর তিনি কথা বলতে গেলেই পুলিশ গলা টিপে, ধাক্কা দিয়ে তাঁকে জেলের গাড়িতে তুলে দিচ্ছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:৪৫
আদালত থেকে বেরোনোর পর জোর করেই পুলিশের গাড়িতে তোলা হল কুণাল ঘোষকে। সোমবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী

আদালত থেকে বেরোনোর পর জোর করেই পুলিশের গাড়িতে তোলা হল কুণাল ঘোষকে। সোমবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী

এক জন কথা বলতে গেলেই পুলিশ বর্গিদের মতো ‘হা রে রে’ চিৎকার করছে বা গলা টিপে ধরছে। আর অন্য জনকে সসম্মানে কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে। এক যাত্রায় এ রকম পৃথক ফল কেনতা নিয়ে এ বার আদালতের বিচারকের কাছে প্রশ্ন তুললেন তৃণমূলের সাসপেন্ড হওয়া সাংসদ কুণাল ঘোষ।

সোমবার আদালতে কুণাল অভিযোগ করেন, গ্রেফতার হওয়ার পরে এক জন মন্ত্রী (মদন মিত্র) পুলিশের সামনে ‘সাংবাদিক বৈঠক’ করছেন, আর তিনি কথা বলতে গেলেই পুলিশ গলা টিপে, ধাক্কা দিয়ে তাঁকে জেলের গাড়িতে তুলে দিচ্ছে। কুণালের আর্জি শুনে এ দিন বিচারক অভিযুক্ত সাংসদকে বলেন, “সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলা না বলাটা আপনার ব্যাপার। তবে আদালত থেকে বেরিয়ে আপনি কোথাও দাঁড়াবেন না।” আর কুণালকে ধাক্কা না মারতে পুলিশকে নির্দেশ দেন তিনি। তবে আদালতে এ দিনের শুনানি পর্ব শেষ হতেই সেই পুরনো দৃশ্যের পুনরাবৃত্তিই চোখে পড়েছে। আচমকাই দাঁড়িয়ে পড়েছেন কুণাল। আর সংবাদমাধ্যমের উদ্দেশে তিনি কিছু বলার চেষ্টা করতেই, ‘হা রে রে’ চিৎকার করে তাঁকে বলতে বাধা দিয়েছে পুলিশ। তার পরেই কার্যত গায়ের জোরে দ্রুত সাংসদকে তুলে দেওয়া হয়েছে জেলের গাড়িতে।

সারদা গোষ্ঠীর একটি মিডিয়া সংস্থার কর্মীদের বেতন সংক্রান্ত একটি মামলায় এ দিন বেলা পৌনে ১২টায় ব্যাঙ্কশাল আদালতে হাজির করানো হয়েছিল সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেন ও কুণাল ঘোষকে। বিচারক শান্তনু গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে কুণালের আইনজীবী অয়ন চক্রবর্তী আবেদন জানান, তাঁর মক্কেল বিচারককে কিছু বলতে চান। বিচারক অনুমতি দিলে, অভিযুক্ত সাংসদ জানান, আদালত থেকে বেরোনোর সময় কয়েক দিন আগে পুলিশ তাঁর সঙ্গে যে আচরণ করেছে, তা কোনও সভ্য সমাজে হয় না।

কুণালের দাবি, তিনি এর আগে আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে থাকা সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের কাছে কিছু বলতে চেয়েছিলেন। পুলিশ তাঁকে বাধা দেয়। তাঁর গলা টিপে, ধাক্কা মেরে পুলিশ জেলের গাড়িতে তুলে দেয় বলে বিচারকের কাছে অভিযোগ করেন কুণাল। বলেন, “এক জন মন্ত্রী প্রেস কনফারেন্স করতে পারবেন, আর আমাকে পুলিশ গলা টিপে, ধাক্কা মেরে গাড়িতে তুলে দিচ্ছে।”

সিবিআই রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রীকে গ্রেফতার করে আলিপুর আদালতে হাজির করিয়েছিল গত শনিবার। তাঁকে সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে সিবিআই অফিস থেকে ইলেকট্রনিক কমপ্লেক্স থানায় ওই রাতে নিয়ে যাওয়ার সময় মন্ত্রী মদন মিত্র পুলিশের সামনেই ধন্যবাদ জানান আইনজীবী, বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ও যাঁরা ওই দিন তাঁর জন্য রাস্তায় নেমেছিলেন তাঁদের উদ্দেশে। ওই সময়ে তিনি পুলিশের বাধার মুখে পড়েননি। কুণাল এ দিন ওই প্রসঙ্গ তুলেই বিচারকের কাছে অভিযোগ করেন। আর আদালতের লক আপ থেকে জেলের গাড়িতে ওঠার সময় কুণাল পুলিশের উদ্দেশে বলেন, “আমাকে কথা বলতে দিচ্ছেন না। অথচ মদন মিত্রকে কথা বলতে দিচ্ছেন!”

এ দিন বিচারকের কাছে আর কী জানান সারদা কাণ্ডে অভিযুক্ত ওই সাংসদ?

কুণাল এ দিন দাবি করেন, তিনি অপরাধী নন। বেআইনি কোনও কাজ তিনি করেননি। তাঁর অভিযোগ, আদালতে ঢোকা বা বেরোনোর সময় পরিচিত কোনও মুখ বা সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা যদি তাঁর কাছে কিছু জানতে চান বা তিনি যদি তাঁদের কিছু বলতে চান, তা হলে পুলিশ তাঁকে বাধা দিচ্ছে। তাঁর কথা বলার অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে কুণাল আরও বলেন, “এক জনকে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হবে, অন্য জনকে সেই সুযোগ দেওয়া হবে না। আইন ও বিচারের নামে এখানে প্রহসন হচ্ছে।”

সারদা মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত কুণাল ঘোষ এ দিন একটি উদাহরণ দিয়ে বিচারককে জানান, কী ভাবে দ্বিচারিতা করছে প্রশাসন। বলেন, “আমি জেলে অনশন করছিলাম। অসুস্থ হয়ে পড়ি। শুনলাম চিকিৎসার জন্য আমাকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে। পরে জানলাম, আমাকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে না। অথচ একই অভিযোগে অভিযুক্ত অন্য জনের (সৃঞ্জয় বসু) এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে।” আদালতে বিচারকের সামনে কুণালের মন্তব্য, “রাষ্ট্র শক্তি যদি প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়, তা হলে কী করে চলবে?”

পুলিশের বিরুদ্ধে গলা টিপে ধরা বা ধাক্কা মেরে জেলের গাড়িতে তোলার অভিযোগ তুলে বিচারকের উদ্দেশে কুণাল বলেন, “স্যার, আমি আপনার আদালতে এসেছি। আমি তো কোর্ট ইনস্পেক্টরের কাছে আসিনি। আমাকে যাতে ধাক্কা মারা না হয়, তা আপনি দেখবেন।”

কুণালের বক্তব্য শোনার পরে বিচারক তাঁকে বলেন, “আপনি কথা বলবেন বা বলবেন না, তা আপনার ব্যাপার। তবে, আপনি আদালত থেকে বেরিয়ে কোথাও দাঁড়াবেন না।”

এর পরে আদালতে হাজির পুলিশ অফিসার ও পুলিশ কর্মীদের দিতে তাকিয়ে বিচারক জানতে চান, তাঁর এজলাস থেকে অভিযুক্তকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হবে। পুলিশ অফিসাররা জানান, প্রথমে আদালতের লক আপে। সেখান থেকে জেলে। বিচারক পুলিশকে নির্দেশ দেন, অভিযুক্তকে যেন ধাক্কা মারা না হয়।

ব্যাঙ্কশাল আদালতের তিন তলার এজলাস থেকে আদালতের লক আপ পর্যন্ত হাঁটিয়ে নামানো হয় কুণালকে। কিছু ক্ষণ পরে তাঁকে সেখান থেকে বার করে জেলের গাড়িতে ওঠানোর সময় কিন্তু বিচারকের মৌখিক নির্দেশ না মেনে কুণাল আচমকাই দাঁড়িয়ে পড়েন। পুলিশ কর্মীদের কাছে কুণাল দাবি করেন, “বিচারক কিন্তু আমাকে কথা বলতে দিতে বলেছেন।” সেখানে হাজির থাকা কলকাতা পুলিশের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার বিকাশ চট্টোপাধ্যায়ের দিকে হাত জোড় করে কুণাল বলেন, “আপনি তো আদালতের ভিতরে ছিলেন। আপনি তো শুনলেন, বিচারক কী বললেন।” অভিযুক্তকে প্রথমে বুজিয়ে সুজিয়ে জেলের গাড়িতে তোলার চেষ্টা করতে থাকেন পুলিশ কর্মীরা। কুণাল সংবাদ মাধ্যমের উদ্দেশে কিছু বলার চেষ্টা করতেই, পুলিশের কর্মীদের একাংশ ‘হা রে রে’ চিৎকার করে তাঁকে বলতে বাধা দেন। তার পরেই কার্যত গায়ের জোরে দ্রুত কুণালকে তুলে দেওয়া হয় জেলের গাড়িতে। আইনজীবীদের একাংশ এ দিন অভিযোগ করেন, কুণাল যদি বিচারকের নির্দেশ না মানেন, তা হলে পুলিশও বিচারকের নির্দেশ মানেনি। কারণ, পুলিশও গায়ের জোর খাটিয়েছে।

এই মামলায় কুণাল ও সুদীপ্তকে ওই আদালতে আগামী বছরের ২ মার্চ হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।

saradha scam madan mitra cbi sudipto sen kunal ghosh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy