Advertisement
১১ মে ২০২৪

কর্মীর আকালে ফের মহিলা থানা কেন, প্রশ্ন পুলিশেই

খুঁড়িয়ে চলছে আগে চালু করা অনেক মহিলা থানাই। তা হলে এই ধরনের আরও কিছু থানা তৈরির উদ্যোগ কেন? পুলিশমহলে এই প্রশ্ন ওঠার কারণ, নবান্নের ভাঁড়ারে অর্থের অভাবের সঙ্গে সঙ্গে মহিলা পুলিশেরও বিস্তর টানাটানি। সাব-ইনস্পেক্টর বা অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইনস্পেক্টরের মতো অফিসার কম। দিন দিন কমে চলেছে কনস্টেবলের সংখ্যাও। তবু লোকবল এবং উপযুক্ত পরিকাঠামোর বন্দোবস্ত না-করে একের পর এক মহিলা থানা চালু করে চলেছে রাজ্য সরকার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৫ ০৩:২৪
Share: Save:

খুঁড়িয়ে চলছে আগে চালু করা অনেক মহিলা থানাই। তা হলে এই ধরনের আরও কিছু থানা তৈরির উদ্যোগ কেন?

পুলিশমহলে এই প্রশ্ন ওঠার কারণ, নবান্নের ভাঁড়ারে অর্থের অভাবের সঙ্গে সঙ্গে মহিলা পুলিশেরও বিস্তর টানাটানি। সাব-ইনস্পেক্টর বা অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইনস্পেক্টরের মতো অফিসার কম। দিন দিন কমে চলেছে কনস্টেবলের সংখ্যাও। তবু লোকবল এবং উপযুক্ত পরিকাঠামোর বন্দোবস্ত না-করে একের পর এক মহিলা থানা চালু করে চলেছে রাজ্য সরকার। যে-উদ্দেশ্যে মহিলা থানা তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছিল, এর ফলে বেশ কিছু ক্ষেত্রে তা মুখ থুবড়ে পড়েছে বলে জানাচ্ছেন পুলিশকর্তাদেরই একাংশ।

পরিস্থিতির তোয়াক্কা না-করে আরও ১০টি মহিলা থানা চালু করতে চলেছে রাজ্য সরকার। পুলিশকর্তাদের বক্তব্য, মূলত নারী-নির্যাতনের মামলাগুলোর তদন্ত দ্রুত শেষ করতেই মহিলা থানা তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। বছর দুয়েক আগে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় এই ধরনের প্রায় ২০টি থানা চালু হওয়ার পরে দীর্ঘদিন ওই প্রক্রিয়া বন্ধ রাখা হয়েছিল। কেন?

নবান্নের এক কর্তা বলেন, “অর্থসঙ্কট তো আছেই। তার উপরে মহিলা পুলিশের অভাব। বেশ কিছু থানায় এক জন মাত্র সাব-ইনস্পেক্টর। তিনি ওসি, তিনিই তদন্তকারী অফিসার। ফলে অভিযোগ জমা পড়লেও দিনভর থানা চালানোর পরে মহিলা অফিসারেরা তদন্তে মনোনিবেশ করতে পারছেন না।”

যেমন নদিয়ার কোতোয়ালি মহিলা থানা। ওখানে কোনও ইনস্পেক্টরই নেই। সাব-ইনস্পেক্টর থাকার কথা আট জন, আছেন মাত্র এক জন। একই ভাবে আট জন অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইনস্পেক্টরের জায়গায় আছেন দু’জন এবং ৩০ জন কনস্টেবলের জায়গায় আছেন ১৪ জন। হুগলির চুঁচুড়া মহিলা থানার অবস্থাও তথৈবচ। এক জন সাব-ইনস্পেক্টর, তিনিই থানার ওসি। আর আছেন চার জন এএসআই এবং হাতে গোনা ১৩ জন কনস্টেবল।

তাই পুলিশ শিবিরেই প্রশ্ন উঠেছে, লোকাভাব না-মিটিয়ে কেন আবার মহিলা থানা চালু করতে উদ্যোগী হল রাজ্য সরকার? স্বরাষ্ট্র দফতরের তথ্য বলছে, এসআই, এএসআই ও কনস্টেবল মিলিয়ে রাজ্য পুলিশে অনুমোদিত মহিলা কর্মীর সংখ্যা ৫৫১৯। কিন্তু আছেন মাত্র ১৮৪৯ জন। এত কম পুলিশ নিয়ে যে কোনও মতেই পৃথক মহিলা থানা ভাল ভাবে চালানো সম্ভব নয়, ভুক্তভোগী পুলিশকর্তারা সেটা বিলক্ষণ জানেন। এক পুলিশকর্তা বলেন, “মহিলা পুলিশের সংখ্যার বিচারে পশ্চিমবঙ্গের স্থান প্রথম ১০টি রাজ্যের মধ্যে নেই। দেশের মধ্যে তামিলনাড়ুতে সব চেয়ে বেশি মহিলা পুলিশ আছে, ১০২২৫ জন। ওড়িশা দ্বিতীয় স্থানে। তাদের মহিলা পুলিশের সংখ্যা ৩০৯২।”

ওই সব রাজ্যে কী ভাবে পাওয়া গেল এত মহিলা পুলিশ?

রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা বলেন, “২০০৮-এ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক পুলিশ নিয়োগের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ পদ মহিলাদের জন্য আবশ্যিক করার নির্দেশ পাঠিয়েছিল সব রাজ্যের কাছেই। সেই নির্দেশ মেনে অন্যান্য রাজ্য মহিলা পুলিশ নিয়োগ করলেও পশ্চিমবঙ্গে তা কখনও হয়নি। ফলে মহিলা পুলিশের ঘাটতি দিন দিন বেড়েই চলেছে।”

শুধু যে লোকাভাবটাই সমস্যা, তা তো নয়। কাজের জন্য যথাযথ পরিকাঠামোও গড়ে তোলা হয়নি মহিলা থানাগুলিতে। মালদহে ফুলবাড়ি মোড়ের মহিলা থানাটি বছরখানেক আগে চালু হলেও তাদের কোনও গাড়ি নেই। প্রয়োজনমতো গাড়ি ভাড়া করে পুলিশ। শিলিগুড়ি থানার মধ্যে দু’টি আলাদা ঘরে মহিলা থানা চালু হয়েছে তিন বছর আগে। তাদেরও নিজস্ব গাড়ি নেই। শিলিগুড়ি থানার গাড়িই ভরসা। অনেক সময় তা-ও পাওয়া যায় না। তখন নির্ভর করতে হয় ভাড়ার গাড়ির উপরে। কোচবিহারে এ দিনই মহিলা থানা চালু হয়েছে। কিন্তু তাদের জন্যও কোনও গাড়ি বরাদ্দ করা হয়নি।

কাজ কতটা হবে না-হবে, সেটা না-ভেবে নিছক সংখ্যা বাড়াতেই কি একের পর এক মহিলা থানা খোলা হচ্ছে, প্রশ্ন পুলিশকর্মীদেরই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

nabanna
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE